১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৫:৩৭:৩৫ অপরাহ্ন
নতুন বাজারে পোশাক রপ্তানিতে চমক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০৪-২০২৩
নতুন বাজারে পোশাক রপ্তানিতে চমক

বাংলাদেশের পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপ ও আমেরিকার বাইরে অপ্রচলিত বা নতুন বাজারে রপ্তানির পালে হাওয়া লেগেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) দেশভিত্তিক রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে অর্থাৎ জুলাই-মার্চ সময়ে নতুন বাজারে বাংলাদেশ থেকে ৬৪৪ কোটি ৪৪ লাখ (৬.৪৪ বিলিয়ন) ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৩৫ শতাংশ বেশি। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের এই ৯ মাসে ৪.৭৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিলেন এ খাতের রপ্তানিকারকরা।

ইপিবি’র তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) মালয়েশিয়াতে ২৪ কোটি ২৪ লাখ ৪০ হাজার ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৭৪ শতাংশ বেশি। পাশাপাশি এই সময়ে তুরস্কে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৮২.৫০ শতাংশ। ইউরোপ ও আমেরিকা অঞ্চলের বাইরের দেশগুলোই মূলত বাংলাদেশের জন্য নতুন বাজার হিসেবে পরিচিত। নতুন বাজারের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, চিলি, চীন, ভারত, জাপান, কোরিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্কসহ ২৫টি দেশ রয়েছে। এসব অপ্রচলিত বা নতুন বাজারে পোশাক রপ্তানি ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। 
পোশাক খাতের রপ্তানিকারকরা জানান, তৈরি পোশাকের প্রচলিত বাজারের ওপর নির্ভরতা কমাতে অনেক উদ্যোগ চলমান। এর মধ্যে রয়েছে সরকারের নগদ সহায়তা। নতুন এই দেশগুলোতে রপ্তানি বাড়াতে প্রায় প্রতি মাসেই যাচ্ছে সরকারি-বেসরকারি মিশন।

এর সুফল হিসেবে চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে রপ্তানিতে ৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ ছাড়া নতুন বাজারে রপ্তানি আয় বাড়াতে আরও নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ। 

নতুন বাজারে পোশাক রপ্তানি নিয়ে বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, আশার কথা হচ্ছে, অপ্রচলিত বা নতুন বাজারে আমাদের রপ্তানি বেশ বেড়েছে। সে কারণেই কিন্তু সার্বিক রপ্তানিতে এখনো আমরা মোটামুটি ভালো প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছি। নতুন বাজারে রপ্তানি বাড়াতে আমরা নানা কৌশল নিয়েছি, পরিকল্পনা নিয়েছি। বিনিয়োগও করেছি। আমরা এখন এসব বাজারে বেশি দামের পোশাকও রপ্তানি করছি। ভ্যালু অ্যাডেড অনেক প্রোডাক্টের অর্ডার নিচ্ছি। বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করতে পেরেছি। ফলে বাংলাদেশ এখন দামি পণ্যের অর্ডারও পাচ্ছে। আগে বাংলাদেশে ১৫ ডলারের জ্যাকেট হতো। এখন বায়াররা আমাদের এখানে ৩০-৪০ ডলারের জ্যাকেট অর্ডার করছেন। আমরা নতুন মার্কেটগুলোতে ঢুকতে পেরেছি। বেশি দামি পণ্য রপ্তানি করতে পেরেছি। আবার পণ্যের দাম বেড়েছে। সব মিলিয়েই নতুন বাজারে রপ্তানি বেড়েছে।

ইপিবি’র তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করে মোট ৪১.৭২ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি মুদ্রা দেশে এনেছেন রপ্তানিকারকরা। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৮.০৭ শতাংশ বেশি। তবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি; ৪২.২৬ বিলিয়ন ডলার লক্ষ্যের বিপরীতে ১.২৮ শতাংশ কম এসেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের এই ৯ মাসে ৩৮.৬০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় দেশে এসেছিল।
জুলাই-মার্চ সময়ের মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৩৫.২৫ বিলিয়ন ডলারই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। অর্থাৎ ৮৪.৫০ শতাংশই এসেছে পোশাক থেকে। গত অর্থবছরের এই ৯ মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩১.৪৩ বিলিয়ন ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ, প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২.১৭ শতাংশ।

ইপিবি’র তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, অপ্রচলিত বাজারের মধ্যে অন্যতম জাপানে চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে ১২২ কোটি ১৭ লাখ ৪০ হাজার ডলারের পোশাকপণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছর একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৪৪ শতাংশ বেশি। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৮৪ কোটি ৯৬ লাখ ডলারের পণ্য। অপরদিকে এই ৯ মাসে পাশের দেশ ভারতে পোশাক রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৮.৩৮ শতাংশ বেড়ে ৮৩ কোটি ৫ লাখ ডলার হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি ৪২.২২ শতাংশ বেড়ে ৮৯ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানি হয়েছে ৪৫ কোটি ডলারের পোশাক; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৪.৬৯ শতাংশ। চীনে বেড়েছে ১৪ শতাংশ; রপ্তানি হয়েছে ২০ কোটি ডলারের পোশাক।

এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবেও পোশাক রপ্তানিতে চমক দেখিয়েছে বাংলাদেশ। এই ৯ মাসে আরব আমিরাতে ২৩ কোটি ৪ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছেন রপ্তানিকারকরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫.৭৭ শতাংশ বেশি। সৌদি আরবে রপ্তানি বেড়েছে আরও বেশি ৪২.৪৫ শতাংশ; রপ্তানি হয়েছে ১৫ কোটি ৭৯ লাখ ৪০ হাজার ডলারের পোশাক।
জুলাই-মার্চ সময়ে মেক্সিকোতে পোশাক রপ্তানি ৩৮.৫৩ শতাংশ বেড়ে ২৬ কোটি ৩৭ লাখ ৪০ হাজার ডলারে পৌঁছেছে। মালয়েশিয়ায় রপ্তানি হয়েছে ২৪ কোটি ২৪ লাখ ৪০ হাজার ডলারের পোশাক, প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭৪ শতাংশ। তুরস্কে রপ্তানি ৮২.৫০ শতাংশ বেড়ে ১৯ কোটি ৫৯ লাখ ৪০ হাজার ডলার হয়েছে। এ ছাড়া এই ৯ মাসে ব্রাজিলে পোশাক রপ্তানি ৭৩ দশমিক বেড়ে ১৫ শতাংশ বেড়ে ১২ কোটি ৭৯ লাখ ডলার হয়েছে। নিউজিল্যান্ডে বেড়েছে ৯.৫০ শতাংশ। সাউথ আফ্রিকায় বেড়েছে ৪.৩৬ শতাংশ। তবে যুদ্ধের প্রভাবে হোঁচট খেয়েছে রাশিয়ার বাজারে। সেখানে জুলাই-মার্চ সময়ে ৩০ কোটি ৮ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, কমেছে ৪০.২৩ শতাংশ।
বিজিএমইএ জানায়, ২০৩০ সালের মধ্যে পোশাক রপ্তানিতে বিশ্ববাজারে নিজেদের অবস্থান আরও সুসংহত করা ও রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যে নতুন রূপরেখা তৈরি করেছে বিজিএমইএ। এর মধ্যে অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি বাড়ানো তাদের অন্যতম কৌশল।

শেয়ার করুন