০৮ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০১:১৮:১৮ অপরাহ্ন
অর্পিত সম্পত্তিতে রাজশাহী আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে খেলার মাঠের সাইনবোর্ড
স্টাফ রিপোর্টার :
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০৫-২০২৫
অর্পিত সম্পত্তিতে রাজশাহী আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে খেলার মাঠের সাইনবোর্ড

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় করার জন্য অর্পিত সম্পত্তি ইজারা নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছিল সংগঠনের সাইনবোর্ড। ওই সম্পত্তিতে দুটি আমগাছ, দুটি আমড়াগাছ ও দুটি নারকেলগাছ ছিল। আওয়ামী লীগ নেতারা ওই সম্পত্তির ভবন ভেঙে, গাছ কেটে কার্যালয় বানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এখন সেই সাইনবোর্ডের জায়গায় দেখা যাচ্ছে নতুন একটি সাইনবোর্ড, যার সঙ্গে লেখা রয়েছে ‘বাচ্চাদের খেলার মাঠ, ২০ নম্বর ওয়ার্ড, আয়োজনে এলাকাবাসী’।

এই সাইনবোর্ড সেখানে টাঙানো হলেও ভেতরে খেলার মাঠের কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি। জায়গাটিও সীমানাপ্রাচীর দিয়ে ঘেরা। দরজায় একটি তালা ঝোলানো। ভেতরে যততত্র ভাঙা তৈজসপত্র, পুরোনো ইট ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে।

রাজশাহী নগরের রানীবাজার এলাকায় এই অর্পিত সম্পত্তি ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে ইজারা নিয়েছিল জেলা আওয়ামী লীগ। এই জমির পরিমাণ ১৪ শতক। এতে পরিত্যক্ত একটি ভবন ছিল। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে এই বাড়ির দেয়ালে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, রাজশাহী জেলা শাখার কার্যালয়’ লেখা একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছিল। তখন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষে সম্পত্তিটি জেলা প্রশাসন থেকে একসনা ভিত্তিতে ইজারা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবছর এই ইজারামূল্য পরিশোধ করতে হবে। এই শর্তে ইজারা নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ ভবনটি ভেঙে ফেলে।

গাছ কেটে ফেলে সে সময় রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ বলেছিলেন, ‘ইজারা নেওয়ার সময় যে শর্ত দেওয়া রয়েছে, তার মধ্যে ভাঙার বিষয়টিও রয়েছে। ভবন একেবারে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছিল। গায়ের ওপর ইট খুলে পড়ছিল। এখন তাঁরা সেই ইট দিয়ে একটি অস্থায়ী কার্যালয় করবেন। সবকিছু নিয়ম মেনেই করা হচ্ছে।’

এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় করার জন্য ২০১৭ সালে শহরের সিটিহাট এলাকায় একখণ্ড জমি দিয়েছিলেন রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এনামুল হক। সেখানে একটি ভবনও করা হয়েছিল। এনামুল হক বলেছিলেন, ‘সাধারণত জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় শহরতলিতে ভালো হয়। তিনি যেখানে জায়গা দিয়েছেন, সেটাই উপযুক্ত। যাঁরা অর্পিত সম্পত্তিতে কার্যালয় করতে যাচ্ছেন, তাঁরা মূলত রাজনৈতিক একটা জেলাসি (ঈর্ষা) থেকেই এটা করছেন।’ তাঁর জানামতে, জেলা প্রশাসন কোনো দলকে কার্যালয় করার জন্য জমি দিতে পারে না। হয়তো কোনো ব্যক্তির নামে দিয়েছে।

তৎকালীন রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) অসীম কুমার এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, দলীয় কার্যালয় করার জন্য জায়গাটি ইজারা নিলেও অস্থায়ী স্থাপনা ছাড়া অন্য কিছু করতে পারবে না। আর ওই সম্পত্তির গাছ কাটতে হলে অবশ্যই নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে সেই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। বিষয়টি তাঁরা অবগত নন। তাঁরা এখন খতিয়ে দেখবেন কীভাবে গাছ কাটা হচ্ছে।

এখন হঠাৎ দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ডের জায়গায় ‘বাচ্চাদের খেলার মাঠ’ রেখা এই নতুন সাইনবোর্ড। কবে কে এই সাইনবোর্ড টাঙিয়েছেন, তা জানা যায়নি। স্থানীয় লোকজন বলছেন, গত আগস্টের শেষের দিকে কে বা কারা এই সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়ে গেছেন। এটিকে নতুন করে দখলের চেষ্টাই বলছেন তাঁরা।

আজ বুধবার বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, সীমানাপ্রাচীর দিয়ে ঘেরা জায়গাটির দরজায় একটি তালা ঝোলানো। ভেতরে একটি ভ্যান পলিথিন দিয়ে ঢাকা। তার পাশে পুরোনো একটি পানির ট্যাংক। আর যত ভাঙা তৈজসপত্র ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে। এক পাশে আগের ভবন ভাঙার পুরোনো ইট পড়ে রয়েছে। দেখা যায়, জায়গাটির উত্তরের অংশে নতুন ভবনের (আওয়ামী লীগের কার্যালয়) পিলারের কাজ অসমাপ্ত অবস্থায় রয়ে গেছে।

জানতে চাইলে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মহিনুল হাসান বলেন, জায়গাটি অন্য কারও দখল করার সুযোগ নেই। কে সাইনবোর্ড টাঙিয়েছে, বিষয়টি তাঁরা খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।

শেয়ার করুন