১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০১:৪৭:০৭ পূর্বাহ্ন
চামড়ার ঋণে আগ্রহী নয় কেউ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৬-২০২৪
চামড়ার ঋণে আগ্রহী নয় কেউ

কোরবানির ঈদ এগিয়ে এলেও চামড়া খাতের জন্য এবার বিশেষ ঋণ দিচ্ছে না ব্যাংকগুলো। ৩ বছর আগের এ খাতের বিতরণ করা ঋণ ছিল যথাক্রমে ২৫৯ কোটি, ৪৪৩ কোটি এবং ৬১০ কোটি টাকা। তবে বিশেষ ঋণ বন্ধ থাকলেও ব্যাংক ও গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সাধারণ ঋণ বিতরণের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু চামড়া ব্যবসায়ীদের মাঝে বিশেষ সুবিধায় ঋণ বিতরণ না হলে চামড়া সংগ্রহে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 


বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র জানায়, সাধারণত প্রতিবছর ২ শতাংশ রেওয়াতি সুবিধার মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক চামড়া খাতে ঋণের জন্য ব্যাংকগুলোকে বিশেষ নির্দেশ দেয়। এ বছর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো মাত্র ২৭০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। এ প্রস্তাব ব্যবসায়ীরা প্রত্যাখ্যান করেছেন। শেষ পর্যন্ত প্রক্রিয়াগত জটিলতায় এবার চামড়া খাতের ঋণ বিতরণ হচ্ছে না।


বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১ সালে চামড়া খাতের জন্য মাত্র ২ শতাংশ এককালীন পরিশোধের মাধ্যমে ঋণ পুনঃ তফসিল করে ১০ বছরের জন্য ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ দেওয়া হয়। সেই সুযোগে গত বছর ব্যাংকের ঋণ বরাদ্দ ছিল ২৫৯ কোটি টাকা। ২০২২ সালে ছিল ৪৪৩ কোটি, ২০২১ সালে ৬১০ কোটি, ২০২০ সালে ৭৩৫ কোটি, এবং ২০১৯ সালে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এদিকে চামড়া খাতে সব মিলিয়ে বিতরণ করা ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর প্রায় ৯০ শতাংশই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর। 


বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান মো. শাহীন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চামড়া পচনশীল পণ্য হওয়ায় দ্রুত সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হয়। সারা দেশ থেকে বিভিন্ন আড়তের মাধ্যমে সংগৃহীত চামড়া কিনতে নগদ টাকা প্রয়োজন হয়। এ জন্য ঈদ মৌসুমে খণ্ডকালীন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া সংগ্রহ করে আড়তদারেরা। কিন্তু ট্যানারিমালিকদের নিজস্ব মূলধন দিয়ে সারা বছর ব্যবসা করলেও কোরবানির সময় বেশি বাড়তি নগদ অর্থের জন্য বিশেষ ঋণ প্রয়োজন। এবার ব্যাংকগুলো ২৭০ কোটি ঋণ দিতে আগ্রহী, যা যথেষ্ট নয়। এ জন্য গ্রাহক-ব্যাংকের সম্পর্কের বিশেষ ছাড়ে ঋণের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ চলমান রয়েছে। এখন ঈদের সময় বাকি রয়েছে। নগদ ঋণ সহায়তা না হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।’


বিটিএর তথ্য অনুযায়ী, ট্যানারিমালিক ও বাণিজ্যিক রপ্তানিকারক মিলিয়ে সংগঠনটির সদস্য প্রায় ৮০০। সারা দেশে ১ হাজার ৮৬৬টি বৃহৎ ও মাঝারি আড়ত রয়েছে। এগুলোর বাইরেও ছোট আকারে অনেক আড়ত রয়েছে, যারা মৌসুমি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে ঈদুল আজহার সময় চামড়া সংগ্রহ করে। 


জনতা ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ট্যানারি ব্যবসায়ীরা ২ শতাংশ দিয়ে ঋণ নবায়ন করতে চান না। এ কারণে ঋণের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিলেও তা বিতরণ করা সম্ভব হয় না। 


চামড়ার আড়তদার নুর ইসলাম বলেন, এ শিল্পের বেশির ভাগ কাঁচা চামড়া সংগৃহীত হয় ঈদুল আজহার সময়। কিন্তু সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে প্রতিবছর প্রায় ৩০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়। জাতীয় প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের পাশাপাশি এ খাত থেকে গত অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে প্রায় ১ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। এ জন্য চামড়া খাতে বিশেষ নজর দিতে হবে। 


বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস ব্যবসায়ী আজম মিয়া বলেন, ব্যাংকগুলো শুধু ট্যানারিমালিক ও রপ্তানিকারকদের ঋণ দেয়। কাঁচা চামড়া ব্যবসায় জড়িত অন্যদের ঋণ দেয় না। চাহিদা অনুযায়ী টাকা পেলে চামড়া নষ্ট কম হতো।


শেয়ার করুন