১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ০১:১১:১৬ পূর্বাহ্ন
আজ থেকে খোলা থাকবে সব পোশাক কারখানা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০৯-২০২৪
আজ থেকে খোলা থাকবে সব পোশাক কারখানা

দেশের তৈরি পোশাকশিল্প খাতে চলমান অস্থিরতা নিরসনে শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে মালিকপক্ষ। শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত বৈঠকে আজ শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) থেকে দেশের সব পোশাক কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।


আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি শ্রমিকনেতা ও স্থানীয় রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে কারখানাগুলোর স্বাভাবিক পরিবেশ ধরে রাখার নিশ্চয়তার আশ্বাস পাওয়ার পর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতারা। শ্রমিকরা যাতে নির্বিঘ্নে কাজে যোগদান করতে পারেন তার নিশ্চয়তাও দিয়েছেন তারা। শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবিসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন।


ব্যাপক শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে আশুলিয়ার তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে চলমান অস্থিরতা নিয়ে বিজিএমইএর কার্যালয়ে শুক্রবার দুই দফায় শিল্পমালিক, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন সংগঠনের শ্রমিকনেতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক হয়। বিজিএমইএর সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আব্দুল্লাহ হিল রাকিব, শ্রমিকনেতা মন্টু ঘোষ ও নাজমা আক্তারসহ অনেকে।


বৈঠকের পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে শ্রমিক নেতারা বলেন, তাদের দাবি যৌক্তিক হলেও এর সমাধান আন্দোলন নয়। দেশের ক্রান্তিকালে শিল্প টিকিয়ে রাখা মূল চ্যালেঞ্জ। কারণ শিল্প না বাঁচলে অনেক শ্রমিক কর্মহীন হবেন এবং দেশের অর্থনীতি ক্ষতির মুখে পড়বে। তারা বলেন, অনেক দাবি মালিকরা মেনে নিয়েছেন। কিছু দাবি মালিকপক্ষ মেনেছে। বাকিগুলো লিখিত দিলে আলোচনা করে সমাধান হবে। তাই আন্দোলন ছেড়ে শ্রমিকদের উচিত কাজে যোগ দেওয়া।


বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম একটি গণমাধ্যমকে বলেন, শ্রমিক আন্দোলন নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করতে হবে। আশুলিয়া এবং গাজীপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসংখ্যা এবং টহল বাড়ানো হবে। শনিবার (আজ) থেকে গার্মেন্টসগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে চালু রাখার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, শ্রমিক সুবিধা পেলে সবচেয়ে খুশি হবেন মালিকরা। কারাখানা চালুর সঙ্গে শ্রমিকদের দাবি মানার প্রক্রিয়াও চালু থাকবে। টিফিন ভাতা, হাজিরা বোনাস, বেতন বৃদ্ধি, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি, মাতৃত্বকালীন ছুটি, ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদসহ নানা দাবিতে গত দুই সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ

করে আসছিলেন শ্রমিকরা।


অভিযানে ১৪ জন আটক


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন পোশাক কারখানায় হামলা, ভাঙচুর ও অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগে সন্দেহভাজন ১৪ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। শুক্রবার গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) আহম্মদ মুঈদ। বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাত থেকে শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।


আশুলিয়া থেকে আটককৃতরা হলেন-নেত্রকোনা জেলার সদর থানার চকপাড়া গ্রামের মো. ইসমাইল (২৪), একই জেলার বেলবো থানার মো. আলম (২৪), টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর থানার কোদালিয়া গ্রামের ফরহাদ মিয়া (২৪), দিনাজপুর জেলার বিরল থানার আজিদপুর গ্রামের মনির হোসেন (২১), ময়মনসিংহের মোস্তাফিজুর রহমান জুলহাস (১৭), আশুলিয়ার গোরাট এলাকার মো. শাকিল (২৩), ঘোষবাগ এলাকার আসমা আক্তার (২৮), নিশ্চিন্তপুর এলাকার শিমু আক্তার, একই এলাকার কুলসুম বেগম, আশুলিয়ার পলাশবাড়ী এলাকার মোখলেছুর রহমান (৫০) ও আবু হানিফ মিয়া (৪৭)। এছাড়া সাভার থেকে আরো তিন জনকে আটক করা হয়েছে। তবে তাদের নাম-ঠিকানা জানা যায়নি।


আহম্মদ মুঈদ জানান, শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা তৈরির পাশাপাশি পোশাক কারখানায় হামলা-ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত এমন সন্দেহভাজন ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১ জনকে আশুলিয়া থেকে ও তিন জনকে সাভার এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে। এসব বিশৃঙ্খলার সঙ্গে আটকদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। যাচাই-বাছাই শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


শ্রমিক ঐক্যের সংবাদ সম্মেলন


শুক্রবার বিজিএমইএর সঙ্গে শ্রমিক নেতাদের বৈঠকের আগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় শ্রমিক ঐক্যের সভাপতি এম এ ফয়েজ বলেন, প্রায় শতভাগ পোশাক কারখানায় বেতন-ভাতার কোনো সমস্যা নেই। একের পর এক পোশাক কারখানা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন মালিকরা। এরই মধ্যে আশুলিয়া-সাভার-গাজীপুরের প্রায় দুই শতাধিক কারখানায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিছু কারখানা শ্রমিকদের মজুরি সংক্রান্ত আন্দোলনে বন্ধ হলেও বেশির ভাগ কারখানা পরিকল্পিতভাবে দুষ্কৃতকারীদের হামলা-ভাঙচুরের কারণে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে পোশাকশিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি করে বাংলাদেশের শিল্প খাত ধ্বংস করার জন্য এ সময় তিনি পোশাকশিল্প রক্ষায় সাভার, আশুলিয়া, মিরপুর, ইপিজেডসহ দেশের সব পোশাকশিল্প ফ্যাসিবাদের দোসররা উঠেপড়ে লেগেছে। এলাকায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সেনাবাহিনীকে নিরাপত্তা প্রদানের জন্য আহ্বান জানান।


সংবাদ সম্মেলনে কারখানাগুলোতে চাকরির দাবিতে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষদের পাঠিয়ে 'চাকরি চাই' স্লোগান দিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে। প্রকৃত গার্মেন্টস শ্রমিকরা কোনোভাবেই এ হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। শ্রমিকরা কখনো তাদের কারখানা বন্ধ হোক তা চায় না। আমরা অবিলম্বে গার্মেন্টস শিল্প ধ্বংসের পেছনে যারা কলকাঠি নাড়ছে এবং যারা ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।


শেয়ার করুন