সফরকারী, ভ্রমণকারী, পর্যটক ইত্যাদি শব্দের ইসলামি পরিভাষা হলো : মুসাফির।
আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘আর যে অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে তবে অন্যান্য দিবসে সেই সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ চান এবং কঠিন চান না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)
এ-আয়াত প্রমাণ করে, মুসাফিরের জন্য রমজানের রোজা ভঙ্গের অনুমতি আছে। তাকে পরবর্তী সময়ে সে-পরিমাণ কাজা আদায় করতে হবে। তবে তিনি যদি রোজা রাখেন, তাহলে তার রোজা হয়ে যাবে। (ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪০৩)
যদি রোজা পালন খুবই কঠিন হয়ে পড়ে এবং পানাহার আবশ্যক হয়, তবে পানাহার বাধ্যতামূলক। কেননা, আল্লাহ তায়ালা যেমন কারও ওপর বিধান চাপিয়ে দেন না, তেমনি নিজের ওপর জবরদস্তিমূলক কোনো বিধান বানিয়ে নেয়াও বৈধ নয়। কঠিন অবস্থায় রোজা পালনকারীকে লক্ষ্য করে রাসুল সা. বলেছিলেন: এরা পাপী,এরা পাপী। (মুসলিম, হাদিস ১১১৪)
এক ব্যক্তি এমন কঠিন দু:সাধ্য সময়ে রোজা রেখেছিলো। একদল লোক তাকে ঘিরে ছিলো এবং ছায়া দিচ্ছিলো। রাসুল সা. তা দেখে বললেন : (এভাবে) সফরে রোজা পালন কোনো পুণ্যের কাজ নয়। (আবু দাউদ, হাদিস ২৪০৭)
একইভাবে জিহাদের সফরে যদি কঠিন শত্রুর মুখোমুখী হতে হয় এবং শক্তিমত্তা প্রদর্শনের বিকল্প না থাকে,যখন রোজা রাখলে দুর্বল হয়ে পড়ার সমূহ আশঙ্কা থাকে,তখন রোজা রাখা কিছুতেই সঙ্গত নয়।
একদল আলেম বলেছেন: এ-সময় রোজা রাখা হারাম। তবে সকলে একমত যে,রোজা রাখলে তা শুদ্ধ হয়ে যাবে এবং পুনরায় কাজা করতে হবে না—তবে গুনাহগার হবে।
আবু সাইদ খুদরি রা. বলেন: রোজা পালনরত অবস্থায় আমরা রাসুল সা.-এর সঙ্গে মক্কায় সফরে বের হলাম। এক স্থানে যাত্রা বিরতিকালে রাসুল সা. বললেন: তোমরা শত্রু ব্যুহের কাছাকাছি পৌঁছে গেছ,পানাহার তোমাদেরকে শারীরিকভাবে সবল করে তুলবে। সুতরাং আমাদের রুখসত প্রদান করা হয়েছিলো। আমাদের কেউ রোজা রেখেছিলো, পানাহার করেছিলো কেউ কেউ।
অতঃপর ভিন্ন এক স্থানে উপনীত হলে রাসুল সা. আমাদের উদ্দেশ্য করে বললেন: তোমরা ভোরে শত্রুর মুখোমুখী হবে,পানাহার হবে তোমাদের জন্য বলদায়ক, সুতরাং, তোমরা পানাহার করো। পানাহার ছিলো বাধ্যতামূলক। তাই আমরা সকলে পানাহার করলাম।
তিনি বলেন: এরপর আমরা অনেকবার রমজানের সফরে রাসুল সা.-এর সঙ্গে রোজা রেখেছি। (মুসলিম, হাদিস ১১২০)