: ঢাকায় বসে সিসি ক্যামেরায় ভোটের পরিস্থিতি দেখে অনিয়ম সন্দেহে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের এমন সিদ্ধান্তে হতবাক হয়েছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট স্থানীয় কর্মকর্তারা, প্রকাশ করেছেন হতাশা।
বুধবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর নির্বাচন ভবনে বসেই ভোটগ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করেন সিইসি। কিন্তু কোনোরূপ সহিংসতা বা বিশৃঙ্খলা না হওয়ার পরও হঠাৎ নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করার পর এক প্রতিক্রিয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক অলিউর রহমান।
ভোটগ্রহণ স্থগিত ঘোষণার পর অলিউর রহমান বলেন, ‘ফুলছড়ি বালক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ আছে বলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আমাকে জানান। কিন্তু ঠিক কী কারণে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়েছে, সেটি তিনি আমাকে জানাতে পারেননি। প্রিসাইডিং অফিসারের সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ আছে, তারাও এ বিষয়ে কিছু আমাদের জানাতে পারেননি। অথচ নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি যে, সেখানে কোনো অসুবিধা হচ্ছে।’
নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মাঠ কর্মকর্তা, ফুলছড়ি বালক বিদ্যালয় কেন্দ্রের একজন পোলিং এজেন্ট বলেন, ‘ভোটগ্রহণ সুষ্ঠুভাবেই হচ্ছিল। কিন্তু ঢাকা থেকে সিসিটিভি দেখে নির্বাচন কমিশন থেকে ফোন করে ভোট বন্ধ করতে বলা হয়।
‘আমাদের জানানো হয়, একটি বুথে একজন ভোটারের সঙ্গে আরেকজন ঢুকেছেন, এটি গুরুতর অনিয়ম। নির্বাচনী বিধি ভঙের শামিল। আপনি ভোটকেন্দ্র বন্ধ করে চলে যান।’
তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন বলেন, অথচ এখানে মারামারি বা কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হয়নি। রিটার্নিং কর্মকর্তাও ঢাকা থেকে নির্দেশ পেয়ে ভোট বন্ধ করতে বলেছেন।
অর্চনা রানি নামে একই কেন্দ্রের অপর এক নারী পোলিং এজেন্ট বলেন, ‘ঢাকা থেকে কি নাকি ফুটেজ দেখেছে। অথচ এখানে কিছুই হয়নি। আমরা কিছুই বুঝলাম না। হঠাৎ ভোট বন্ধ করা হলো।’
আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরাও ভোটে কোনো অনিয়ম বা বিশৃঙ্খলার বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি।
কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা এসআই মো. আনোয়ারুল হক বলেন, সকাল থেকে সবকিছু ভালোভাবেই চলছিল। কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি। এর মধ্যে হঠাৎ জানতে পারলাম, ঢাকা থেকে নির্দেশ এসেছে ভোটগ্রহণ বন্ধ করার।
এর আগে নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে সন্দেহ করে ভোটগ্রহণ শুরুর ঘণ্টাখানেক পরই কয়েকটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। এভাবে একে একে ভোটগ্রহণ স্থগিত করতে করতে দুপুর ২টার দিকে ৫২টি কেন্দ্রের ভোগগ্রহণ স্থগিত করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। পরে পুরো নির্বাচনই স্থগিত করা হয়।
নির্বাচন স্থগিতের বিষয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ৯১-এর (ক) ধারা অনুসারে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯১-এর (ক) ধারায় বলা হয়েছে: যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, নির্বাচনে বলপ্রয়োগ, ভীতি-প্রদর্শন এবং চাপ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিরাজমান অপকর্মের কারণে যুক্তিযুক্ত, ন্যায়সংগত এবং আইনানুগভাবে নির্বাচন পরিচালনা নিশ্চিত করিতে সক্ষম হইবেন না, তাহা হইলে ইহা যেকোনো ভোটকেন্দ্র বা ক্ষেত্রমতো, সম্পূর্ণ নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনের যেকোনো পর্যায়ে ভোটগ্রহণসহ নির্বাচনী কার্যক্রম বন্ধ করিতে পারিবে।
গত ২৩ জুলাই জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া আমেরিকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলে আসনটি শূন্য হয়। এ আসনে মোট ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন।
সাঘাটা-ফুলছড়ি উপজেলার এ আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৭৪৩ জন। আসনটিতে মোট ১৪৫টি কেন্দ্রের ৯৫২টি বুথে এবারই প্রথম ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এ ছাড়া ভোটে মাঠের পরিস্থিতি সরাসরি দেখতে ১৪৫ কেন্দ্রে ১ হাজার ২৪২টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছিল নির্বাচন কমিশন।