১৪ জুলাই ২০২৫, সোমবার, ০৪:৫০:৪৬ অপরাহ্ন
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার হুমকি সুইস বিনিয়োগকারীর
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৭-২০২৫
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার হুমকি সুইস বিনিয়োগকারীর

২০০৮ সালের চুক্তি লঙ্ঘন এবং বিনিয়োগ সুরক্ষিত রাখতে ব্যর্থতার অভিযোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলার করার হুমকি দিয়েছে সুইজারল্যান্ডের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আইসিবি ফিনান্সিয়াল গ্রুপ। এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের (সাবেক ওরিয়েন্টাল ব্যাংক) বৃহৎ শেয়ারহোল্ডার। 


৭ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে গ্রুপটি অভিযোগ করে, ২০০৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সই করা ‘শেয়ার বিক্রয় ও ক্রয় চুক্তি’র গুরুত্বপূর্ণ শর্তসমূহ বাংলাদেশ ব্যাংক মানেনি।


আইসিবি ফিনান্সিয়াল গ্রুপ বাংলাদেশ ব্যাংকের ডাকা উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ৫৩ শতাংশ শেয়ার কিনেছিল।


কিন্তু এখন আর ব্যাংকে তাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। ২০০৮ সালে নিলামের যাবতীয় শর্ত মেনে ব্যাংকটিতে ৩৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে এই বিদেশি গ্রুপটি। এরই মধ্যে ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের পুরনো বিনিয়োগকারীরা মামলা করায় ব্যাংকটির শেয়ার কেনাবেচা আটকে যায়।

ফলে ব্যাংকটির বিনিয়োগ করে আটকা পড়ে যায় আইসিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপ।


আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে থাকায় চলতি বছরের এপ্রিলে পর্ষদ বাতিল করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এমন পরিস্থিতিতে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ক্ষতিপূরণ চায় আইসিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপ। ব্যাংকের ওপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ না পেলে বিনিয়োগ ফেরত চায় এবং তা না হলে এই বিরোধ নিষ্পত্তিতে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার কথা বলছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আইসিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপ।

গত ৭ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জোসেফিন সিভারেতনাম বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। একই চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনকে (আশিক চৌধুরী)।


এতে বলা হয়েছে, ‘পুরো বিষয়টি নিয়ে আমরা আপনার কাছে দ্রুত উদ্যোগ আশা করি। অন্যথায় ন্যায়বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়া ছাড়া আর বিকল্প নেই।’


চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘২০০৮ সালের চুক্তিতে উল্লেখ ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের শেয়ার ছাড়বে এবং আইসিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপ শেয়ারগুলো গ্রহণ করবে; যা চুক্তি কার্যকর হওয়ার তারিখ থেকে সব ধরনের দায়মুক্ত।


এই আশ্বাসের ভিত্তিতে আইসিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপ ২০০৮ সালে তৎকালীন ওরিয়েন্টাল ব্যাংকে ৩৫০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে। কিন্তু এই আশ্বাস মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে, কারণ ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের সাবেক শেয়ারধারীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা করেছে। এই মামলাগুলো এখনো সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। আমরা মনে করি, আইসিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপের স্বার্থ সুরক্ষিত নয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এই আইনি বাধাগুলো সমাধানে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আমরা আরো মনে করি, বাংলাদেশ ব্যাংক চুক্তির অধীনে তার বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করেছে এবং তাই চুক্তিটি এখন বাতিল ও অকার্যকর।’

এতে আরো বলা হয়েছে, আইসিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপের শেয়ারধারীদের স্বার্থ ক্রমাগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যাংকটিতে আইসিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপের বিনিয়োগ নিরাপদ ও সুরক্ষিত এবং তারা ব্যাংকের সংখ্যাগরিষ্ঠ শেয়ারহোল্ডার এবং তাদের শেয়ার দায়মুক্ত, বাংলাদেশ ব্যাংক কখনো এই নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। এ ছাড়া আমাদের নিয়োগ দেওয়া নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিয়োগও অনুমোদন দেয়নি; বরং বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তাকে নিযুক্ত করে ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।


বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান গণমাধ্যমকে বলেন, আইসিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপ আগ্রহ নিয়ে ব্যাংকটিতে বিনিয়োগ করেছিল। এখন রাষ্ট্রীয় সহায়তায় আইনি সমাধান হলে ভালো হয়।


শেয়ার করুন