২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৫:১৭:৪৩ পূর্বাহ্ন
চার শিক্ষকের বিদ্যালয়ে ক্লাসে হাজির চার ছাত্র
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০১-২০২৪
চার শিক্ষকের বিদ্যালয়ে ক্লাসে হাজির চার ছাত্র

পরিপাটি শ্রেণিকক্ষ। আশপাশের সব আসন ফাঁকা। সামনের দিকে তাকিয়ে এক শিশুশিক্ষার্থী। এ দৃশ্য নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার কাদরা ইউনিয়নের নন্দীরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। গত রোববার স্কুলটিতে গিয়ে সেসহ মোট চার শিক্ষার্থীর উপস্থিতি চোখে পড়েছে।


স্থানীয়রা জানান, বিদ্যালয়টির এ দৃশ্য নতুন। বর্তমানে যিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রয়েছেন, তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই শিক্ষার্থী হারাতে থাকে এই স্কুল। কমতে কমতে এখন মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৭-তে এসে ঠেকেছে। যদিও শিক্ষক আছেন চারজন।


সরকারি এই স্কুলের এমন বেহাল অবস্থার পেছনে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের অশোভন আচরণ ও অব্যবস্থাপনার পাশাপাশি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্বের কথা বলছেন স্থানীয়রা। তবে প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ, স্কুল পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানের অসহযোগিতার কারণে লোকজন তাঁদের সন্তানদের বিদ্যালয়টিতে ভর্তি করাচ্ছেন না।


রোববার বেলা ১১টার দিকে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাশেদা আক্তারসহ তিন শিক্ষক অফিসে বসে আছেন। একজন প্রাক্-প্রাথমিকের পাঠ পরিকল্পনা প্রস্তুত করছেন। আর সহকারী শিক্ষক জহিরুল আলম সকালে এসে স্বাক্ষর দিয়ে চলে গেছেন। প্রাক্-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণিকক্ষ ফাঁকা। সাংবাদিক দেখে দুই শিক্ষক তড়িঘড়ি মাঠে দাঁড়িয়ে থাকা এক শিক্ষার্থীকে প্রথম শ্রেণিকক্ষে এনে বসান। তখনো অন্য কক্ষগুলো ফাঁকা ছিল। দুপুর ১২টার দিকে চতুর্থ শ্রেণিতে দুই ও তৃতীয় শ্রেণিতে এক শিক্ষার্থী আসে।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, এক বছর আগে ছেলেকে এ স্কুলে ভর্তি করান। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে রিডিং পড়তে পারে না। এখানে লেখাপড়ার মান খারাপ। এ জন্য কেউ সন্তানদের এখানে ভর্তি করাতে চান না। সবাই আশপাশের অন্যান্য স্কুল ও মাদ্রাসায় সন্তানদের পড়াচ্ছেন।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ২০০৬ সালে অবসরে যাওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান সহকারী শিক্ষক রাশেদা। এরপর থেকে তিনি নিয়মিত ক্লাস নিতেন না। চার-পাঁচ বছর ধরে একেবারেই ক্লাস নেন না। তাঁর দায়িত্ব অবহেলার কারণে অন্য শিক্ষকেরাও নিয়মিত আসেন না। এ কারণে অনেকে তাঁদের সন্তান স্কুলটিতে দিচ্ছেন না।


অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন, পরিচালনা কমিটির সভাপতি কোনো মিটিংয়ে আসেন না। বিভিন্ন তহবিল থেকে কমিশন চান। না দেওয়ায় তিনি কমিটির অন্য সদস্যদের এবং স্থানীয় মানুষজনকে ছেলেমেয়ে স্কুলে দিতে নিষেধ করে দিয়েছেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও কমিটির সভাপতির কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কম।


কমিটির সভাপতি মানিক মিয়া বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে কাজ না করে বিভিন্ন ভুয়া ভাউচারে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেন। স্বাক্ষর না করা এবং তাঁর কথামতো ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন না করায় তিনি আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করছেন। সরকারি টাকা লুটপাটে বাধা দেওয়ায় তিনি অপপ্রচার চালাচ্ছেন।’


স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলার জেরে কমিটি ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দ্বন্দ্বের কারণে স্কুলটি শিক্ষার্থীশূন্য। স্থানীয়রা আমাকে জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষককে স্থায়ীভাবে এখান থেকে অপসারণ না করলে সন্তানদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করাবেন না।’


এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মনছুর আলী চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম, শিক্ষার্থী-সংকটসহ অনেক অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একজন ব্যক্তির জন্য একটি সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা যাবে না।


শেয়ার করুন