২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৪:৪৯:৩৭ পূর্বাহ্ন
সাড়ে ৪ বছরে ৩ হাজার ৯ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৮-২০২৩
সাড়ে ৪ বছরে ৩ হাজার ৯ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ

দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জন এবং মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে থাকা অপরাধলব্ধ সম্পদ ক্রোক বা অবরুদ্ধ করার ক্ষমতা রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। এই ক্ষমতা প্রয়োগ করে গত সাড়ে চার বছরে আদালতের মাধ্যমে ৩ হাজার ৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকার বেশি মূল্যের সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করেছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি।


দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা ২০০৭-এর বিধি ১৮ (ক) মোতাবেক অনুসন্ধানকারী বা তদন্তকারী কর্মকর্তারা অপরাধলব্ধ বা জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ ক্রোক বা অবরুদ্ধ করে থাকেন। এ বিধিমালার বিধি ১৮ (খ) অনুযায়ী, ক্রোক বা অবরুদ্ধ আদেশের মেয়াদের বিষয়ে বলা হয়েছে, অপরাধ আমলে গ্রহণের আগে ২৭০ কার্যদিবস এবং অপরাধ আমলে নেওয়া হলে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত ক্রোক বা অবরুদ্ধ আদেশ বলবৎ থাকবে। এই বিধিমালার বিধি ১৮ (গ) অনুযায়ী ক্রোককৃত বা অবরুদ্ধকৃত সম্পত্তিতে রিসিভার নিয়োগের বিধান রয়েছে। তবে মানিলন্ডারিংয়ের অনুসন্ধান বা তদন্তের ক্ষেত্রে কোনো সম্পত্তি ক্রোক বা অবরুদ্ধ করা হলে তার মেয়াদ মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বজায় থাকবে। এ বিষয়ে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, কোনো অনুসন্ধান বা তদন্ত কর্মকর্তার কাছে


যখন বিশ^াস জন্মাবে যে, অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অপরাধলব্ধ অর্থ হাতবদল বা স্থানান্তর হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, তখন সেই সম্পদ ক্রোক বা অবরুদ্ধ করার জন্য কমিশনের অনুমোদন নেবেন। এরপর তা আদালতের আদেশের মাধ্যমে সেই সম্পদ ক্রোক বা অবরুদ্ধ করে থাকেন। ক্রোক বা অবরুদ্ধ হওয়া সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য আদালতের আদেশেই রিসিভার নিযুক্ত হয়ে থাকে বলে জানান তিনি।


সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধসংক্রান্ত দুদকের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ১০টি আদেশে অনুসন্ধান ও তদন্ত পর্যায়ে ২৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকার সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে। এ ছাড়া একই সময়ে ১৫টি আদেশে ১১৮ কোটি ৪৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকা মূল্যের ব্যাংক হিসাব, এফডিআর, সঞ্চয়পত্র ও বন্ড অবরুদ্ধ করা হয়েছে। ক্রোক করা সম্পদের মধ্যে রয়েছে সাড়ে চার একর জমি, ১২টি ফ্ল্যাট, ১৪টি দোকান, ২টি প্লট, ১টি বাড়ি ও ২টি কমার্শিয়াল স্পেস। অপরদিকে অবরুদ্ধ করা সম্পদের মধ্যে রয়েছে- ৮০টি ব্যাংক হিসাব, ৫১টি সঞ্চয়পত্র ও বন্ড, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৭টি বিও হিসাব। একই সময়ে ৪টি আদেশে ৫টি ব্যাংক হিসাবের ৯৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকার অবরুদ্ধ করা সম্পদ অবমুক্ত করা হয়েছে।


এর আগে গত বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালে ২২টি আদেশে ৫৮৫ কোটি ৯২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা মূল্যের সম্পদ ক্রোক করা হয়। আর ২৭টি আদেশে ২২৪ কোটি ৭৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের সম্পদ অবরুদ্ধ করেছে দুদক। ক্রোক হওয়া এই সম্পদের মধ্যে রয়েছে ১১৪ একর জমি, ২৭টি বাড়ি ও ভবন, ১৯টি ফ্ল্যাট, ১১টি গাড়ি, ৪টি নৌযান, ১টি প্লট ও ১টি দোকান রয়েছে। আর অবরুদ্ধ হওয়া সম্পত্তি হলো ১ হাজার ৪৪৮টি ব্যাংক হিসাব ও ১১টি এফডিআর। অন্যদিকে ২০২২ সালে অবরুদ্ধ হওয়া সম্পদের মধ্যে ৩টি আদেশে ৭টি ব্যাংক হিসাবের ৯১ লাখ ৭১ হাজার টাকার সম্পদ অবমুক্ত করা হয়।


২০২১ সালে আদালতের আদেশে ৩২৬ কোটি ৭১ লাখ ৪৫ হাজার ৬২৮ টাকার সম্পদ ক্রোক ও ১ হাজার ১৬১ কোটি ৫৮ লাখ ১৪ হাজার ৪৮০ টাকার সম্পদ অবরুদ্ধ করা হয়। এর আগের বছর ২০২০ সালে ১৮০ কোটি ১১ লাখ ৯১ হাজার ৭৪৬ টাকার সম্পদ ক্রোক এবং ১৫২ কোটি ৯২ লাখ ৮৬ হাজার ৪৯৬ টাকার সম্পদ অবরুদ্ধ করা হয়। এর আগে ২০১৯ সালে ১১৫ কোটি ৬৬ লাখ ৩০ হাজার টাকার সম্পদ ক্রোক এবং ১১৮ কোটি ৫৯ লাখ ৬৫ হাজার ৮৭৬ টাকার সম্পদ অবরুদ্ধ করা হয়।


দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালার ১৮ (খ) বিধি অনুযায়ী, অপরাধ আমলে নেওয়ার আগে ক্রোক বা অবরুদ্ধের মেয়াদ ২৭০ কার্যদিবস। এর পরও যদি অপরাধ আমলে না নেওয়া হয়ে থাকে অথবা কমিশন বা কমিশনের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার আবেদনে আদালত যুক্তিসঙ্গত বিবেচনায় মেয়াদ বৃদ্ধি করলে ক্রোক-অবরুদ্ধ বহাল থাকবে। একই বিধির ১৮ (গ)-এর উপবিধি (২)-এর অধীনে নিযুক্ত রিসিভার সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি, কৃষিজমি হলে চাষাবাদ করে, বাড়ি বা ফ্ল্যাট হলে ভাড়া আদায় করে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা বাণিজ্যিক যানবাহন হলে পরিচালনার ব্যবস্থা গ্রহণ করে ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণারেক্ষণ করবেন। একই সঙ্গে আয়-ব্যয়ের হিসাব রিসিভার সংরক্ষণ করবেন এবং আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রতিবছর আদালতে দাখিল করবেন। উপবিধি (৩)-এর অধীন নিযুক্ত রিসিভার যথাযথভাবে সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন কিনা তা কমিশন পর্যবেক্ষণ ও তদারকি করবেন। দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ইউনিট থেকে ক্রোক ও অবরুদ্ধ সম্পদ ব্যবস্থাপনা করা হয়ে থাকে।


শেয়ার করুন