১৭ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১১:১৪:০২ অপরাহ্ন
নিজের সব ব্যাংক লেনদেনের তথ্য চান দীপু মনি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৭-২০২৫
নিজের সব ব্যাংক লেনদেনের তথ্য চান দীপু মনি

দুর্নীতির মামলায় লড়তে নিজের সব ব্যাংক হিসাবের ‘তথ্য-উপাত্ত’ পেতে চান সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দীপু মনি।


তিনি আদালতকে বলেছেন, ‘আমাকে সুযোগ দেবেন যেন মামলার তথ্য-উপাত্ত পাই এবং লড়াই করতে পারি।’


বুধবার (১৬ জুলাই) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়ার আদালতে তিনি এসব কথা বলেন।


 


এদিন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনের বিষয়ে শুনানি হয়।


গত ২১ মে আবেদনটি করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান।


শুনানির এক পর্যায়ে আদালতের কাছে কিছু বলার অনুমতি চার দীপু মনি। 


আদালতের অনুমতি পাওয়ার পর দীপু মনি বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমি আজ ১১ মাস ধরে কারাগারে রয়েছি। কারাগারে আমি পত্রিকা পাই। সেই পত্রিকায় বেশ আগে একটি খবর বেরিয়েছিল। সেখানে দেখেছিলাম, আমার নাকি ২৮টি অ্যাকাউন্ট (ব্যাংক হিসাব) রয়েছে। তাতে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পেয়েছে দুদক।’


দীপু মনি বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমি একজন নিয়মিত করদাতা। গত ১৫ বছরে আমার আয়-ব্যয়ের সমস্ত হিসাব ওই আয়কর বিবরণীতে জমা রয়েছে। আমার যে ২৮টি ব্যাংক হিসাবের কথা বলা হচ্ছে, সেটি একবারে অসম্ভব। বাস্তবের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই।’


সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমি একজন নাগরিক। দেশের নাগরিক হিসেবে আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ জানবার অধিকার আমার রয়েছে। আমাকে অন্ধকারে রেখে দুদক আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে।’


দীপু মনি বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমার নিজের ছয়টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। এর মধ্যে দুটি ব্যাংক হিসাবে লেনদেন হয় না। তবে বাকি চারটি ব্যাংক হিসাবে লেনদেন ছিল। আমি দুদক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে আমার ব্যাংক হিসাবগুলোর লেনদেনের তথ্য জানতে চাই।’


এ সময় দীপু মনির বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন দুদকের পিপি মীর আহমেদ আলী সালাম ও মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর। পিপি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, ‘মাননীয় আদালত, উনি (দীপু মনি) যখন এ মামলায় গ্রেপ্তার হবেন, তখন আইনজীবীর মাধ্যমে এ মামলার সমস্ত কাগজপত্রের অনুলিপি তিনি পাবেন। আর দুদক মামলা করে কাগজপত্র আর নথিপত্রের ভিত্তিতে। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলায় আসামি ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য পর্যালোচনা করা হয়। ব্যাংক হিসাবের সুনির্দিষ্ট তথ্য মামলার কাগজপত্রে উল্লেখ করা হয়।’


পিপি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর আরও বলেন, ‘মাননীয় আদালত, মামলার তদন্তে দীপু মনির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সমস্ত তথ্য আদালতের কাছে তুলে ধরবে দুদক। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে অনুসন্ধান পর্যায়ে দীপু মনি ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবগুলোর তথ্য সংগ্রহ করেছে দুদক।’


এ সময় দীপু মনি বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমার বিরুদ্ধে ৭০টি মামলা। আমি তো কারাগারে আমার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি পাচ্ছি না। এই ১১ মাসে আমি আমার আইনজীবীর সঙ্গে বহু আগে দুবার কারাগারে কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলাম। আর যখন আয়কর বিবরণী জমা দেওয়া হয়েছিল, তখন একবার আমি আমার আয়কর আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলাম। এর বাইরে আমি আমার আইনজীবীর সঙ্গে কারাগারে কথা বলার কোনো সুযোগ পাচ্ছি না।’


এ সময় আদালত দীপু মনির উদ্দেশে বলেন, ‘এমন তো হওয়ার কথা নয়।’


দীপু মনি বলেন, ‘মাননীয় আদালত, সুনাম অর্জন করতে সারা জীবন চলে যায়। আর নষ্ট করতে সময় লাগে মাত্র দুই মিনিট। আমি আমার মামলা লড়তে চাই। এ জন্য দরকার তথ্য-উপাত্ত। তথ্যই আমার শক্তি।’


সাবেক এই শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমি আছি কাশিমপুর মহিলা কারাগারে। এই কারাগারে সাক্ষাতের অনুমতি পাওয়াটা কঠিন। গাজীপুরের কাশিমপুরের অন্যান্য কারাগারে বন্দীরা তাঁদের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন।’


দীপু মনির বক্তব্যের পর আদালত বলেন, আসামি হিসেবে উনি তো আইনগত সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন। যদি তিনি আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ না পান, তাহলে তো তিনি অনিরাপদ বোধ করবেন।


এ সময় দীপু মনির আইনজীবী মোরশেদ হোসেন আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, বাস্তবতা অনেক কঠিন। দেখাসাক্ষাতে আদালতের অনুমতি হয়। কিন্তু অনেক সময়ই দেখাসাক্ষাতের সুযোগ পাওয়া যায় না।’


আদালত সবার বক্তব্য শোনার পর দুদকের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে করা মামলায় দীপু মনিকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।


প্রায় ৪৫ মিনিট শুনানি শেষে বেলা একটা ৩৯ মিনিটের দিকে দীপু মনিকে আদালতকক্ষ থেকে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।


এরপর বেলা আড়াইটার দিকে দীপু মনিকে হাজতখানা থেকে প্রিজন ভ্যানে তোলা হয়। পরে প্রিজন ভ্যানটি গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কারাগারের উদ্দেশে আদালত চত্বর ছেড়ে যায়। এ সময় প্রিজন ভ্যানের একটি বেঞ্চে দীপু মনি বিমর্ষ হয়ে মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে ছিলেন।


শুনানিতে দুদক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, ‘উনি (দীপু মনি) যখন এ মামলায় গ্রেপ্তার হবেন, তখন আইনজীবীর মাধ্যমে এ মামলার সমস্ত কাগজপত্রের অনুলিপি পাবেন। আর দুদক মামলা করে কাগজপত্র আর নথিপত্রের ভিত্তিতে।’


পরে আদালত তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়।


গত ১১ ফেব্রুয়ারি এ মামলা হয়। সেখানে ৫ কোটি ৯২ লাখ ২ হাজার ৫৩০ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। তার ২৮টি ব্যাংক হিসাবে ৫৯ কোটি ৭৯ লাখ ৯২ হাজার ৭৩১ টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগও এনেছে দুদক।


ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগের অন্য অনেক নেতার মতো দীপু মনিও প্রকাশ্যে ছিলেন না। সরকার পতনের দুই সপ্তাহের মাথায় ২০২৪ সালের ১৯ অগাস্ট তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।


বাংলাদেশের প্রথম নারী পররাষ্ট্র ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ২০০৮ সাল থেকে চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। সবশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।


শেয়ার করুন