১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সকালে সমকালীন ঢাকাই চলচ্চিত্র অঙ্গনে বড় শূন্যতা তৈরি করে বিদায় নিয়েছিলেন সালমান শাহ। ১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ মুক্তি পায় সালমান শাহ ও মৌসুমী অভিনীত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমাটি। সিনেমাজগতে সালমানের আসার গল্প গণমাধ্যমকে শুনিয়েছিলেন তাঁর মা নীলা চৌধুরী। সালমানের প্রয়াণদিবসে আজ আবার শুনি সেই গল্প।
হঠাৎ একদিন চিত্রনায়ক সালমান শাহ তাঁর মাকে বললেন, ‘একজন চলচ্চিত্র পরিচালক আসবেন।’ সেদিন তাঁদের বাসায় আসেন পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান। তাঁর সঙ্গে আরও লোক ছিলেন। সেদিনই সালমান শাহর মা জানতে পারেন, তাঁর ছেলে ইমন (সালমান শাহ) সিনেমা করতে যাচ্ছে। শুনেই রেগে আপত্তি জানিয়েছিলেন সালমানের মা নীলা চৌধুরী। ছেলেকে সিনেমা করতে দেবেন না। পরে সালমান শাহ মায়ের পা ধরে বলেছিলেন, ‘একটি মাত্র সিনেমা করব।’ মায়ের মন জয় করে চুক্তিবদ্ধ হন ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমায়। সেই সিনেমা মুক্তির তিন দশক পূর্ণ করল। ১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ মুক্তি পায়। ঢালিউড পায় নবাগত নায়ক–নায়িকা সালমান শাহ ও মৌসুমীকে।
নীলা চৌধুরী বলেন, ‘আমার ছেলে ইমন যখন যা করতে চেয়েছে, তা–ই করেছে। ও ছিল আমাদের খুবই আদরের, বহুবার বলেছি। তাঁর কোনো কিছুতে না করিনি। কিন্তু ও যখন এসে বলল, আম্মা সিনেমা করব। তখন আমি আপত্তি জানাই। না সিনেমা করা যাবে না। সিনেমাতে প্রেম করবে, মেয়েদের হাত ধরবে, নেচে নেচে গান করবে। এগুলো আমার অপছন্দ ছিল। তখন আমি বলেছি নাটক করেছ, মডেলিং করছ, সব ঠিক আছে কিন্তু সিনেমা করা যাবে না।’
তখন সালমান শাহ নাছোড় হয়ে মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। মায়ের মন জয়ের চেষ্টা করেন। তিনি সিনেমা করবেনই। ছেলের এসব দেখে সালমানের বাবা রাজি হয়ে গেলেন। আর কোনো আপত্তি নয়। কিন্তু নীলা চৌধুরী তখনো রাজি না। পরে সালমান তাঁর পায়ে ধরেন। সালমানের মা বলেন, ‘তখন আমি কী করব? ও আমার পা ধরে বলল, “মা তুমি রাজি হও। তুমি রাজি না হলে সিনেমা করতে পারব না।” পরে সিনেমার পরিচালক সোহান বলল, “আপনার পায়ে ধরি, একটি ছবি করতে দেন।” তখন বললাম সিনেমা করো। পরে তো ভালো করল। আরও অনেকেই আগ্রহ দেখাল। তখন আমরাই বললাম, সিনেমা করো।’
‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার শুটিং থেকে ফিরে নিয়মিত মায়ের কাছে গল্প করতেন সালমান। একবার মৌসুমীকে শুটিংয়ের সময় কোলে নিতে গিয়ে ফেলে দিয়েছিলেন, সেই গল্পও শুনিয়েছিলেন। কিন্তু নীলা চৌধুরী বুঝতে পারেন, কোনো কারণে মৌসুমীকে অপছন্দ করেন সালমান। নীলা চৌধুরী বলেন, ‘সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর একবার মৌসুমী এসেছিল আমাদের বাসায়। তখনই প্রথম মৌসুমীকে দেখি। এর আগে সিনেমার শুটিংয়ের সময়ও সালমানের মুখে মৌসুমীর কথা তেমন শুনিনি। সেই মৌসুমী এখন বলছে, ইমন তার বাল্যবন্ধু ছিল। খুলনায় তারা একসঙ্গে পড়াশোনা করেছে। এটা হাস্যকর একটা কথা।’
সালমানের মা জানান, মৌসুমী প্রায়ই বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেন, ‘খুলনায় সে ইমনের সঙ্গে পড়াশোনা করেছে।’
নীলা চৌধুরী আরও জানান, তাদের বয়সের ব্যবধান তো ৬ থেকে ৭ বছরের বেশি। তা ছাড়া তিনি সেই সময় কখনোই সৌসুমী নামের কাউকে চিনতেন না। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে তো খুলনায় কোনো স্কুলে পড়ে নাই। তখন ইমনের বয়স সাড়ে পাঁচ বছর হবে। ওর বাবার পোস্টিং ছিল সেখানে। আমরা তাকে অনেক দিন পর্যন্ত বাড়িতেই পড়াতাম। অনেক বই তার মুখস্থ ছিল। আমার ছেলেকে সবাই পছন্দ করত, সে ভালো গান করত, তাকে দুই–এক দিন হয়তো কোনো স্কুলে শিক্ষকদের অনুরোধে নিয়ে গিয়েছি, এই যা। কিন্তু সালমানের কাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল, সেটা আমি মা, আমি ভালো জানি। এটা নিয়ে মৌসুমী সত্য বলেনি। সালমানও তো কোনো দিন বলে নাই মৌসুমী তার বন্ধু ছিল। এখন সালমান মরে যাওয়ার পর কেন তার সঙ্গে আড্ডা দিত, এসব প্রসঙ্গ আসছে।’
‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার পরিচালক দাবি করেন তিনি সালমান শাহ নাম রেখেছেন। কিন্তু এটা সত্য নয়, দাবি নীলা চৌধুরীর।
তিনি বলেন, ‘সোহান চেয়েছিল তার সিনেমায় ইমনের নাম “সালমান খান” রাখতে। আমি সঙ্গে সঙ্গে বলেছি অন্য নায়কের নামে হবে না। আমরা ছেলেকে যখন প্রথম কুমিল্লার একটি স্কুলে ভর্তি করাই, তখন ইমনের নাম নিবন্ধন করেছিলাম, চৌধুরী মোহাম্মদ সালমান শাহরিয়ার। আমি সোহানকে বলি সালমান নামটি রেখে এর সঙ্গে চৌধুরী যোগ করো। সে জানায়, এটা হবে না, রোমান্টিক একটা নাম লাগবে। কোনোভাবেই নাম মিলছিল না। আমি চিন্তা করি, কী নাম হতে পারে। আমি নাসিরউদ্দিন শাহর ভক্ত ছিলাম, পরে আমার মনে হয়, তার নাম থেকে শাহ শব্দটি নিব। ইমনের নামের অংশের শাহরিয়ার থেকে শাহ যোগ করি। এভাবেই সে সালমান শাহ হয়ে যায়। সেই সময় অনেক জায়গায় ইমন লিখেছেও সালমান শাহরিয়ার। নামটি আমাদেরই দেওয়া।’
কিছুদিন আগে ‘বুকের মধ্যে আগুন’ নামের একটি সিরিজ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল, এটা সালমান শাহর পরিবারকে নিয়ে। পরিচালক তানিম রহমান সেটা স্বীকার না করলেও পরে দর্শক প্রতিক্রিয়ায় জানা যায়, সালমানের পরিবারের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে সিরিজটি। সালমানের মা বলেন, ‘সালমানের পরিবারকে অসম্মান করার জন্য কাজটি করেছেন পরিচালক। তিনি মনে করেছেন, দুই পয়সা কামালেই সম্মানিতদের অসম্মান করা যায়। তার পারিবারিক শিক্ষা নেই।
তার বোঝা দরকার, মরা মানুষকে অসম্মান করতে নেই। একটা কথা, মানির মান এত সহজে যায় না। মদের বোতল হাতে দিয়ে অসম্মানের চেষ্টা করে লাভ নেই। আমাদের পরিবারের ঐতিহ্য রয়েছে। এটা সবাই জানে। আর কেউ কারও বাড়িতে এলেই প্রেম হয়ে যায় না। আমার পরিবারের বিরুদ্ধে বানোয়াট কোনো তথ্য দিয়ে মামলা বন্ধ করা যাবে না।’