০১ মে ২০২৪, বুধবার, ০৯:৫৪:২৩ পূর্বাহ্ন
দেশে খাদ্য সংকটের কোনো শঙ্কা নেই মজুত পর্যাপ্ত
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৭-২০২৩
দেশে খাদ্য সংকটের কোনো শঙ্কা নেই মজুত পর্যাপ্ত

বাংলাদেশে খাদ্য সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই। রাশিয়ার শস্য চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানো, ভারতের চাল রপ্তানি বন্ধ করার কোনো প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে না। দেশে পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য মজুত আছে। সরকারের খাদ্য গুদামেও পর্যাপ্ত মজুত আছে। দেশের জন্য এ বছর কোনো চাল আমদানির প্রয়োজন পড়বে না। আগামীতে আমন ফসল ভালো হলে বাংলাদেশ সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বলেছেন, দেশে পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য মজুত আছে। বর্তমানে মজুতের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় খাদ্যশস্য রাখার জায়গার সঙ্কুলান হচ্ছে না। এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জনকণ্ঠকে বলেন, খাদ্যশস্য রাখার ব্যবস্থা করার জন্য তিন মাসের রেশন একবারে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এতে বেশ কিছুটা খালি হবে।

আবারও খাদ্য সংকটে পড়তে যাচ্ছে বিশ্ব! রাশিয়া শস্য চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর পর ইউরোপ, আমেরিকাসহ বেশকিছু দেশে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এরই মধ্যে ভারত বাসমতি বাদে সব ধরনের চাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জনগণকে ভাবিয়ে তুলেছে। তবে ভালো খবর হলো বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে খাদ্য ঘাটতির কোনো সম্ভাবনাই নেই। 

এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জনকণ্ঠকে বলেন, ভারত চাল রপ্তানি বন্ধ করলে আমাদের কোনো সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, এটি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতার ফসল। আমন ও বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সংগ্রহের সিংহভাগ গুদামে চলে এসেছে। ধানও পর্যাপ্ত সংগ্রহ হয়েছে। অনেকে অতিরিক্ত ধান দেওয়ার জন্য তদ্বির করছে। আগস্টের মধ্যে আশাকরি সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ পূরণ হবে।

খাদ্য মন্ত্রী বলেন, সরকারের বর্তমান মজুত ২০ লাখ মেট্রিক টন। এ সময় মজুত ১৩ থেকে ১৪ লাখ টন থাকলে সরকার স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকে। সংগ্রহ অভিযান চলমান রয়েছে। সংগ্রহ করা খাদ্যশস্য রাখার জন্য আমরা খাদ্যগুদাম খালি করতে তিন মাসের রেশন একবারে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। ইতোমধ্যে সংস্থাকে চিঠি দিয়েছি। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত অর্থবছরে দেশে মোট ১১ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ছয় লাখ মেট্রিক টন চাল সরকার আমদানি করেছে। বাকি সাড়ে চার লাখ মেট্রিক টন বেসরকারিভাবে আমদানি করা হয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, বেসরকারিভাবে মোট ১৮ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে সাড়ে চার লাখ মেট্রিক টন চাল দেশে এসেছে।

এ বিষয়ে খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, ভারত চাল রপ্তানি বন্ধ করলে আপাতত বাংলাদেশের কোনো সমস্যা নেই। দেশে এবার বোরো ফলন ভালো হয়েছে। আশাকরি আমন ফসলও ভালো হবে। তবে কোনো কারণে আমন ফসল বেশি খারাপ হলে, হয়তো কিছু পরিমাণ চাল আমদানি করা লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে আমাদের বিকল্প ব্যবস্থা আছে। প্রয়োজন হলে আমরা ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার থেকে চাল আমদানি করতে পারব। তবে মনে হয় আমদানি করার কোনো প্রয়োজন হবে না। দেশে ফলন ভালো হয়েছে, অভ্যন্তরীণ মজুত ভালো, সরকারের সংগ্রহও ভালো। সেক্ষেত্রে আপাতত চাল আমদানির কোনো প্রয়োজন হবে না।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গোটা বিশ্ব খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হয়। পরে তুরস্কের মধ্যস্থতায় রাশিয়া ও ইউক্রেনকে নিয়ে শস্য চুক্তি করা হয়। এতে মূল বিষয় ছিল আফ্রিকার মতো গরিব দেশে খাদ্যশস্য রপ্তানি করতে হবে। কিন্তু ইউক্রেন আফ্রিকার নামে ইউরোপে বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য রপ্তানি করে আসছে। যার একটা অংশ যুক্তরাষ্ট্রেও চলে যায়। এসব কারণে শস্য চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে রাশিয়া এই চুক্তির মেয়াদ নবায়ন না করে চুক্তি থেকে সরে আসে। আর রাশিয়া শস্য চুক্তি থেকে সরে আশায় বিশ্বব্যাপী আবার খাদ্য সংকটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে ইউরোপ ও আমেরিকায় খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। আবার রাশিয়া শস্য চুক্তি থেকে সরে আসায় ভারত বাসমতি বাদে সকল ধরনের চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

বাসমতি বাদে সব ধরনের চাল রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা ভারতের

চাল রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বের শীর্ষ চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত। বাসমতি ছাড়া অন্য সব ধরনের চাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি। অভ্যন্তরীণ বাজারে সহজপ্রাপ্যতা ও দাম কমানোর জন্যই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের খাদ্য ও ভোক্তাবিষয়ক মন্ত্রণালয়। দ্রুতই কার্যকর করা হবে এই আদেশ। এতে করে বিশ্ব বাজারে চালের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

চাল থেকে তৈরি ভাত বিশ্বের প্রধান খাদ্য। গত এক দশক ধরেই বিশ্ববাজারে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এ ছাড়া করোনা অতিমারি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও বৈরী আবহাওয়ায় চালের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। চাল রপ্তানি নিষিদ্ধের কথা জানিয়ে ভারতের খাদ্য ও ভোক্তাবিষয়ক মন্ত্রণালয় বলেছে, বাসমতি না এমন সাদা জাতের চাল রপ্তানি করা যাবে না, যা ভারতের মোট চাল উৎপাদনের চার ভাগের এক ভাগ। 

বিশ্বে যত চাল রপ্তানি করা হয় তার ৪০ শতাংশই আসে ভারত থেকে। দেশটির এমন পদক্ষেপের ফলে বিশ্ববাজারে বহুলভাবে ব্যবহৃত খাদ্যটির দাম বাড়তে পারে বলে এক নোটে লিখেছে ডেটা বিশ্লেষণ সংস্থা গো ইন্টিলিজেন্ট। সংস্থাটি নোটে লিখেছে, ভারতে এই সিদ্ধান্তের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তুরস্ক, সিরিয়া, পাকিস্তানসহ আফ্রিকার দেশগুলো। ইতোমধ্যে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে ভুগছে দেশগুলো।

ভারতের খাদ্য ও ভোক্তাবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বৈশ্বিক বাজারে দেশটির সাদা জাতের চালের চাহিদা আগের বছরের একই সময়ের থেকে ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। এর জেরে গত সেপ্টেম্বরে ভাঙা চাল রপ্তানি নিষিদ্ধের পাশাপাশি চাল রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ অতিরিক্ত কর আরোপ করে ভারত সরকার।

আর্থিক সংস্থা রাবোব্যাংকের বরাত দিয়ে বলা হয়, গত বছর ভারত এক কোটি তিন লাখ টন চাল রপ্তানি করে। তবে, রপ্তানি করা সব চালই ছিল সাদা জাতের। ভারতের শূন্যস্থান পূরণের সামর্থ্য নেই বিকল্প সরবরাহকারীদের কাছে। মূলত ভারতের চাল বেশি আমদানি করে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র। এই শূন্যস্থান প্রতিস্থাপনের জন্য দেশগুলোর পর্যাপ্ত সরবরাহকারী নেই।

চলতি সপ্তাহেই ইউক্রেন থেকে কৃষ্ণসাগর দিয়ে শস্য রপ্তানি চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছে রাশিয়া। এরপরই তারা জানায়, এখন থেকে ইউক্রেনীয় বন্দরগামী যে কোনো জাহাজকে সামরিক জাহাজ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। আর এতেই শস্যবাহী জাহাজ চলাচল কমে যাওয়ায় বিশ্ব বাজারে বাড়তে শুরু করেছে গম ও ভুট্টার দাম। এদিকে কৃষ্ণসাগরে সামরিক মহড়া চালিয়েছে রাশিয়ার নৌবাহিনী। শস্য চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর পর রাশিয়া জানায়, এই পথের যে কোনো জাহাজকে সামরিক জাহাজ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। 

রাশিয়া শস্য চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার ফলে খাদ্য সংকট আরও তীব্র হবে। ফলে লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। কারণ এই শস্য চুক্তির আওতায় ইউক্রেন কৃষ্ণসাগর দিয়ে খাদ্যপণ্য রপ্তানি করে থাকে।

শেয়ার করুন