২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০৫:৩২:১৮ অপরাহ্ন
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড: শততম তারিখেও অগ্রগতি নেই, নতুন তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০৮-২০২৩
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড: শততম তারিখেও অগ্রগতি নেই, নতুন তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর

তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদন অনুযায়ী সাগর-রুনি দম্পতি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন দুই ব্যক্তি। মার্কিন একটি ল্যাবকে এই দুই ব্যক্তির ছবি অঙ্কন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত তিন বছরেও ওই ছবি পাওয়া যায়নি। আর এ কারণেই ঘুরপাক খাচ্ছে চাঞ্চল্যকর এই মামলার তদন্ত।


আজ সোমবার ছিল এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের ১০০তম দিন। কিন্তু তদন্ত সংস্থা পুলিশের এলিট ফোর্স র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) প্রতিবেদন দাখিল না করায় আবার নতুন তারিখ ধার্য করা হয়েছে। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রশিদুল আলম নতুন তারিখ ধার্য করেছেন আগামী ১১ সেপ্টেম্বর।


ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের শেরেবাংলা নগর থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই আলমগীর জানান, নতুন তারিখ ধার্য হয়েছে। তদন্ত সংস্থা কোনো প্রতিবেদন দাখিল করেনি।


সাগর-রুনি হত্যা মামলার ১১ বছর হয়েছে গত ১১ ফেব্রুয়ারি। আরও সাত মাস পার হয়েছে। আদালত থেকে দফায় দফায় সময় বেঁধে দেওয়ার পরও হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটন করে প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি র‍্যাব।


২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারওয়ার এবং এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। পরদিন সকালে ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর ওই দিন রাতে নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।


চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হওয়ার পর দেশব্যাপী সাংবাদিক সমাজে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে খুনিদের চিহ্নিত করা এবং তাদেরকে বিচারের আওতায় আনার দাবি ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন আশ্বাস দিয়েছিলেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে রহস্য উদ্‌ঘাটন হবে। শুধু আশ্বাসটাই রয়ে গেছে। 


চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির প্রথমে তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক মো. জহুরুল ইসলাম। ২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ডিবি উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল আলম নতুন করে তদন্তভার নেন। এরপর উচ্চ আদালতের নির্দেশে ওই বছরের ১৮ এপ্রিল তদন্তভার র‍্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন র‍্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার মো. শফিকুল আলম। 


২০১২ সালে হত্যাকাণ্ডের পর তদন্ত ও আসামি গ্রেপ্তার নিয়ে জনস্বার্থে রিট করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ। সেই রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। জারি করা রুলে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের খুনিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চান হাইকোর্ট। 


গোয়েন্দা বিভাগের তদন্ত ব্যর্থতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে হাইকোর্ট বলেন, র‍্যাবের তদন্ত মনিটরিং করতে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করতে হবে ৷ প্রথম পর্যায়ে থানা-পুলিশের তদন্তে কোনো ব্যর্থতা আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখতে হবে৷


তবে গত সাড়ে ১১ বছরের বেশি সময় প্রমাণ হয়েছে তদন্তে থানা-পুলিশ গোয়েন্দা পুলিশ এবং র‍্যাব সব সংস্থাই ব্যর্থ। 


হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তভার ‍র্যাবের হাতে হস্তান্তরের পর প্রথম প্রথম প্রতি ধার্য তারিখে তদন্তের একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হতো। এখন আর ওই ধরনের কোন প্রতিবেদনও দাখিল করা হয় না। প্রতিটি ধার্য তারিখে নথি আদালতে উপস্থাপন করার পর আদালত নতুন তারিখ কার্য করেন। এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে মামলার কার্যক্রম।


এই মামলার নথি থেকে দেখা যায়, গত বছরের ৫ অক্টোবর তদন্ত কর্মকর্তা র‍্যাব সদর দপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার মো. শফিকুল আলম আদালতে অগ্রগতি বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন।


প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ‘মামলাটি ২০১৯ সালের ৭ জুলাই থেকে আমি তদন্ত করে আসছি। মামলাটি যথাযথভাবে তদন্তের লক্ষ্যে জব্দকৃত আলামত ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আদালতের অনুমতিক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের আইএফএস (ইন্ডিপেনডেন্ট ফরেনসিক সার্ভিস) বরাবর পাঠানো হয়। ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, পূর্বে পাঠানো আলামতগুলো এবং গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বুকাল সোয়াব পর্যালোচনায় অজ্ঞাতনামা দুই পুরুষ ব্যক্তির ডিএনএ পাওয়া গেছে। তদন্তকালে ওই অজ্ঞাতনামা দুই ব্যক্তিকে (পুরুষ) চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে প্যারাবন স্ন্যাপশট নামে মার্কিন অপর একটি ডিএনএ ল্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ডিএনএ থেকে অপরাধী/জড়িত ব্যক্তির ছবি প্রস্তুত করার সক্ষমতা রয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানটির।’ 


তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে পূর্বের প্রতিষ্ঠান আইএফএস-এ’র সমন্বয়পূর্বক ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ছবি প্রস্তুতের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। আইএফএসসে সংরক্ষিত ও বর্ণিত ডিএনএ প্যারাবন স্ন্যাপশট নামের প্রতিষ্ঠানকে সরবরাহের সার্ভিস চার্জ হিসেবে ১ হাজার ২০০ মার্কিন ডলার ফি নির্ধারণ করায়, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণপূর্বক ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে নির্ধারিত অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর আইএফএসস-কে র‍্যাব কর্তৃপক্ষ থেকে উল্লিখিত পরীক্ষার অগ্রগতির বিষয়ে মতামত প্রদানের জন্য ই-মেইল পাঠানো হয়। আইএফএস ল্যাব কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে এখনো কোনো মতামত প্রদান করেনি। ডিএনএ প্রযুক্তির মাধ্যমে সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহের প্রচেষ্টাসহ মামলার তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত আছে।’ এরপর আর কোনো প্রতিবেদন নেই নথিতে। 


ঘটনার কিছুদিনের মধ্যে কয়েকজন সমৃদ্ধ আসামি গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কেউ কেউ জামিনে আছেন আবার কেউ কেউ এখনো কারাগারে রয়েছেন।


শেয়ার করুন