০৫ অগাস্ট ২০২৫, মঙ্গলবার, ১২:৩০:৪৮ অপরাহ্ন
ফিরে এলো নতুন বিজয়ের দিন
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৮-২০২৫
ফিরে এলো নতুন বিজয়ের দিন

ঐতিহাসিক ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ আজ। পৃথিবী দেখেছিল এক অভাবনীয় গণঅভ্যুত্থান। ছাত্র-জনতার ক্ষোভের বিস্ফোরণে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন এবং তার ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়। এ যেন এক নতুন বিজয়ের দিন! এই দিনটি পরবর্তীকালে ‘৩৬ জুলাই’ নামে পরিচিতি পায়। দিবসটি পালনে রাজধানীসহ সারা দেশে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ সরকারি ছুটির দিন। জাতীয়ভাবে উদযাপন করা হবে দিবসটি। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস আজ বিকাল ৫টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন। সবার অংশগ্রহণে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে। 


এদিকে দিবসটি পালনে ৬৪ জেলায় জুলাই শহিদ স্মৃতিস্তম্ভে আজ সকাল ৯টায় পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। সারা দেশের প্রতিটি ধর্মীয় উপাসনালয়ে মোনাজাত ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ ‘বিজয় মিছিল’ নিয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আসবেন। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং স্পেশাল ‘ড্রোন ড্রামা’র আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানমালা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।


ফ্যাসিবাদী অপশাসনের বিরুদ্ধে ৫ আগস্ট চূড়ান্ত বিজয় :রাষ্ট্রপতি


দিবসটি উপলক্ষে গতকাল এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘বৈষম্যমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা ও ফ্যাসিবাদী অপশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-শ্রমিক-জনতা সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলে ২০২৪ সালের এই দিনে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। ঐতিহাসিক এই অর্জনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আমি দেশের মুক্তিকামী ছাত্র-জনতাকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।’ তিনি বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল দীর্ঘদিনের বঞ্চনা, দুঃশাসন, দুর্নীতি, লুটপাট, গুম, খুন, অপহরণ, ভোটাধিকার হরণসহ সব ধরনের অত্যাচার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্ম ও আপামর জনতার ক্ষোভের বিস্ফোরণ। এই বৈষম্যমূলক ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জনগণের ক্ষমতায়ন এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সুনিশ্চিত করাই ছিল এর মূল লক্ষ্য। একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন করে জুলাইয়ের চেতনার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। সংস্কারের মধ্য দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হবে, প্রকৃত গণতান্ত্রিক উত্তরণের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠবে একটি ন্যায় ও সাম্যভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ—এ আমার একান্ত প্রত্যাশা।’


বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি :প্রধান উপদেষ্টা


জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘জুলাই আমাদের নতুন করে আশার আলো—একটি ন্যায় ও সাম্যভিত্তিক, বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছে। হাজারো শহিদের আত্মত্যাগ আমাদের রাষ্ট্র সংস্কারের যে সুযোগ এনে দিয়েছে, তা যে কোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে। পতিত স্বৈরাচারী ও তার স্বার্থলোভী গোষ্ঠী এখনো দেশকে ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করতে হবে। আসুন সবাই মিলে আমরা এমন এক বাংলাদেশ গড়ে তুলি, যেখানে আর কোনো স্বৈরাচারীর ঠাঁই হবে না।


আরও যেসব কর্মসূচি :৩৬ জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালনের লক্ষ্যে আজ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের সব সার্কেল অফিস নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে রাস্তার পাশে বা নিজস্ব জায়গায়, ট্রাফিক ইন্টারসেকশনে বনজ, ফলজ ও ঔষধি গাছ রোপণ করা হবে। এদিন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জুলাই নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র, ডকুমেন্টারি ও প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের রুহের মাগফেরাত এবং আহতদের সুস্থতা কামনায় আজ বেলা ১১টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে কুরআন খতম এবং বাদ জোহর দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া শহিদদের রুহের মাগফেরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনায় দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মোনাজাত আয়োজনের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’ উদযাপন উপলক্ষে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগসহ সরকারি সব দপ্তর ও সংস্থার কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে নভোথিয়েটার, বিজয় সরণি, তেজগাঁও এলাকায় বেলা একটার দিকে শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।


জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে অন্যান্য আয়োজনের মধ্যে রয়েছে—বেলা ১১টায় ‘টং’-এর গান, ১১টা ২০ মিনিটে সাইমুম শিল্পী গোষ্ঠী, ১১টা ৪০ মিনিটে কলরব শিল্পী গোষ্ঠীর গান।  দুপুর ১টায় নামাজের বিরতির পর একে একে পারফর্ম করবে চিটাগাং হিপহপ হুড, সেজান এবং শূন্য ব্যান্ড। এরপর দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে ‘ফ্যাসিস্টের পলায়নক্ষণ’ উদযাপন করা হবে। ‘পলায়নক্ষণ’ উদযাপনের পর আবারও শুরু হবে কনসার্ট। একে একে পারফর্ম করবে সায়ান, ইথুন বাবু ও মৌসুমি, সোলস এবং ওয়ারফেজ। এরপর আসরের নামাজের বিরতি চলবে। বিরতির পর বিকাল ৫টায় ঐতিহাসিক ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করা হবে। এ সময় উপস্থিত থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। সবার অংশগ্রহণে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে। সন্ধ্যায় সংসদ ভবনের সামনে লাখো কণ্ঠে জুলাইয়ের গান ‘কতো বিপ্লবী বন্ধুর রক্তে রাঙা...’ গাওয়া হবে। জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠের পর আবারও শুরু হবে কনসার্ট। একে একে পারফর্ম করবে বেসিক গিটার লার্নিং স্কুল, এফ মাইনর এবং পারশা। এরপর মাগরিবের নামাজের বিরতির পর পারফর্ম করবেন এলিটা করিম। তার পারফরম্যান্সের পর অনুষ্ঠিত হবে স্পেশাল ‘ড্রোন ড্রামা’। ড্রোন শো-এর পর সংগীত পরিবেশন করবে জনপ্রিয় ব্যান্ড আর্টসেল। এছাড়া এদিন ‘নোটস অন জুলাই’ জুলাইয়ের কিছু নির্বাচিত ছবি দিয়ে পোস্টকার্ড ডিজাইন করা হবে, যা জনসমাগমের মধ্যে ভলান্টিয়াররা নিয়ে ঘুরবেন এবং জনগণ ইচ্ছামতো পোস্টকার্ড নিয়ে নিজেদের জুলাইয়ের অভিজ্ঞতা লিখতে পারবেন।


জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।


শেয়ার করুন