২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৯:১৬:১৭ অপরাহ্ন
ভোজ্যতেল নিয়ে বড় সংকটের আশঙ্কা
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-১১-২০২৪
ভোজ্যতেল নিয়ে বড় সংকটের আশঙ্কা

চট্টগ্রামে পেঁয়াজ-আলুর পর এবার ভোজ্যতেল সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে। দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজার থেকে ভোজ্যতেল হঠাৎ উধাও হয়ে গেছে। শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কারণে ভোজ্যতেল নিয়ে বড় সংকটের আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। লিটারপ্রতি দাম বেড়েছে ৫-৬ টাকা।


চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের আমদারিকারকরা ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে দাম বাড়িয়েছেন। ফলে বাজারে ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকটের সৃষ্টি হচ্ছে। সরকার দুই দফা শুল্ক-কর কমালেও সুফল মিলছে না। বরং দাম আরও বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সংকটসহ নানা কারণে আমদানিকারকরা আগের মতো ভোজ্যতেল আমদানি করছেন না। বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দামও আগের চেয়ে বেড়েছে। এসব কারণে ভোজ্যতেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। দেশের ইতিহাসে পাম অয়েলের দাম এবারের মতো আর বাড়েনি। মূলত ইন্দোনেশিয়ার উৎপাদন সংকট, বায়ো-ডিজেলে পাম অয়েল ব্যবহারের পরিমাণ ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির বুকিং রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে গেছে।


দেশে শুল্কছাড়, খোলা বাজারে পণ্য বিক্রিসহ নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক হচ্ছে না। চাল, পেঁয়াজ ও ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম উলটো বাড়ছে। কোনো কারণ ছাড়াই দুদিনে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। কয়েক মাসের ব্যবধানে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে ৪৫-৫০ টাকা। প্রতি বস্তা চালে দাম বেড়েছে ১০০-১৫০ টাকা পর্যন্ত। তবে কিছুটা কমেছে ডিমের দাম। বেড়েছে মাছের দাম। সবজির দামও কিছুটা কমতির দিকে। কিন্তু হু হু করে বাড়ছে চালের দাম।


বাজারে বিভিন্ন পণ্যে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে দুই মাসে ছয়টি পণ্য-চাল, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, আলু ও ডিম আমদানিতে শুল্ক ছাড় করে অন্তর্বর্তী সরকার। পাশাপাশি জোরদার করা হয়েছে তদারকি। গঠন করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স।


চট্টগ্রামে বাজার মনিটরিংয়ের পরও দিন দিন অস্থির হয়ে পড়ছে ভোগ্যপণ্যের বাজার। পণ্যের দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। সরকার নির্ধারিত দাম কাগজে-কলমে থাকলেও বাজারের কোথাও এ দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। এছাড়া পেঁয়াজ, চালসহ নানা পণ্যের দাম বেড়েছে। বাড়তি দামে এসব পণ্য কিনতে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠছে। এ অবস্থায় অনেকেই পণ্য না কিনে ফিরে যাচ্ছেন।


সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্ববাজারে বুকিং দর বেড়ে যাওয়া এবং আমদানি ও সরবরাহ সংকটসহ নানা কারণ দেখিয়ে দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে প্রতি মন সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৮৭৫ টাকায়। সে হিসাবে প্রতি লিটার সয়াবিনের খুচরা পর্যায়ে দাম পড়ে ১৭১ টাকার বেশি। খুচরায় লিটারপ্রতি ৪-৫ টাকা লাভ যোগ করলে বিক্রি করতে হবে ১৭৪-১৭৬ টাকায়। কিন্তু খুচরা বাজারে সরকার ও কোম্পানিগুলোর নির্ধারিত সয়াবিনের লিটার প্রতি সর্বোচ্চ মূল্য ১৬৮ দশমিক ৫ টাকা। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকার বেশি দরে। একইভাবে আগস্টের প্রথম দিকে পাম অয়েলের মন প্রতি দাম ছিল ৪ হাজার ৮০০ টাকার মধ্যে। ওই সময়ে সয়াবিনের পাইকারি দাম ছিল মনপ্রতি ৬ হাজার টাকার মতো।


বিশ্ববাজারে বুকিং বৃদ্ধি ও দেশে আমদানি কমে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পাম অয়েলের দাম বাড়তে থাকে। শুক্রবার প্রতি মন পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৫০০ টাকায়। খুচরা পর্যায়ে এ দামের পাম অয়েল সংগ্রহ করতে আরও আরও ২০০ টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়। আর পাম অয়েলের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় সয়াবিনের দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।


গত মাসে ভোজ্যতেলের দাম কমাতে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন বা পাম অয়েল উৎপাদন এবং ব্যবসায়িক পর্যায়ে প্রযোজ্য মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট ১৫ শতাংশ মওকুফ করে সরকার। বাজারে ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম অয়েলের ওপর আরোপিত মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাটও ছাড় দেওয়া হয় ওই আদেশে।


খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেলের আড়তদার কামরুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ধরে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে। দেশের ইতিহাসে পাম অয়েলের দাম এবারের মতো আর বাড়েনি। এখন সরবরাহ কমে যাওয়ায় আরও এক দফা বেড়েছে। পাম অয়েলের দাম সয়াবিনকে ছাড়িয়ে যাওয়ায় বর্তমানে সয়াবিনের দামও বেড়েছে। সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে দাম কমার সম্ভাবনা কম।


বাজারদর : চট্টগ্রামের শীতকালীন সবজির দাম কিছুটা কমেছে। কাঁচাবাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি বেগুন ৬০, কচুরমুখী ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পটোল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকায়, প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধুন্দল ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঝিঙা ১০০ টাকা শসা ৮০ টাকা এবং কাঁচামরিচ ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাঙ্গাশ-তেলাপিয়া ছাড়া বাকি সব মাছ প্রকারভেদে ১৮০ থেকে ৩০০ টাকায় কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে পাঙ্গাশ ১৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১৬০ টাকা, লইট্যা ১৭০-১৮০ টাকা, কই মাছ ২০০ টাকা এবং রুই ২৫০-৩০০ টাকা। এছাড়া চিংড়ি মাছ প্রকারভেদে কেজিতে ৬৫০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা দরে। সোনালি কক ৩০০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ২৮০ টাকা, দেশি মুরগি ৫২০ টাকা, লেয়ার লাল মুরগি কেজিতে ২০ টাকা কমে ২৮০ টাকা এবং সাদা লেয়ার ২৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।


শেয়ার করুন