জন্মগতভাবেই একটি পা নেই মইনুল হকের। দরিদ্র পরিবারে ১৯৯০ সালে জন্ম নেওয়া মইনুল বাবা-মাকে হারিয়েছেন আগেই। একমাত্র ভিটে ছাড়া জমি-জমা বলতে কিছু নেই তাদের। ছোট বোনকে নিয়ে জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে শৈশব-কৈশোর কেটেছে।
কিন্তু হার মানেননি দারিদ্র্যের কাছে। টিউশনি করে নিজের খরচে রাজশাহী কলেজ থেকে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে অনার্স, মাস্টার্স পাস করেন। ছোট বোনকে বিয়েও দিয়েছেন। একটি চাকরি পাওয়ার পর নিজে বিয়ে করবেন বলে স্বপ্ন বুনে রেখেছেন জনমদুঃখী মইনুল।
মইনুল বলেন, রাজশাহী জেলার চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া গ্রামে আমার বাড়ি। রাজশাহী কলেজ থেকে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনেক কষ্টে আমি অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেছি। একটা চাকরির আশায় ২০১৭ সালের এনটিআরসিএ’র অধীনে ১৪ তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। পরীক্ষায় আমি উত্তীর্ণ হই। কর্তৃপক্ষ আমাকে জেলা-উপজেলায় শূন্যপদ থাকার ভিত্তিতে টিকিয়েছিল। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও আমাকে নিয়োগ দেয়নি। যার কারণে আমরা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হই। রিট আবেদন করি। অনেকদিন আইনি লড়াই শেষে কাঙিক্ষত পজিটিভ রেজাল্ট আমাদের পক্ষে এসেছে। হাইকোর্ট নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন।
গত ২৯ জুন বিচারপতি কাশেফা হোসেন ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ মইনুলসহ ১৪ তম নিবন্ধনধারী ৪৮৩ জনকে দ্রুত নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন।
রায়ে দারুণ খুশি মইনুল। তিনি বলেন, আমার প্রত্যাশা এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ দ্রুত হাইকোর্টের রায় মেনে নিয়ে আমাকে নিয়োগ দেবে। আমার চাকরির খুবই প্রয়োজন। আমি এখন পর্যন্ত বেকার। গ্রামে টিউশনি করে কোনো মতে চলছি। চাকরিটা হয়ে গেলে বিয়ে করার ইচ্ছে আছে।
মইনুলসহ রিটকারীদের আইনজীবী ফারুক হোসেন বলেন, ২০১৭ সালে ১৪ তম বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়, যা তিন ধাপে তথা প্রিলি, রিটেন, ভাইভা পরীক্ষা নিয়ে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। কিন্তু তিন ধাপে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও মইনুল হকসহ ১৪ তম শিক্ষক নিবন্ধনধারী ৪৮৩ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। পরে তারা এনটিআরসিএ সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্মারকলিপি দেওয়াসহ মানববন্ধন করেন। তাতেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিয়োগ না দিলে মো. মইনুল হকসহ ৪৮৩ জন হাইকোর্টে রিট করেন। দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে হাইকোর্ট তাদের দ্রুত নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন। সূত্র- ঢাকা পোস্ট