২৭ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ০৯:২২:৫২ পূর্বাহ্ন
দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম সার কারখানার উদ্বোধন আজ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-১১-২০২৩
দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম সার কারখানার উদ্বোধন আজ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ ১৯ বছর পর আজ রোববার নরসিংদী যাচ্ছেন। উদ্বোধন করবেন দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহত্ ‘ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা’। এর মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে সারের ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি আমদানি নির্ভরতা কমাতে নতুন যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। এখান থেকে বছরে উৎপাদন হবে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান হবে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের। আজ বেলা সাড়ে ১১টায় হেলিকপটারযোগে ঢাকা থেকে ঘোড়াশালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন প্রধানমন্ত্রী। বেলা ১২টায় ফার্টিলাইজার প্ল্যান্টটি ঘুরে দেখবেন। একটি পয়েন্টে প্রধানমন্ত্রীকে সংক্ষিপ্ত ব্রিফ দেওয়া হবে। পরে সার কারখানা চত্বরে আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রাখবেন এবং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্পসহ ১১টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা উদ্বোধন উপলক্ষে প্রকাশিত স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্ত করবেন প্রধানমন্ত্রী। দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে নরসিংদী মোছলেহ উদ্দিন ভুঁইয়া স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন তিনি। জনসভায় ৭ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটানোর টার্গেট। জনসভা শেষে বিকাল ৫টায় সাটিরপাড়া কালী কুমার ইনস্টিটিউশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে নির্মিত হেলিপ্যাড থেকে হেলিকপটারযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী। বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে তার ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।    


সবশেষ ২০০৪ সালে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ১৯ বছর পর আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর নরসিংদী আগমনে খুশি দলীয় নেতাকর্মীরা। জেলা জুড়ে উৎসবের আমেজ, সাজ সাজ রব। সড়ক মহাসড়কের আশপাশে বিল বোর্ড ব্যানার আর ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার আগমনকে ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন দেখছে নরসিংদীবাসী। রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী কৃষি ও শিল্প সমৃদ্ধ এই জেলার মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ ও আধুনিক স্টেডিয়াম নির্মাণের জোর দাবি জানিয়েছেন। জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী এই ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দিবেন এমন আশায় বুক বাঁধছেন জেলার ২৪ লাখ মানুষ।


এদিকে সন্ধ্যার পর আলোর ঝলকানিতে ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা সৌন্দর্য শোভা পাচ্ছে। খাদ্যঘাটতি পূরণসহ দেশের কৃষি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে ২০১৮ সালের ২৪ অক্টোবর সরকার উদ্যোগ নেয় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন, শক্তিসাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর একটি সার কারখানা নির্মাণের। এরপর ২০২০ সালের ১০ মার্চ ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। যার দায়িত্ব পায় সিসি সেভেন নামে একটি চীনা এবং জাপানের মিত্সুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। দুই প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে ২০২৩-এর ডিসেম্বরে এর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই মাস আগেই এর কাজ পুরোপুরি শেষ হয়ে পরীক্ষামূলক সার উৎপাদন করছে কারখানাটি। দুই মাস আগে এই সার কারখানাটি চালু হওয়ায় ৩৫০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত সার উৎপাদন হবে। নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় ১১০ একর জমির ওপর নির্মিত এই প্রকল্পের ব্যয় হয়েছে ১৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। প্রতিদিন এখান থেকে ২ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদনে সক্ষম দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ অত্যাধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর সার কারখানাটি।


শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, ‘ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার’ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ সার কারখানা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। যা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় বিরাট ভূমিকা রাখবে। বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করবে। সার আমদানির ওপর নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি কারখানাটি দেশের কৃষি উৎপাদন, কৃষি অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্যে ইতিবাচক অবদান রাখবে। শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা জানান, এ কারখানায় কম গ্যাস দিয়ে বেশি সার উৎপাদন করা যাবে। অর্থাৎ পুরোনো দুটি কারখানায় যে গ্যাস ব্যবহার করা হতো, সেই একই পরিমাণ গ্যাস দিয়ে নবনির্মিত কারখানাটিতে প্রায় তিন গুণ (বার্ষিক ৯ লাখ ২৪ হাজার টন) সার উৎপাদন করা সম্ভব হবে। 


ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজারের প্রকল্প পরিচালক মো. রাজিউর রহমান মল্লিক জানান, এত বড় লেটেস্ট টেকনোলজি বিদেশিরা করে দিয়ে গেল। জাপানিজ কনসালট্যান্টদের মাধ্যমে আমাদের দেশের প্রত্যেকটা অফিসার, অপারেটরকে ট্রেনিং দিচ্ছি দেশে এবং বিদেশে। বর্তমানে অপারেশন সিস্টেম আমাদের দেশের লোকেরা চালাচ্ছে, তারা (বিদেশিরা) দাঁড়িয়ে থাকেন। এতে করে আমাদের দেশের লোকদের কনফিডেন্স গ্রো হচ্ছে, কোনোরকম ভুল হলে তারা সেটা ধরিয়ে দিচ্ছেন, দেখিয়ে দিচ্ছেন। হাতে-কলমে ট্রেনিং দিচ্ছেন। আমাদের অফিসার, অপারেটররা ক্যাপাবল, তারা তাদের সামর্থ্য দেখাচ্ছে, তাদেরকে সাফিসিয়েন্ট ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। আমরা অলরেডি উৎপাদনে চলে গেছি। আমরা এখন ট্রায়াল রানে আছি, কোনোরকম সমস্যা হচ্ছে কি না, সবকিছুই নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। ট্রায়াল রান আমরা সাকসেসফুলি কমপ্লিট করেছি। আজ প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করার পর আমরা পুরোপুরি প্রডাকশনে চলে যাব।


ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রজেক্টের জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) এ এস এম মোসলেহ উদ্দিন জানান, ‘কারখানাটিতে বিশ্বের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করায় ৩০ বছরের মধ্যে কোনো কিছুতে হাত দিতে হবে না। একই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রকৌশলীরাও ফার্টিলাইজার সেক্টরে এখন অনেক অভিজ্ঞ। যার কারণে যে কোনো সমস্যা কারখানায় হলে তা সমাধান করতে আমরা সক্ষম।’


শেয়ার করুন