২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ০৩:৫৩:০৯ পূর্বাহ্ন
পাকিস্তানে সরকার গঠন করছে কে?
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০২-২০২৪
পাকিস্তানে সরকার গঠন করছে কে?

৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনও শেষ হয়নি পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের ফল ঘোষণা। সর্বশেষ প্রাপ্ত ফলাফলে ইমরান খান সমর্থিত স্বতন্ত্ররা এগিয়ে রয়েছেন। আর দ্বিতীয় অবস্থানে নওয়াজ শরীফ। আর তৃতীয় অবস্থানে আছে পাকিস্তান পিপলস পার্টি। এ অবস্থায় পিটিআই ও পিএমএলএন উভয় দলই জয়ের ঘোষণা দিয়ে সরকার গঠনের কথা বলছে। তবে ইমরান অনুসারীদের পেছনে ফেলে গদিতে বসতে জোট গঠনের তোড়জোড় শুরু করেছেন নওয়াজ শরিফ।


পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী— এখন পর্যন্ত ২৫০ আসনের ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯৯ আসনে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই পিটিআই, অর্থাৎ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সমর্থিত। ৭১ আসন নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল। বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির দল পিপিপি রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। তার দল পেয়েছে ৫৩ আসন। এছাড়া এমকিউএম ১৭ আসনে এবং অন্যান্য দল ১০টি আসনে জয়ী হয়েছে।


জানা গেছে, পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের মোট আসনসংখ্যা ৩৩৬টি। এর মধ্যে ২৬৬ আসনে সরাসরি ভোট হয়। ৭০টি আসন সংরক্ষিত। এসব আসনের মধ্যে ৬০টি নারীদের ও ১০টি সংখ্যালঘুদের। ২৬৬ আসনের একটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী গুলিতে নিহত হওয়ায় সেখানে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। ভোটগ্রহণ হয়েছে ২৬৫ আসনে। ফলে দেশটির ক্ষমতার মসনদে কারা বসছেন সেই হিসাব কষতে অপেক্ষা করতে হবে আরও ১৫ আসনের ফলাফলের জন্য।


এদিকে পাকিস্তানের গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর বলছে, গদিতে বসতে বিলাওয়াল ভুট্টোর সমর্থন চান পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। পাকিস্তানি গণমাধ্যম ডন বলছে, শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাতেই নির্বাচনে তৃতীয় সর্বোচ্চ আসন পাওয়া পিপিপি’র কো-চেয়ারম্যান আসিফ জারদারির সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি।


এরআগে, সন্ধ্যায় পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্রদের চেয়ে পিছিয়ে থেকেও বিজয় ভাষণ দেন নওয়াজ। লাহোরে পিএমএল-এনের কেন্দ্রীয় অফিস থেকে দেয়া বিজয় ভাষণে তিনি বলেন, জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে পিএমএল-এন সবচেয়ে বড় দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। পিএমএল-এন পাকিস্তানকে সংকট থেকে উদ্ধার করেছে দাবি করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতেও তার দল দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাবে।


তবে ভাষণে পিএমএল-এন নেতা স্বীকার করেন সরকার গঠনের জন্য তার দল প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। জোট সরকার গঠনের জন্য অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে খুব শিগগিরই আলোচনা শুরু করবেন বলেও জানান তিনি। এছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রাপ্ত ম্যান্ডেটকে সম্মান করেন বলেও জানান সাবেক তিনবারের এ প্রধানমন্ত্রী।


এদিকে আল জাজিরার তথ্য বলছে ২৬৬টি আসনের মধ্যে ২৫০টি আসনের ফলাফল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এরমধ্যে পিটিআইয়ের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন ৯৯টি আসন। আর নওয়াজ শরীফের মুসলিম লীগ-এন (পিএমএলএন) জয় পেয়েছে ৭১টি আসনে। বিলাওয়াল ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) পেয়েছে ৫৩টি আসন। এছাড়া অন্যান্য দল এবং স্বতন্ত্ররা পেয়েছে ২৭টি আসন। একটি আসনের ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে। ফলাফল ঘোষণার বাকি আরও ১৫ আসনের। অন্যদিকে ইমরান খানের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে গত রাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি তার একটি বক্তব্য প্রচার করা হয়। সেখানে তিনি বলেন, জাতি নজিরবিহীনভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় নির্বাচনে পিটিআই বিজয়ী হয়েছে। জানা গেছে, পিটিআইয়ের নেতারা ইমরান খানের সঙ্গে নির্বাচনের ফল নিয়ে আলোচনা করতে আজ শনিবার আদিয়ালা কারাগারে যাবেন।


পিএমএল-এন বা পিপিপির সঙ্গে জোট গড়বে না বলে জানিয়েছেন পিটিআইয়ের চেয়ারম্যান গহর আলী খান। শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) জিও নিউজকে তিনি বলেন, ‘পিএমএল-এন ও পিপিপির সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি না।’


পিটিআই–সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এগিয়ে থাকা এবারের নির্বাচনে বড় চমক। ২০১৮ সালে ব্যাপক জনসমর্থন নিয়ে পাকিস্তানে ক্ষমতায় বসেছিল পিটিআই। সামরিক বাহিনীর বিরাগভাজন হয়ে চার বছরের মাথায় দলটির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের পতন হয়। এরপর রাজনীতির মাঠে কোণঠাসা হয়ে পড়ে দলটি। মামলা–হামলা ও দমনপীড়নের মুখে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এবারের নির্বাচনী লড়াইয়ে নামতে হয় পিটিআই নেতাদের।


আল–জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনে পিটিআই–সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এগিয়ে রয়েছেন। তবে সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী তারা জাতীয় পরিষদে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ ১৩৪টি আসন পাচ্ছেন না। নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী, বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে হবে।


বিশ্লেষকদের অনেকের অভিমত, স্বতন্ত্র এই প্রার্থীরা যদি কোনোভাবে সরকারে থাকেন, তাহলে ইমরানের কারাদণ্ডের সাজা বা তার সরকারি দায়িত্বে থাকার ওপর নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করতে পারবেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণে ইমরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার যে সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশন নিয়েছে, তাকেও চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন।


শেয়ার করুন