২৯ জুলাই ২০২৫, মঙ্গলবার, ১২:৩৩:২৬ অপরাহ্ন
ঢাকা থেকে প্রথম ট্রেন পদ্মা সেতু পাড়ি দেবে কাল
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৯-২০২৩
ঢাকা থেকে প্রথম ট্রেন পদ্মা সেতু পাড়ি দেবে কাল

পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচল করবে। ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনটি পদ্মা সেতু পার হয়ে যাবে ভাঙ্গা রেলস্টেশন পর্যন্ত। পরে সেখান থেকে আবার ঢাকায় ফিরে আসবে ট্রেনটি। রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচলের বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন।


বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা বহুমুখী সেতুতে সড়ক ও রেল একই সঙ্গে চলাচলের কথা ছিল। কিন্তু সড়ক অংশ চালু হলেও উদ্বোধন হয়নি ট্রেন চলাচল। আগামী ১০ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচলের। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন এই রেলপথের উদ্বোধন করবেন। এতে করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ আরও সহজ হবে।


রেলপথ মন্ত্রী জানান, পদ্মা সেতু হয়ে রেলপথ উদ্বোধনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সময় দিয়েছেন ১০ অক্টোবর। সেদিন একটি সুধী সমাবেশও অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ৭ সেপ্টেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে একটি ট্রেন কমলাপুর থেকে ভাঙ্গা অংশ পর্যন্ত যাবে ও ফিরে আসবে। পুরো রেল প্রকল্প যশোর পর্যন্ত। সেটি উদ্বোধন হবে ২০২৪ সালের জুনে। আর এ বছর চালু হবে ফরিদপুরের ভাঙ্গা জংশন পর্যন্ত। 


পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত প্রায় ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলপথ নির্মাণ করছে রেলওয়ে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিলোমিটার রেলপথ চালু হচ্ছে। 


প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের এক সপ্তাহ পর থেকে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। শুরুতে একটি ট্রেন পরিচালনা করা হবে। প্রকল্প কার্যালয় থেকে ঢাকা-পদ্মা সেতু-রাজবাড়ী রুটে ট্রেন চালানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। 


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের এক কর্মকর্তা জানান, রাজশাহী থেকে ঢাকা পর্যন্ত একটি ট্রেন চালানোর প্রস্তাব রয়েছে। মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভাঙ্গা পর্যন্ত আসে। এই ট্রেন ঢাকা পর্যন্ত আনা হতে পারে। পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের অধীনে চীন থেকে ১০০ নতুন কোচও কেনা হয়েছে। নতুন কোচ দিয়েই ট্রেন চালু করা হবে। 


রেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উদ্বোধনের সময় সব স্টেশন এবং পুরো সংকেতব্যবস্থা হয়তো চালু করা যাবে না। শুরুতে তিনটি স্টেশনে ট্রেন থামার ব্যবস্থা থাকবে। স্টেশনগুলো হচ্ছে মাওয়া, পদ্মা (জাজিরা) ও শিবচর। মুন্সিগঞ্জের নিমতলা স্টেশনটিও চালুর চেষ্টা চলছে। 


প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুসারে, আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮২ শতাংশ। এ প্রকল্পে তিন অংশে বিভক্ত হয়ে কাজ চলমান। প্রথম অংশের ঢাকা-মাওয়া অংশে অগ্রগতি ৮০.৫০ শতাংশ। এই অংশে রেললাইন নির্মাণ শতভাগ হয়ে গেলেও নতুন ৪ স্টেশনের একটিরও শতভাগ কাজ হয়নি। কাজ বাকি হয়েছে ব্যালাস্টেড ট্রাক ও মেজর দুই ব্রিজের। 


আর দ্বিতীয় অংশ মাওয়া-ভাঙ্গার কাজের অগ্রগতি ৯৬.৫০ শতাংশ। ব্যালাস্টেড ট্রাক ও সিগন্যালিংয়ের কাজ বাকি। নতুন ৪ স্টেশনের দুটির নির্মাণ শেষ, বাকি দুইটি বাকি। এ ছাড়া এ অংশের সব কাজই সম্পন্ন হয়েছে। 


অন্যদিকে আগামী বছরের জুনে উদ্বোধনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া ভাঙ্গা থেকে যশোর অংশের কাজের অগ্রগতি ৭৮ শতাংশ। এই অংশে রেললাইন নির্মাণ প্রায় ৯৯ শতাংশ হয়ে গেলেও নতুন ৯ স্টেশনের একটিরও শতভাগ কাজ হয়নি। কাজ বাকি হয়েছে ব্যালাস্টেড ট্রাক ও মেজর একটি ব্রিজের কাজ। এসব কাজের সঙ্গে এ অংশে সবচেয়ে বেশি কাজ বাকি রয়েছে সিগন্যালিংয়ের কাজ, রেলপথ নির্মাণ শেষ হলেই শুরু হবে এ কাজ। 


প্রসঙ্গত, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। জিটুজি পদ্ধতিতে এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে চীন। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। রেল সংযোগের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। 


ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হবে ঢাকা-যশোর পর্যন্ত পদ্মা সেতু রেল লিংক রুটটি। এ রুট দিয়ে বাংলাদেশের রেলপথ ভারতের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে। 


এ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে নতুন চার জেলা (মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল) অতিক্রম করে যশোরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। 


একই সঙ্গে বিদ্যমান ভাঙ্গা-রাজবাড়ী থেকে কুষ্টিয়া হয়ে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ দিয়ে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সঙ্গেও যুক্ত হবে এ রেলপথ। ফলে এসব অঞ্চলে কম খরচেই পণ্য ও যাত্রী চলাচল করতে পারবে ঢাকার সঙ্গে।


শেয়ার করুন