বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) কার্যালয় দালালমুক্ত করতে অনলাইনে আবেদন, ফি জমা দেওয়াসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু এত উদ্যোগ নিয়েও দালালমুক্ত হচ্ছে না চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিআরটিএ অফিস। মানুষের ভোগান্তি আগের মতোই আছে। জেলায় দালাল ছাড়া কোনোভাবেই ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে পারছে না গ্রাহকরা। দালাল ধরতে গিয়ে সরকার নির্ধারিত ফি’র চেয়ে দ্বিগুণ টাকা গুনতে হচ্ছে তাদের।
রোববার (৭ মে) দুপুরে সরজমিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিআরটিএ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, বছরের শুরুতেই অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফি ১৬১০ টাকা বাড়িয়ে তা ৪১৫২ টাকা করা হয়েছে, যা পূর্বে ছিল মাত্র ২৫৪২ টাকা। তবে দালাল ছাড়া মিলে না ড্রাইভিং লাইসেন্স। এমনকি লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের ক্ষেত্রে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। কাগজপত্র জমা দেওয়া থেকে শুরু করে প্রতিটি ধাপে গ্রাহকদের কাছে থেকে দালালরা হাতিয়ে নিচ্ছে দ্বিগুণ টাকা।
এছাড়া বিআরটিএ কার্যালয়ের টয়লেটের দরজাও তালাবদ্ধ। এতে জরুরি প্রয়োজনে সেটিও ব্যবহার করতে পারছেন না কেউ।
জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ত্রিমোহনী এলাকার বাসিন্দা এজাবুল হক। তিনি পেশায় একজন কৃষক। জমিতে যাওয়ার জন্য একটি মোটরসাইকেল কিনেছেন। কিন্তু ছিল না ড্রাইভিং লাইসেন্স। এতে রাস্তায় চলাচলে অসুবিধা হত। তাই লাইসেন্স করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিআরটিএ অফিসে দু-তিনদিন ঘুরেও কোন সমাধান করতে পারেননি। তাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বাসিন্দা মহিন নামে একজনকে ৮ হাজার টাকা দিয়েছেন ৮ মাস আগে। তবে এখনো ড্রাইভিং লাইসেন্স হাতে পাননি। আজ ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে এসেছেন তিনি।
এজাবুল হকের দাবি, সরকার আমাদের জন্য ভালো করছেন। কিন্তু বিআরটিএর এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে দালালরা এসব করছেন।
এজাবুল হক বলেন, ‘আমি জ্বলন্ত প্রমাণ। আমার বাড়ির পাশের একজন ছয় মাস ঘুরেও ড্রাইভিং লাইসেন্স পাননি। কারণ তিনি দালাল ধরেননি। এতে তার প্রায় দ্বিগুণ টাকা খরচ হয়ে গেছে। এ কথা চিন্তা করেই একসঙ্গে দালালকে ৮ হাজার টাকা দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দালালকে টাকা দিয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হয়েও ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায়। তবে এখন নাকি ভীষণ কড়াকড়ি আগের মতো আর হয় না।’
এজাবুলের দেওয়া তথ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিআরটিএর দালাল মাহিনের সঙ্গে কথা জাগো নিউজের। তিনি জানতে চান, পড়াশোনা করেছেন কি-না। বর্তমানে খুব কড়াকড়ি চলছে। পড়াশোনা ছাড়া পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব না। কিছু দিন আগে এসব হয়েছে। এখন আর হবে না। তবুও আপনার সঙ্গে আমি আগামীকাল যোগাযোগ করবো। কিন্তু এজাবুলের থেকেও এখন বেশি টাকা লাগবে। কারণ এখন সরকারি ফি বেড়েছে।
সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আট মাস আগে ৭ হাজার টাকা দালালকে দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্সের পরীক্ষা দিতে এসেছিলাম। তবে ভাইভা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারিনি। তবুও আজকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে এসেছি। কয়েকদিনের মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স হাতে পাবো।’
ভোলাহাট উপজেলার মুশরীভূজা গ্রামের মাসুদ রানা বলেন, ‘আমি একজন দালালকে ৯ হাজার টাকা দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছি। এরই মধ্যে সব পরীক্ষা শেষ করেছি। আজকে এসেছি ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে। এর আগে আমি দালাল না ধরে ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি তবে করতে পারিনি। তাই দালালকে দিয়েই করতে হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স ফি হচ্ছে ৪১৫২ টাকা। কিন্তু আমাকে দ্বিগুণেরও বেশি টাকা দিতে হয়েছে। অনেক মানুষ আছে টাকা দিয়েও ড্রাইভিং লাইসেন্সের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেন না। এক কথায় বলা যায় ভোগান্তির শেষ নেই এখানে। পদে পদে দুর্নীতি জড়িয়ে আছে। টাকা দিলেই সব সমাধান।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. শাহজামান হক।
তার দাবি, এখন সব কিছু হচ্ছে অনলাইনে। তাই দালাল ধরে কোনো অনিয়মের সুযোগ নাই। গ্রাহকদের আমরা সচেতন করার পরও তারা দালালদের কাছে যাচ্ছে।