২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০৩:৫১:৩০ অপরাহ্ন
কী আছে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া কিম জং উনের বিলাসবহুল ট্রেনে
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৯-২০২৩
কী আছে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া কিম জং উনের বিলাসবহুল ট্রেনে

উত্তর কোরিয়া থেকে একটি বিলাসবহুল ট্রেনে করে রাশিয়ার বন্দরনগরী ভ্লাদিভস্তকের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছেন কিম জং উন। এই যাত্রায় তাঁর সময় লাগবে প্রায় ২০ ঘণ্টা। এই সময়ের মধ্য তাঁকে বহনকারী ট্রেনটি পাড়ি দেবে প্রায় ১ হাজার ১৮০ কিলোমিটার দূরত্ব। প্রায় কমবেশি সবারই আগ্রহ রয়েছে, কেন বিদেশ সফরের সময় ট্রেনকে প্রাধান্য দেন কিম জং উন এবং কী আছে তাঁর বিলাসবহুল ট্রেনে।


আধুনিক যুগে হলেও কিম জং উনের ট্রেনের সর্বোচ্চ গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় মাত্র ৫০ কিলোমিটার, যেখানে লন্ডনের সাধারণ উচ্চগতির ট্রেনগুলোর গতি প্রতি ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটারের বেশি। তবে অন্যান্য ট্রেনের তুলনায় এই ট্রেনের বিশেষত্ব হলো—এটি খুবই শক্তিশালী ধাতব পাত দিয়ে মোড়ানো; যা কিনা রকেট, গুলি ফিরিয়ে দিতে সক্ষম। কেবল নিরাপত্তাই নয়, ট্রেনটিতে পাওয়া যায় দারুণ সব খাবার। রেড ওয়াইন থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন পদের খাবার থেকে শুরু করে তাজা লবস্টার—সবই মেলে এতে। 


কিম জং উনের ট্রেনের কোরীয় নাম হলো তাইয়েংহো, যার বাংলা অর্থ হলো সূর্য। উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল সুংয়ের প্রতীকী নামও হলো তাইয়েংহো।


কিম জং উনের ট্রেনপ্রীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। তাঁর দাদা কিম ইল সুং, তাঁর বাবা কিম জং ইল দুজনেই বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে ট্রেন ব্যবহার করতেন। কিম ইল সুং ভিয়েতনাম এবং পূর্ব ইউরোপ সফর করেছিলেন ট্রেনযোগে। কিম জং ইলের বিমানে সফরের ব্যাপারে ব্যাপক ভীতি ছিল। তাই তিনিও বাবার মতো ট্রেনকেই প্রাধান্য দিতেন। ২০০১ সালে তিনি প্রায় ১০ দিন সময় ব্যয় করে ট্রেনযোগে মস্কো সফরে গিয়েছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে।


কিম জং ইলের সেই সফরে সঙ্গী ছিলেন রুশ সশস্ত্রবাহিনীর কমান্ডার কনস্তান্তিন পুলিকোভস্কি। সেই ট্রেনযাত্রার বিষয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সেখানে রুশ, চীনা, কোরীয়, জাপানি এমনকি ফরাসি খাবারও পাওয়া যেত।’ তিনি জানান, কিমের ট্রেনে তাজা লবস্টারও পাওয়া যেত। কেবল তাই নয়, ট্রেনের সবকিছুই পাওয়া হতো তাজা এবং সুস্বাদু। ফ্রান্সের বোর্দো থেকে আনা হতো রেড ওয়াইন এবং প্যারিস থেকে আনা হতো বারগ্যান্ডি ওয়াইন।


তুলনা করতে গিয়ে কনস্তান্তিন পুলিকোভস্কি বলেন, ‘এমনকি মহামান্য পুতিনের ট্রেনেও কিম জং ইলের ট্রেনের সমান আরামদায়ক ব্যবস্থা নেই।’ 


রাশিয়ার অপর এক কূটনীতিবিদ গিওর্গি তলোরায়াও কিমের ট্রেনে ওঠার অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। ২০১৯ সালে তিনিও উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের সফর সঙ্গী হয়ে পিয়ংইয়ং থেকে মস্কো পর্যন্ত গিয়েছিলেন। তিনি জানান, ট্রেনের খাবারের ব্যাপারে খুবই উন্নাসিক কিম জং উন। নিজের সব পছন্দের খাবারই তিনি রাখতেন ট্রেনে। যেমন—সেবারের মস্কো সফরের সময় ট্রেনে গাধার মাংস ও অ্যাবালোন (একধরনের শামুক) খাওয়ানো হয়েছিল এবং এই মাংস ও অ্যাবালোন তাজা রাখার জন্য পিয়ংইয়ং থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছিল।


দুই রুশ কূটনীতিবিদই জানান, ট্রেনটিতে মনোরঞ্জনের জন্য অভিনেতা, নর্তকী এবং গায়কের উপস্থিতি ছিল। 


দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদমাধ্যম চোসুন ইলবো ২০০৯ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, সাঁজোয়া সেই ট্রেনের জন্য ৯০টি কামরা সব সময় সজ্জিত রাখা হয়। এসব বগিতে অন্যান্য যানও বহন করা হয়। এর মধ্যে কিমের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য অস্ত্র সজ্জিত দুটি মার্সিডিজও থাকে। 


গাঢ় সবুজের মধ্যে হলুদ ডোরা কাটা ট্রেনটিতে একাধিক কনফারেন্স রুম, ছোট থিয়েটার, একাধিক বেডরুম রয়েছে। এ ছাড়া ট্রেনটিতে স্যাটেলাইট ফোনের সংযোগ রয়েছে। পাশাপাশি বড় আকারের টেলিভিশন সেটও সংযুক্ত রয়েছে বিভিন্ন কামরায়। এ ছাড়া একাধিক কামরায় লাল চামড়ায় মোড়ানো চেয়ার রয়েছে যেখানে যাত্রীদের মতো বসেই ট্রেনে ভ্রমণ করার সুযোগ রয়েছে। 


কিমের নিরাপত্তা দিতে ট্রেনটির মধ্যে একটি বাহিনীও রয়েছে। এই বাহিনী অন্যান্য প্রেসিডেন্টকে নিরাপত্তা দেওয়া বাহিনীর তুলনায় অনেকাংশেই বড়। 


চোসুন ইলবো পত্রিকায় বলা হয়েছে, সম্ভাব্য হুমকি খতিয়ে দেখতে অন্তত ১০০ জনের একটি নিরাপত্তা এজেন্টের দল ট্রেনটি পৌঁছানোর আগেই সামনের স্টেশনগুলোতে পৌঁছে যায়। এ ছাড়া এটি যেসব স্টেশনের মধ্য দিয়ে যায়, সেখানে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়, যেন অন্যান্য রেল রুটগুলো দিয়ে অন্য কোনো ট্রেন চলাচল করতে না পারে। সোভিয়েত নির্মিত দুটি সামরিক হেলিকপ্টার ট্রেনের যাত্রাপথে টহল দিয়ে বেড়ায়। ট্র্যাকগুলো নিরাপদ কি না, তা নিশ্চিত করতে কিমের আগে আরেকটি ট্রেন থাকে। শুধু তাই নয়, কিমের ট্রেনের পেছনে থাকে তৃতীয় আরেকটি ট্রেন। এই ট্রেনে মূলত বিভিন্ন কর্মী এবং দেহরক্ষীরা থাকেন। পাশাপাশি কোনো সম্ভাব্য আক্রমণের দিকেও তারা নজর রাখেন। 


উত্তর কোরিয়ায় অন্তত ২০টি স্টেশন রয়েছে যেগুলো শুধু বিশেষ ওই ট্রেনই ব্যবহার করে। 


জানা যায়, কিমের বাবা কিম জং ইল বিমানে চড়তে ভয় পেতেন। তাই কোথাও সফরে গেলে ট্রেনই ছিল তার ভরসা। কিমের দাদা উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল সাংও বিদেশ সফরে প্রায়ই ট্রেন ব্যবহার করতেন।


শেয়ার করুন