দক্ষিণ-পূর্ব স্পেনের মুরসিয়া অঞ্চলের জুমিলা শহরের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মতো ইসলামিক ধর্মীয় উৎসবগুলো উদযাপনের জন্য সিভিক সেন্টার ও জিমনেসিয়ামের মতো সরকারি স্থাপনাগুলোর ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।
স্পেনে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা এটিই প্রথম। ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল পিপলস পার্টি এই প্রস্তাবনা উত্থাপন করে এবং এটি গৃহীত হয় কট্টর-ডানপন্থী ভক্স দলের বিরত থাকা এবং বামপন্থী দলগুলোর বিরোধিতার মধ্য দিয়ে।
প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ‘যেসব ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক বা সামাজিক কার্যক্রম আমাদের পরিচয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, সেগুলো স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নিজে আয়োজিত না হলে সেগুলোর জন্য পৌর ক্রীড়া স্থাপনা ব্যবহার করা যাবে না।
’
স্থানীয় ভক্স দল এক্সে (পূর্বে টুইটার) লিখেছে, ‘ভক্স-এর কল্যাণে স্পেনের পাবলিক স্পেসে ইসলামিক উৎসব নিষিদ্ধ করার প্রথম পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। স্পেন খ্রিস্টান জনগণের ভূমি ছিল এবং থাকবে।’
স্পেনের ইসলামিক সংগঠনগুলোর ফেডারেশনের সভাপতি মুনির বেনজেল্লুন আন্দালুসি আজহারি দেশটির প্রধান পত্রিকা এল পাইসকে বলেন, ‘এই প্রস্তাবনা ইসলামবিদ্বেষী এবং বৈষম্যমূলক।’ তিনি বলেন, ‘তারা অন্য কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে কিছু করছে না, শুধু আমাদের ধর্মকে লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে।
স্পেনে যা ঘটছে, তাতে আমরা বিস্মিত। ৩০ বছর পর এই প্রথম আমি ভীত বোধ করছি।’
জুমিলার মোট জনসংখ্যা প্রায় ২৭ হাজার, যার মধ্যে প্রায় ৭.৫ শতাংশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ থেকে আগত। এই সিদ্ধান্ত স্পেনের সংবিধানের ১৬ নম্বর অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
যেখানে বলা হয়েছে, ‘ব্যক্তি ও সম্প্রদায়ের মতবাদ, ধর্ম ও উপাসনার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। শুধু আইন দ্বারা সুরক্ষিত জনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজন ছাড়া এ স্বাধীনতায় কোনো বাধা দেওয়া যাবে না।’
মুরসিয়ার সমাজতান্ত্রিক দলের নেতা ফ্রান্সিসকো লুকাস এক্সে লেখেন, ‘ক্ষমতার লোভে পিপলস পার্টি সংবিধান লঙ্ঘন করছে এবং সামাজিক সংহতি বিপন্ন করছে।’
জুমিলার সাবেক সমাজতান্ত্রিক মেয়র জুয়ানা গুয়ারডিওলা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘তারা পরিচয় বলতে কী বোঝাচ্ছে? আর এই অঞ্চলের শতাব্দীপ্রাচীন মুসলিম ঐতিহ্য কি তবে অস্বীকার করা হবে?’
প্রসঙ্গত, জুমিলা একসময় রোমান সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। পরে অষ্টম শতকে আরবদের অধীনে আসে এবং কয়েক শতাব্দী ধরে আরব অধ্যুষিত ছিল।
১৩শ শতকের মাঝামাঝি খ্রিস্টান শাসক আলফন্সো দশমের নেতৃত্বে জুমিলার দখল নেয় ক্যাস্টাইল বাহিনী। যদিও প্রথমে স্থানীয় আরব শাসকের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে আলফন্সো রাজা হন, পরে তার মৃত্যুর পর ক্যাস্টাইল জুমিলা দখল করে নেয় এবং আরব শাসনের অবসান ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্পেনে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, সংবিধান লঙ্ঘন এবং জাতিগত বৈষম্য নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান