২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৯:৩৩:৫৩ অপরাহ্ন
তেলের দাম হতে পারে ১৫০ ডলার
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৬-২০২২
তেলের দাম হতে পারে ১৫০ ডলার

করোনা মহামারি এবং ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বে নতুন জ্বালানি সংকট তৈরি করেছে। তেলের দাম বাড়ছে। এটা অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে তেলের দাম গ্যালন প্রতি পাঁচ ডলার ওঠানামা করছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা তেল বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়ে স্ট্র্যাটেজিক পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ থেকে সরাসরি সরবরাহ শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে তেল উত্তোলন বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছে। রিয়াদ জানিয়েছে, জুলাই বা আগস্ট আগ পর্যন্ত উত্তোলন বাড়ানো হবে না।


বিষয়টি ক্রেতাদের জন্য একটি সান্ত¾না হতে পারে। কথা হলো তেলের দাম কমছে না। মূল্যবৃদ্ধির এই ধারা চলতে থাকলে বছর শেষ হওয়ার আগেই তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১৫০ ডলারের মাইলফলক ছুঁতে পারে। ২০০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের সময়ও তেমনটি ঘটেনি। ঐ বছর তেলের দাম সর্বোচ্চ ১৪৫ ডলারে পৌঁছেছিল। মহামারির সময় লকডাউন ধাঁচের বিধিনিষেধ আরোপ করে বা অন্যান্য খরচ কাটছাট করেও বাইডেন প্রশাসন সুবিধা করতে পারছে না। তেলের মূল্যের এই যে ঊর্ধ্বগতি বিশেষজ্ঞরা তার জন্য মোটামুটি চারটি কারণ চিহ্নিত করেছেন।


প্রথম কারণ তেলের মূল্যবৃদ্ধি সত্ত্বেও তেল ও তেলজাত সামগ্রীর ব্যবহার কমেনি। ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন সত্ত্বেও ২০২২ সালের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে তেলের চাহিদা স্থিতিশীল রয়েছে। একদিকে ক্রেতাদের আস্থা পড়ে গেছে অন্যদিকে মার্কিন ক্রেতারাও বেশি করে কেনাকাটা করেছে। অর্থনীতির ভাষায় একে বলা হয় স্ট্যাগফ্ল্যাশন। যার অর্থ একদিকে জিনিষের দাম বাড়ছে অন্যদিকে চাহিদা না কমে বেড়েছে। জুলাই-আগস্ট মাসে পরিবহন জ্বালানির চাহিদা বাড়বে। কারণ গ্রীষ্মে গরম বাড়ার সময় আমেরিকানরা দেশের ভেতরে ছুটি কাটাতে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। তাই এ সময় জ্বালানির ব্যবহার বেড়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া চীনের মতো বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোতেও জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়বে। করোনার জন্য দুই বছরের বেশি পর্যটন খাত থমকে থাকার পর এখন চাঙ্গা হচ্ছে। চীনের বিশাল পরিমাণে জ্বালানি মজুত রাখার সামর্থ্য আছে এবং এই মজুত থেকে মহামারিকালে চাহিদা পূরণ করা হয়েছে। সেই মজুত এখন ফুরিয়ে এসেছে, স্বাভাবিকভাবেই আগামী মাসগুলোতে জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়বে।


দ্বিতীয় কারণ হিসেবে বলা যায়, অশোধিত তেল উত্তোলনের পর তা শোধনের পর ব্যবহার উপযোগী করা কিছুটা সময় সাপেক্ষ। জ্বালানি তেল ছাড়াও অশোধিত তেলের বহু উপজাত রয়েছে, অনেক পণ্য সামগ্রী এ থেকে তৈরি হয় যার জন্য দরকার হয় বিভিন্ন রকম রাসায়নিক দ্রব্য ও প্রক্রিয়া। শোধনাগারগুলো চাইলেই দ্রুত তা করতে পারে না। তাছাড়া একেকটি শোধনাগার একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একটি তেলজাত পণ্য শোধন করে। রাতারাতি প্রক্রিয়া বা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা যায় না। মহামারির সময় শোধনাগারগুলো পূর্ণ ক্ষমতায় ব্যবহার করা হয় নাই। বহু শোধনাগারে কাজ হয়নি। শোধনাগার অব্যবহৃত পড়ে থাকলে কার্যক্ষমতা কমে যায়। মহামারির আগে ২০১৯ সাল থেকেই তেলের চাহিদা কমে যাওয়ায় বৈশ্বিক তেল শোধনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় এখন ঐসব শোধনাগার পূর্ণ ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনা সঙ্গত কারণেই একটি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার হবে।


তেলের মূল্য বৈশ্বিক অর্থনীতিকে কতটা নাড়া দিতে পারে ১৯৭০ এর দশকের তেল সংকট সেটি দেখিয়ে দিয়েছে। ঐ সংকট শিখিয়েছে কীভাবে তেল ও তেলজাত পণ্য ভবিষ্যৎ প্রয়োজন পূরণের জন্য মজুত করে রাখতে হয়। তবে অভিজ্ঞতা প্রমাণ করেছে তেল মজুত খুব দ্রুতই ফুরিয়ে আসে। এই বিষয়টিকে তেলের মূল্যবৃদ্ধির তৃতীয় কারণ হিসেবে চিহ্নিত কর যায়। ভবিষ্যৎ ক্রেতাদের আগাম অনুমান তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে কাজ করে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। একটি নির্দিষ্ট সময়ে সংরক্ষণাগারে কি পরিমাণ মজুত ঢোকানো বা বের করা হচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করে তারা ভবিষ্যৎ দাম নিরূপণের চেষ্টা করে। ফলে মজুত ভাণ্ডার বেশ তাড়াতাড়ি খালি হয়। এ থেকে চতুর্থ কারণটির ধারণা পাওয়া যায়। স্বাভাবিক সময়ে যখন বাজারে চাহিদা ঊর্ধ্বমুখী থাকে না ভাবিষ্যৎ ক্রেতাদের প্রভাবে উত্তোলন বাড়িয়ে সরবরাহ লাইনে পাঠান হয়।


তেল শিল্পের অচলাবস্থা কাটাতে সবার আগে দরকার বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা। মহামারির সময় এই খাতে বিনিয়োগ অনেক কমে গেছে। সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেকের দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ২০ লাখ ব্যারেল ছিল। তবে এই জোট বর্তমানে প্রতিদিন ৬ লাখ ব্যারেল উৎপাদন করছে। জুলাই-আগস্টে উৎপাদন বাড়ানোর কথা বলা হলেও সেটি ২০ লাখ ব্যারেলে যাবে না বলেই মনে হয়। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি তেলের দাম বাড়ার দিকেই ইঙ্গিত করে। প্রশ্ন হলো এটি কতদূর উঠতে পারে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা এটি ব্যারেল প্রতি ১৩০-১৫০ ডলারের মধ্যে ওঠানামা করবে


শেয়ার করুন