১৯ নভেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৫:৩৭:৩৭ অপরাহ্ন
ডলারের দাম আরও কমার আভাস
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-১১-২০২৩
ডলারের দাম আরও কমার আভাস

দেশে চলমান ডলার সংকট কেটে যাচ্ছে। শক্তিশালী হতে যাচ্ছে টাকা। এরই মধ্যে ৫০ পয়সা কমানো হয়েছে ডলারের দর। একই সঙ্গে সরবরাহ ক্রমাগত বৃদ্ধি ও দাম আরও কমে আসার আভাসও মিলছে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বাজারে ডলারের দামে নৈরাজ্যের মধ্যে এ দাম কমানোর উদ্যোগকে আগামী অর্থনীতির জন্য স্বস্তির বার্তা বলে উল্লেখ করেছেন অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী নেতা ও সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল।


তারা বলছেন, এমনটিই হওয়ার ছিল। কারণ, দেশে বৈদেশিক বাণিজ্যের ঘাটতি কমে এসেছে। একইভাবে ঋণাত্মক অবস্থা থেকে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স বা চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও এখন সেপ্টেম্বরের হিসাবে ১ বিলিয়ন ডলারের উদ্বৃত্তে ফিরে এসেছে। নানামুখী পদক্ষেপের কারণে আগামীতে চলতি হিসাবের ভারসাম্য ইতিবাচক অবস্থাতেই থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। স্বস্তির খবর হচ্ছে—ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার প্রতিশ্রুত ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ঋণ ছাড় হতে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি


নভেম্বর-ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা, আইডিবিসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন দাতা সংস্থাগুলোর প্রতিশ্রুত ও পুঞ্জীভূত ঋণের অর্থ ছাড়ের গতি ও ধারাবাহিকতা বাড়তে থাকবে। এ নিয়ে সরকার দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে অব্যাহতভাবে দেনদরবার করে যাচ্ছে। তদুপরি সরকারও এ মুহূর্তে বৈদেশিক ঋণনির্ভর প্রকল্পগুলোতেই বেশি জোর দিচ্ছে। ফলে বিভিন্ন দেশ ও উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে গত চার মাসে নতুন করে বৈদেশিক ঋণের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ৪৬২ কোটি ৮৫ লাখ ডলারের। একইভাবে এই সময় উন্নয়ন সহযোগীরা ছাড় করেছে ১৬২ কোটি ৬১ লাখ ডলারের ঋণ।


 


এদিকে সংকট কাটিয়ে প্রণোদনায় ভর করে এরই মধ্যে অক্টোবরে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহের হারও বেড়েছে। এ মাসে প্রবাসীরা ১.৯৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা গত চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যৌক্তিক কারণেই আগামীতে রেমিট্যান্স প্রবাহের হার বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। এর বিপরীতে ধারাবাহিকভাবে আমদানি কমছে লক্ষণীয়ভাবে। এতেও ডলারের সাশ্রয় হচ্ছে। রপ্তানিও আছে প্রবৃদ্ধির ধারায়। এর পাশাপাশি আগামী ৭ জানুয়ারির পর নির্বাচনী অনিশ্চয়তা কেটে গেলে দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রবণতা বাড়বে। এতে বেসরকারি স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রবৃদ্ধিও গতিশীল হবে। এর সবকিছুর হিসাব ডলারে সমন্বয় হবে এবং এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়বে।


জানা গেছে, ঘাটতির কারণে বর্তমানে ২১ ব্যাংক ডলার সংকটে রয়েছে, আর ৩৯টি ব্যাংক রয়েছে উদ্বৃত্তে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক, ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বাফেদা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) দায়িত্বশীলরা আভাস দিয়েছেন—সামনে ডলারের দাম ক্রমাগত কমতে থাকবে। সে ধরনের পরিস্থিতি এখন দেশে তৈরি হয়েছে। এখন দরকার পরিকল্পিত ছক ধরে এগোনোর। তাহলে অভ্যন্তরীণ বাজারে ডলারের সরবরাহ ঘাটতি দূর হবে। সরবরাহ বাড়বে। এতে কার্ব মার্কেটেও দামও কমে আসবে, যার প্রভাব অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্য, মূলধনি যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামালের আমদানিতে পড়বে। এতে এলসি জটিলতা দূর হবে এবং ডলারের দাম কমার দরুন গতি আসবে ব্যবসা-বাণিজ্যে, যা এই সময়ের অর্থনীতির জন্য চরম স্বস্তিদায়ক বার্তা।


এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম কালবেলাকে জানান, অসহনীয় মূল্যস্ফীতিসহ অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে আজকের যে চক্রাকার সমস্যা তৈরি হয়েছে, তার প্রধানতম কারণ হচ্ছে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ঘাটতি। এতে ডলার দুর্লভ হয়ে উঠেছে এবং দাম বেড়েছে লাগামহীন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। ভুক্তভোগী হয়েছে ক্রেতা-ভোক্তা। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ডলারের দাম কমে আসা নিঃসন্দেহে অর্থনীতির জন্য সুখবর। এটা ধারাবাহিকভাবে কমলে এর উপকারভোগী হবে দেশই। এতে ব্যবসায় ডলার নামক আতঙ্ক ও জটিলতা কমবে, এলসির গতি বাড়বে।


তিনি বলেন, বৈদেশিক ঋণের ছাড়, রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি ও রপ্তানি আয়ে ধারাবাহিক গতিশীলতা ধরে রাখতে হবে। একই সঙ্গে আমদানিতে বিলাস দ্রব্য কিংবা এ মুহূর্তের অর্থনীতিতে যেটার দরকার নেই, তার আমদানি কঠোরভাবে রোধ করতে হবে। তবেই ডলার সাশ্রয় হবে। এর সঙ্গে বিদেশ থেকে ডলার আসতে থাকলে রিজার্ভ পরিস্থিতিরও উন্নতি ঘটবে। আর এসব পদক্ষেপ সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংককেই সুচারুভাবে পালন করতে হবে। তবেই ডলারের চলমান ঊর্ধ্বগতিকে ধারাবাহিকভাবে দমানো সম্ভব হবে।


অর্থ মন্ত্রণালয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্যমতে, বিশ্বব্যাংক, জাইকা, এডিবি, আইডিবিসহ কিছু দাতা সংস্থা ও দেশ থেকে সরকার ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়ার আশা করছে।


কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, প্রবাসীরা সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি ঘটেছে ৪৮.২০ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১.৩৩ বিলিয়ন ডলার, যা ছিল গত ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ ছাড়া চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে দেশে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয়েছে মোট ১ হাজার ৪৭৪ কোটি ৯০ লাখ (১৪.৭৫ বিলিয়ন) ডলারের। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ১৯ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সবশেষ অক্টোবরের মাসওয়ারি রপ্তানি আয়ের হিসাবে গত চার মাসে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ।


শেয়ার করুন