০৩ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৭:০৮:৩০ অপরাহ্ন
এআই দৌড়ে নতুন ধাপের সূচনা, সুপারইন্টেলিজেন্সের পথে মেটা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৭-২০২৫
এআই দৌড়ে নতুন ধাপের সূচনা, সুপারইন্টেলিজেন্সের পথে মেটা

বিশ্বজুড়ে যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ঘিরে প্রতিযোগিতা আরও তীব্র হচ্ছে, ঠিক তখনই বড়সড় ঘোষণা দিল মেটা। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ জানিয়েছেন, সুপারইন্টেলিজেন্স তৈরির দৌড়ে নেতৃত্ব নিতে তারা গঠন করেছে নতুন ইউনিট, মেটা সুপারইন্টেলিজেন্স ল্যাব (MSL)। এআই গবেষণা ও উদ্ভাবনের এ উচ্চাভিলাষী ইউনিট নিয়ে শুরু হয়েছে এক নতুন অধ্যায়।


জাকারবার্গের অভ্যন্তরীণ বার্তা অনুযায়ী, মেটা তাদের এআই বিভাগকে নতুন করে সাজিয়েছে। এ ইউনিটে যোগ দিয়েছেন ওপেনএআই, গুগল ডিপমাইন্ড ও অ্যানথ্রপিকের শীর্ষস্থানীয় গবেষক ও প্রকৌশলীরা। রয়েছেন ডিপমাইন্ডের সাবেক গবেষক জ্যাক রেওপেইসান, ওপেনএআই-এর শু চাও বিউ, জিয়াহুই ইউ এবং হং ইউ রেন; এ ছাড়া আছেন অ্যানথ্রপিকের জোয়েল পবার, যিনি আগেই মেটাতেই এক দশকের বেশি সময় কাজ করেছেন।


এ ইউনিটের নেতৃত্বে থাকছেন স্কেল এআই-এর সাবেক সিইও আলেকজান্ডার ওয়াং। তার সঙ্গে থাকবেন গিটহাবের সাবেক সিইও ন্যাট ফ্রিডম্যান, যিনি এআই পণ্য ও ফলিত গবেষণার দিকটি দেখবেন। বিশ্লেষকদের মতে, এ জুটি মেটার এআই যাত্রায় নতুন গতি আনবে।


জাকারবার্গ লিখেছেন, ‘এআইয়ের অগ্রগতি এত দ্রুত হচ্ছে যে, সুপারইন্টেলিজেন্স এখন আর কল্পনার বিষয় নয়, এটি বাস্তব সম্ভাবনার মধ্যে চলে এসেছে। আমি বিশ্বাস করি, এটি মানবজাতির জন্য এক নতুন যুগের সূচনা করবে এবং মেটাকে সেই যাত্রার সামনের রাখতে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’


শুধু বক্তব্য নয়, বিনিয়োগেও তার এ প্রতিশ্রুতি স্পষ্ট। মেটা এআই খাতে ‘শত শত বিলিয়ন ডলার’ ব্যয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। চলতি মাসেই স্কেল এআই-তে তারা ১৪.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। পাশাপাশি, এআই ব্যবহার করে কণ্ঠস্বর নকল করার প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা স্টার্টআপ প্লে-এআই অধিগ্রহণের প্রস্তুতিও চলছে। আলোচনায় আছে পারফ্লেক্সিটি এআই ও রানওয়ে এআই-এর সঙ্গেও।


‘মেটা সুপারইন্টেলিজেন্স ল্যাব’-এর অধীনে এক ছাতার নিচে আনা হচ্ছে মেটার লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল দল, মৌলিক গবেষণা ইউনিট FAIR এবং এআই অ্যাপস তৈরির টিম। তৈরি হচ্ছে একটি নতুন গবেষণাগার, যেখানে ভবিষ্যতের জেনারেটিভ এআই মডেল তৈরি হবে।


এআই খাতে প্রতিভা আকর্ষণের জন্য জাকারবার্গ নিচ্ছেন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। ক্যালিফোর্নিয়ার পালো আল্টো ও লেক তাহোর নিজস্ব বাড়িতে সম্ভাব্য নিয়োগপ্রার্থীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলছেন তিনি। অনেককেই অফার করা হচ্ছে কোটি কোটি ডলারের শেয়ার প্যাকেজ, যা মেটার প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবকে আরও স্পষ্ট করে।


ঘোষণার দিনই মেটার শেয়ার দর ছুঁয়েছে ৪৭.৯০ ডলার, যা প্রতিষ্ঠানটির সর্বকালীন সর্বোচ্চ। বিশ্লেষকরা বলছেন, এআই নিয়ে মেটার এ আক্রমণাত্মক কৌশল প্রযুক্তি বিশ্বে নতুন প্রতিযোগিতার সূচনা করবে।


গুগল, ওপেনএআই ও অ্যানথ্রপিক যেখানে পরবর্তী প্রজন্মের এআই মডেল তৈরিতে ব্যস্ত, সেখানে মেটা সরাসরি সুপারইন্টেলিজেন্সের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে। প্রযুক্তি, প্রতিভা আর অর্থ, তিন দিক থেকেই এগিয়ে থাকার কৌশল নিয়েছে তারা।



সব মিলিয়ে, ‘মেটা সুপারইন্টেলিজেন্স ল্যাব’ শুধু একটি গবেষণা ইউনিট নয়, এটি আসলে ভবিষ্যতের প্রযুক্তিনেতৃত্ব নেওয়ার এক সাহসী পদক্ষেপ। এখন দেখার বিষয়, এ উচ্চাভিলাষ কতটা বাস্তবায়িত হয়। তবে এটা নিশ্চিত, এআই যুদ্ধ এখন আরও শানিত এবং অনেক বেশি আকর্ষণীয়।


শেয়ার করুন