অর্থ সংকটের কারণে সার ও বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকির অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না সরকার। ফলে অর্থাভাবে সার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ও বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো ব্যাংকের ঋণ শোধ করতে পারছে না। এ অবস্থায় ব্যাংকের দেনা পরিশোধে বিশেষ ট্রেজারি বন্ড ইস্যুর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক ও বেসরকারি খাতের আইএফআইসি ব্যাংকের অনুকূলে সারের ভর্তুকির বিপরীতে ৩ হাজার ১৬ কোটি টাকার বিশেষ বন্ড ইস্যু করেছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্যানুসারে, গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বন্ড ইস্যুর বিষয়ে সোনালী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, সার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংককে বন্ড ইস্যুর জন্য নির্দেশ দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। এরই ধারাবাহিকতায় সোনালী ব্যাংকের অনুকূলে ২ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা এবং আইএফআইসি ব্যাংকের অনুকূলে ৪৫৯ কোটি টাকার বিশেষ ট্রেজারি বন্ড ইস্যু করা হয়। এই বন্ডের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে নয় বছর।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে দুই ব্যাংকের অনুকূলে বন্ড ইস্যু করা হয়েছে। এই বন্ডের মেয়াদ হবে নয় বছর।’
ভর্তুকির বিপরীতে বন্ড ইস্যুর বিষয়টি নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরেই কাজ করছিল অর্থ বিভাগ। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষ, ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েক দফায় বৈঠক হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সোনালী ব্যাংক ও আইএফআইসি ব্যাংকের অনুকূলে বিশেষ ট্রেজারি বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে এর সূচনা হয়েছে। পরে সারসহ বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকির অর্থের বিপরীতেও অন্যান্য ব্যাংকের অনুকূলে একইভাবে বিশেষ বন্ড ইস্যু করা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে সার ও বিদ্যুৎ খাতে সরকারের ভর্তুকি বাবদ প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে সারে ১০ হাজার ৫০০ কোটি ও বিদ্যুতে ১৫ হাজার কোটি টাকা মিলিয়ে ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ভর্তুকির বিপরীতে বিশেষ ট্রেজারি বন্ড ইস্যু করতে চায় সরকার। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সংখ্যা ৪০টি। এর মধ্যে সারের ভর্তুকি বাবদ ১০টি ব্যাংক ও বিদ্যুতের ভর্তুকি বাবদ ৩০টি ব্যাংকের অনুকূলে বন্ড ইস্যু করা হবে।
এর আগেও সরকারের এ ধরনের বন্ড ইস্যুর নজির রয়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের দায়ের বিপরীতে একসময় ব্যাংকের অনুকূলে বিশেষ ট্রেজারি বন্ড ইস্যু করা হয়েছিল। বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের রাজস্ব আহরণ যদি কাঙ্ক্ষিত হারে না বাড়ে এবং পাশাপাশি ব্যাংক খাতের অনাদায়ী ঋণ পরিস্থিতি ও সরকারের ব্যয় দক্ষতার উন্নতি না হলে এ ধরনের পদক্ষেপ সরকারকে আরো সমস্যায় ফেলতে পারে।
বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইপিপিএ) প্রেসিডেন্ট ফয়সাল করিম খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আইপিপি ও সারের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতের বকেয়া পরিশোধে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। আইপিপিগুলোকে বাঁচানোর জন্য উদ্যোগের প্রয়োজন ছিল। আমরা আশা করি, এ পদ্ধতির মাধ্যমে আইপিপিগুলোর জ্বালানি ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির জন্য পর্যাপ্ত তারল্যের জোগান আসবে।’