আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অন্তত ১০০ জন সংসদ সদস্য মনোনয়ন পাচ্ছেন না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।
তারা বলছেন, বিতর্কিত ও জনবিচ্ছিন্ন এমপিদের আর মনোনয়ন দেবে না দল। ওই আসনগুলোতে যারা জিততে পারবেন, তারাই হবেন নৌকার কাণ্ডারি।
আসন ভাগ হতে পারে জোটের মধ্যেও, এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন নেতারা। তবে সেটা নির্ভর করছে নির্বাচনে বিএনপির অবস্থানের ওপর।
বর্তমান একাদশ সংসদের মেয়াদ প্রায় শেষ। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে এ বছরের নভেম্বর থেকে আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যে।
নির্বাচন কমিশনও জানিয়েছে, আগামী নভেম্বরে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে। ভোট হবে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে।
নির্বাচন এগিয়ে আসায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও তার জোটসঙ্গী দলগুলোর নেতারা নির্বাচনমুখী হতে শুরু করেছেন।
বর্তমান সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি মনোনয়নপ্রত্যাশী দলের অন্য নেতারাও স্থানীয়ভাবে জনসংযোগ করছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আছেন ২৬২ জন। কেন্দ্রীয় ১৪ দলে থাকা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সংসদ সদস্য ১১ জন।
আগামী নির্বাচনের জন্য এই সংসদ সদস্যরা কতটা জনপ্রিয়, তা যাচাই করেছে আওয়ামী লীগ। সে লক্ষ্যে জরিপ করা হয়েছে একাধিক।
নেতারা জানান, এদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশের অবস্থা খুবই নাজুক। তাদের কেউ জনবিচ্ছিন্ন, কারও রয়েছে সাংগঠনিক দুর্বলতা। অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে। এবার তারা নৌকার মনোনয়ন পাবেন না।
এর আগের নির্বাচনগুলোতেও একই পথে হেঁটেছে আওয়ামী লীগ। এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ৫৬ জন সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী বাদ পড়েন। তার আগে, ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনেও বাদ পড়েন ৬ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ৪৯ জন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘তিন ভাগের একভাগ আসনে পরিবর্তন হতে পারে বলে আমি মনে করি।
কোনও এমপি যদি তার এলাকায় জনপ্রিয়তা হারায়, তাকে নমিনেশন দেয়া হবে না। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় আমাদের কমপক্ষে ১০ জন জনপ্রিয় নেতা আছেন, যারা বিভিন্ন সময় তৃণমুল থেকে উঠে এসেছেন।’
নেতারা জানান, আগামী নির্বাচনে বেশ কয়েকজন তরুণ নৌকার প্রার্থী হবেন। কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্যও এবার গুরুত্ব পাবেন। তবে বিএনপির নির্বাচনে আসা না আসার ওপরও প্রার্থী চূড়ান্ত করার বিষয়টি নির্ভর করছে।
বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। এ বছর যে পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেগুলোও বর্জন করেছিল বিএনপি। দলটি বলছে, বর্তমান সরকারের অধীনে তারা কোনও নির্বাচনেই অংশ নেবে না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল ও সরকারের পদত্যাগে দাবিতে একদফা দাবি আদায়ের নানা কর্মসূচির মাধ্যমে রাজপথে আছে তারা।
অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি উড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে রায় দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। সে রায়কে পাশ কাটিয়ে এ ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার সুযোগ নেই।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, জোট না মহাজোট হয়ে নির্বাচন করবে আওয়ামী লীগ তা এখনও নিশ্চিত নয়।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘আমাদের তো এখানে দুটি জোট। একটি হলো আমাদের ১৪ দলীয় জোট, আরেকটি হলো মহাজোট। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে মহাজোট হতে পারে।
বিএনপি না আসলে সেক্ষেত্রে ১৪ দলীয় জোট। বাহিরের যারা আছে তাদের নিয়ে আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় জোট থাকবে।’
মুক্তিযুদ্ধ, গণতন্ত্র এবং অসাম্প্রদায়িক আদর্শের ভিত্তিতে ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত হয় রাজনৈতিক জোট কেন্দ্রীয় ১৪ দল। আওয়ামী লীগ ছাড়াও এই জোটে আছে, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), গণতন্ত্রী পার্টি, সাম্যবাদী দল, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, গণ-আজাদী লীগ, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন ও জাতীয় পার্টি (জেপি)।
২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সঙ্গে জাতীয় পার্টি এবং আরও কয়েকটি দলকে নিয়ে গঠিত হয় বৃহত্তর জোট মহাজোট।