১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৪:৩২:৪৭ অপরাহ্ন
সহিংসতা ছাড়াই ভোট সম্পন্ন
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৬-২০২২
সহিংসতা ছাড়াই ভোট সম্পন্ন

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে সকাল ৮টায় শুরু হয় ভোট গ্রহন। নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে ১০৫টি কেন্দ্রে ইভিএমে এ ভোট শেষ হয় বিকেল ৪টার দিকে। পাঁচজন মেয়র প্রার্থীর পাশাপাশি ২৭টি ওয়ার্ডে ১৪২ জন কাউন্সিলর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সবার দৃষ্টি মেয়র পদে।

রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার নির্বাচনে মোট ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন, পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন। আর হিজড়া ভোটার দুজন। মোট ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি কক্ষে ভোট গ্রহণ করা হয়। এতে মেয়র পদে ৫ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১০৬ জন ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন প্রার্থী হয়েছেন।

কুমিল্লা সিটির নির্বাচনে এবার মেয়র পদে লড়ছেন পাঁচজন। নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক (রিফাত)। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ও সিটির সদ্য বিদায়ী মেয়র মনিরুল হক (সাক্কু) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন টেবিলঘড়ি নিয়ে।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে সকাল ৮টায় শুরু হয় ভোট গ্রহন। নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডে ১০৫টি কেন্দ্রে ইভিএমে এ ভোট শেষ হয় বিকেল ৪টার দিকে শেষ হওয়ার কথা। তবে ৪টার পরেও ভোটগ্রহণ চলছে। বড় পুকুর পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ভোট নেওয়া হচ্ছে।

প্রিজাইডিং অফিসার আফজাল হোসেন বলেন, যারা ভোট কেন্দ্রের সীমানার ভিতরে ছিলেন শুধু তাদেরই ভোট নেওয়া হচ্ছে। নতুন করে সীমানার ভিতরে আর কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না ।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হবে জেলা শিল্পকলা একাডেমী থেকে। এখান থেকে নির্বাচনের সর্বশেষ ফলাফল প্রকাশ হবে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষে কাউকে বুধবার উঁকি দিতে সিসিটিভিতে দেখা যায়নি বলে দাবি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

কুসিক নির্বাচন ও দেশের অন্যান্য নির্বাচনে পর্যবেক্ষণ করতে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত নির্বাচন ভবনের লেভেল-৪ এর ৪১৩ নম্বর কক্ষে সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেছে ইসি। তবে সেই সিসি ক্যামেরায় কাউকে গোপন কক্ষে উঁকি দিতে বা দুজনকে দেখা যায়নি বলে দাবি করেছেন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সমন্বয়ক ইসির আইডিইএ (২য় পর্যায়) প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক (কমিউনিকেশন) স্কোয়াড্রন লিডার মো. শাহরিয়ার আলম। বুধবার বেলা ১১টা ৫২ মিনিটে এসব তথ্য জানান তিনি। যদিও কুসিক নির্বাচনে দৈয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মহিলা বুথে এক পোলিং কর্মকর্তাকে উঁকি দিতে দেখা গেছে।

গোপন কক্ষে উঁকি দেওয়া হচ্ছে, এমন কিছু দেখেছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে স্কোয়াড্রন লিডার শাহরিয়ার আলম বলেন, সবগুলো গোপন কক্ষই আমরা সিসি ক্যামেরায় দেখতে পাচ্ছি। গোপন কক্ষে উঁকি দিচ্ছে এরকম আমরা দেখিনি। কেউ উঁকি দিলে সেটা আমরা দেখতে পেতাম। দেখলে অ্যাকশন নিতাম।

সকাল আটটায় ভোট দিতে এসেছিলেন অন্তঃসত্ত্বা খাদিজা বেগম। জানালেন, দুই ঘণ্টা ধরে গরমের মধ্যে তিনি লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। অনুরোধ করেও আলাদাভাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি। তিনি একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বলছেন, অনুরোধ করেও ভোট দিতে না পারার বিষয়টি তিনি জানেন না। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২২ নম্বর ওয়ার্ডে পদুয়ার বাজার মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটেছে। অসুস্থ হওয়ার পরে খাদিজাকে কেন্দ্রের একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর মাথায় পানি ঢালেন এবং বাতাস করেন অন্য ভোটাররা। খাদিজা বেগম বলেন, ‘আমি আর ভোট দেব না। একটু ভালো লাগলে বাসায় ফিরে যাব।’

অনুরোধের পরেও অন্তঃসত্ত্বা খাদিজার ভোট দিতে না পারার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মাহবুর রহমান বলেন, ‘ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে বয়স্ক, অসুস্থ ও অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য আলাদা নির্দেশনা দেওয়া আছে। কোনো অন্তঃসত্ত্বা অনুরোধ করে ভোট দিতে পারেননি- এমন কোনো অভিযোগ আমার জানা নেই।’

কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এ নির্বাচনে ফলাফল প্রকাশের পর স্থানীয় রাজনীতির অনেক হিসাব-নিকাশের মীমাংসা হবে। পাঁচজন মেয়র প্রার্থীর পাশাপাশি ২৭টি ওয়ার্ডে ১৪২ জন কাউন্সিলর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১০৬ জন লড়ছেন। সবার দৃষ্টি মেয়র পদে।

কুমিল্লা আলীয়া মাদরাসা কেন্দ্র ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নারী ভোটার কেন্দ্র। ভোট দিতে গিয়ে বয়স্ক নারীদের সময় লাগছে বেশি। কিন্তু এরই মধ্য ইভিএমের ব্যালটে চাপ দেওয়ার পর শব্দ শুনে ভয় পেয়ে বেরিয়ে গেলেন এক ভোটার।

কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. নাইমুর রহমান বলেন, সকালে এক নারী একটি ভোট দিয়ে গোপন কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন। ব্যালটে চাপ দেওয়ার পর শব্দ শুনে তিনি ভয় পেয়ে যান। তাঁর ভোট অসম্পূর্ণ থাকায় অন্য ভোটও নেওয়া যাচ্ছিল না। তাকে বুঝিয়ে আবার ভোট দিতে গোপন কক্ষে পাঠানো হয়! দুই নারা ভোটার ইভিএমের ইলেক্ট্রিক ব্যালটে চাপ দিতে গিয়ে নিচে ফেলে দেন।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে এক কেন্দ্রের সামনে থেকে এক যুবককে আটক করা হয়েছে। তাঁকে উদ্ধার করতে ছুটে গেছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর। তবে তাঁকে ছাড়া হয়নি।

বুধবার সকালে ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের ধনাইতরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সামনে থেকে ওই যুবককে আটক করা হয়েছে। তাঁর নাম মামুনুর রশীদ। তিনি ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর আবুল হাসানের সমর্থক বলে জানা গেছে।

কেন্দ্রে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা তাঁকে আটক করেন। সে সময় আবুল হাসান তাঁর কর্মীকে উদ্ধার করতে ছুটে যান। তবে বিজিবি সদস্যরা মামুনুরকে ছাড়েননি।

নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অতীশ সরকার বলেন, নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে মামুনুরকে আটক করা হয়েছে।

এদিকে, ভোট দিতে প্রায় তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হলো ৮০ বছর বয়সী এক ভোটারকে। পদুয়ার বাজার মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিতে আব্দুল হাকিম লাইনে দাঁড়ান ৮ টার পরেই। আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষার পর তিনি ভোট দিতে পারলেন।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দৈয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মহিলা বুথে এক পোলিং কর্মকর্তাকে উঁকি দিতে দেখা গেল। নাম পরিচয় জানতে চাইলে তিনি তা জানাননি।

তবে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘অনেকেই বয়স্ক ভোটার, যারা ভিতরে গিয়ে ভোট দিতে পারছেন না। তাদের নির্দেশনা দিয়ে সহযোগিতা করছেন। একজন ভোটার না বুঝে ভোট দিতে গিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় নিচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে অর্ধেক বোর্ড কাস্টিং করা সম্ভব হবে না’।

ওই ভোট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, গোপন কক্ষে এভাবে উঁকিঝুঁকি দেয়ার সুযোগ নেই। তবে ভিতরে গিয়ে কেউ না বুঝলে তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সব প্রার্থীদের এজেন্ট ‌রয়েছে।

দৈয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নারী কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৫৪৩ জন। এখানে প্রথম দুই ঘন্টায় ২০৮ টি ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। পাশের পুরুষ কেন্দ্রে ভোটারদের ভোট গ্রহণ হয়েছে ‌১৮১ টি। সেখানে ভোটার আছেন ১ হাজার ৫৮৫জন।

শেয়ার করুন