নামমাত্র বরাদ্দ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ৪০টি উন্নয়ন প্রকল্প। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৯৩ কোটি টাকা। কিন্তু ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২০ কোটি টাকারও কম। এক্ষেত্রে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ১ লাখ টাকা। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া, নতুন প্রকল্পের বাস্তবায়ন পর্যায় না যাওয়া, চলমান অর্থনৈতিক সংকটসহ নানা কারণে এসব প্রকল্পে সামান্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ বরাদ্দটুকু না দিলে এডিপি থেকে বাদ পড়ত এসব প্রকল্প।
জানতে চাইলে সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ বুধবার যুগান্তরকে বলেন, একটি প্রকল্প যখন নেওয়া হয় তখন এটির গুরুত্ব থাকে একরকম। তবে পরে প্রায়োরিটি চেঞ্জ হয়ে গেলে আবার অন্যরকম সিদ্ধান্ত আসে। এসব প্রকল্প যেহেতু নেওয়া হয়েছে তাই এডিপির বইতে রাখার জন্যই সামান্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। শূন্য বরাদ্দ দেওয়াটা খারাপ দেখায়। পরে আবার যখন সরকার মনে করবে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা দরকার তখন বরাদ্দ বাড়িয়ে দেবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অতীতে কখনো এমন হয়নি যে চলমান প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই এসব প্রকল্পও হয়তো চলবে। তখন মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির আশঙ্কাতো থেকেই যায়।
সূত্র জানায়, ‘বাংলাদেশ টেলিভিশনের ৬টি বিভাগীয় শহরে পূর্ণাঙ্গ টিভি কেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। ইতোমধ্যেই চলতি মাসে এটির বাস্তবায়ন মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। তবুও ‘তারকা’ চিহ্ন দিয়ে মাত্র ১ লাখ টাকা বরাদ্দসহকারে এডিপিতে রাখা হয়। কিন্তু বাস্তবায়নকাল বৃদ্ধি ছাড়া অর্থছাড় বা ব্যয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আছে। এর আগে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতেও বৈদেশিক ঋণ নির্ভর এ প্রকল্পের অনুক‚লে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ টাকা। ২০১৭ সাল থেকে প্রকল্পটি এডিপিতে যুক্ত রয়েছে। এছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, নর্দমা, ফুটপাত নির্মাণ ও উন্নয়নসহ সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্পের মোট ব্যয় ৭৩৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। ২০১৮ সাল থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ ছিল। আগামী অর্থবছরের এডিপিতে এটির অনুক‚লে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ লাখ টাকা। কিন্তু সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া আছে সাড়ে ৫ কোটি টাকা। তারকা চিহ্ন দিয়ে প্রকল্পটি এডিপিতে রাখা হয়েছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন এবং ্আধুনিক নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত সমবায় ভিত্তিক বহুতল ভবন বিশিষ্ট পলী জনপদ নির্মাণ প্রকল্পেও। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫১ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মাত্র ১ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ আছে ১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। প্রকল্পটি আওয়ামী লীগ সরকারের নতুন আইডিয়া এবং নির্বাচনি ইশতেহারের সঙ্গে যুক্ত হলেও ২০১৪ সাল থেকে কাজ চলছে। কিন্তু এখনও বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রায় অর্ধেক। জুনে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় তারকা চিহ্ন দিয়ে এটি যুক্ত করা হয়েছে এডিপিতে। এছাড়া বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০১৫ সাল থেকে এটির বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যেই কয়েক দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। আগামী অর্থবছরের জন্য ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে এটিকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। জুনেই এটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তারকা চিহ্ন দিয়ে প্রকল্পটি এডিপিতে যুক্ত করা হলেও বাস্তবায়নকাল বৃদ্ধি ছাড়া অর্থছাড় ও ব্যয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
এরকম নামমাত্র বরাদ্দ পাওয়া উলেখযোগ্য হয়েকটি প্রকল্প হলো-চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স স্থাপন প্রকল্প। পিরোজপুর জেলার ভাণ্ডারিয়া উপজেলায় নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্প। এক্সপানসন অব ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতাল, গাজীপুর ডায়াবেটিকস হাসপাতাল স্থাপন, স্টাবলিশমেন্ট অব হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল, চাঁপাইনবানগঞ্জ, থানচি-রিমাকরি-মদক-লিকরি সড়ক নির্মাণ, সীমান্ত সড়ক (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা) নির্মাণ এবং চট্টগ্রাম-রাঙামাটি জাতীয় মহাসড়ক এর হাটহাজারি থেকে রাউজান পর্যন্ত ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প। আরও আছে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় লেভেল ক্রসিং গেটগুলোর পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন, রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেটগুলোর পুনর্বাসন ও মান উন্নয়ন, মোংলা বন্দরের আধুনিক বর্জ্য নিঃসৃত তেল অপসারণ ব্যবস্থা প্রকল্প এবং বগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে পানি সরবরাহ প্রকল্প।