০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১১:২৭:০৩ অপরাহ্ন
রাজশাহীতে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৭-২০২২
রাজশাহীতে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ

রাজশাহীতে পুলিশের এক উধ্বর্তন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। আজ শনিবার (১৬ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরইউজে) কার্যালয়ে ভুক্তভোগী আব্দুস সামাদ ও তার স্বজনরা জমি দখল ও নানানভাবে হয়রানির অভিযোগ তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভোক্তভোগী আব্দুস সামাদ। তিনি বলেন, ওয়ারিশসূত্রে রাজশাহী শহরের বড়বনগ্রাম মৌজায় আমরা সাতজনের ০.০৪৯৫ শতক বা প্রায় তিন কাঠা জমি আছে। জমির বিবরণ হলো- খতিয়ান নম্বর-১২১৫, জেএল নম্বর-৮২ ও আরএস দাগ নম্বর- ৩১৬১। এই জমির মালিক আমরা সাতজন। কিন্তু একজন পুলিশ কর্মকর্তা সে জমি অবৈধভাবে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম মাহবুবুর রহমান। তিনি পুলিশের একজন অতিরিক্ত ডিআইজি। বর্তমানে তিনি টাঙ্গাইল পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে কর্মরত রয়েছেন।

এই জমিটির মূল মালিক ছিলেন সেরাজ উদ্দিন শেখ নামের এক ব্যক্তি। সেরাজ উদ্দিন তার মোট প্রায় ২১ কাঠা জমি থেকে তিন কাঠা জমি ১৯৯৯ সালের ২০ এপ্রিল বিভা রহমানের কাছে বিক্রি করেন।

বিক্রি করার পর বিভা রহমানকে মাফজোক করে জমির দখল পজিসন বুঝিয়ে দেন। কিন্তু একমাস পরেই অসৎ উদ্দেশ্যে সেরাজ উদ্দিন শেখ বিক্রি করা তিন কাঠাসহ মোট ২১ কাঠা জমিই তার চার ছেলের নামে সমানভাবে বণ্টন করে হেবা দলিল করে দেন। চার ছেলের মধ্যে সাইদুল ইসলাম নামের এই ছেলের ভাগে পড়ে বিভা রহমানের কেনা তিন কাঠা জমি।

পরবর্তীতে সাইদুল ইসলাম বুঝতে পারেন যে, এই জমি তাঁর বাবা আগেই বিক্রি করে দিয়েছেন। তাই কৌশলে বাবার দেওয়া হেবা দলিলের বলে ২০১১ সালে পুলিশ কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমানের স্ত্রী কোহিনূর ইয়াসমিনের কাছে বিক্রি করেন। জমিটি ফাকা পড়ে ছিল বলে বিভা রহমানও কেনার পর আর কোন খোঁজ নেননি।

২০১৬ সালের দিকে বিভা রহমান জমির খারিজ করতে গিয়ে বোয়ালিয়া ভূমি অফিসে গিয়ে দেখতে পান, তিনি যার কাছ থেকে জমি কিনেছিলেন সেই সেরাজ উদ্দিন শেখ জমি বিক্রির পরও একই জমি ছেলেকে দিয়েছেন এবং সেই ছেলেও আরেকজনের কাছে বিক্রি করেছেন।

এসব দলিল বাতিলে তিনি বোয়ালিয়া থানা ভূমি অফিসে মামলা করেন। কিন্তু কিছু দিন পরই বিভা রহমান মারা যান। বিভা রহমান নিঃসন্তান থাকার কারণে এই জমির ওয়ারিশ হন তাঁর স্বামী কোরবান আলী এবং তিন ভাই নজরুল ইসলাম, আমিরুল ইসলাম ও আবদুস সামাদ এদের মধ্যে বিভা রহমানের স্বামী কোরবান আলীও পরে মারা গেলে জমির তার অংশটুকুর ওয়ারিশ হন চার ভাই বজলার রহমান, নজরুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ও মোজাহারুল ইসলাম।

এখন এই সাতজন জমির মালিক। ওয়ারিশেরা ভূমি অফিসে মামলা পরিচালনা করেন। ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর রায় ঘোষণা করেন থানা ভূমি অফিসের তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আবুল হায়াত। রায়ে বলা হয়, সেরাজুল ইসলাম বিভা রহমানের কাছে। জমি বিক্রির পরও সেই জমি ছেলে সাহদুল ইসলামের নামে হেবা দলিল করেছেন যা ঠিক হয়নি। একইভাবে সাইদুল ইসলামও ওই জমি কোহিনূর ইসলামের কাছে বিক্রি করেও ঠিক করেননি। তাই জমির মালিকানা পাবেন বিভা রহমানের ওয়ারিশরাই। আর কোহিনূর ইসলাম ক্ষতিপূরণ পাবেন সাইদুল ইসলামের কাছে।

বিভা রহমানের ওয়ারিশরা জমির মালিকানা পেলেও এখন কোহিনূর ইসলামের পক্ষে। তার স্বামী পুলিশ কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। গত ২৫ জুন আমরা সাত ওয়ারিশ জমিটিতে সীমানা প্রাচীর এবং এর সঙ্গে একটি গেট দেই। আমাদের অগোচরে পুলিশ কর্মকর্তার লোকজন সেই গেট ভেঙে দেন। গুড়িয়ে দেন সীমানা প্রাচীরও।
২৫ জুন আমরা এ বিষয়ে অভিযোগ করতে শাহমখদুম থানায় যাই। কিন্তু থানার ওসি মেহেদী হাসান জানিয়ে দেন, অতিরিক্ত ডিআইজির বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ নিতে পারবেন না।

থানায় অভিযোগ করতে না পেরে আমরা হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান বজলে রেজবী আল হাসান মুঞ্জিলকে দিয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি মাহাবুবুর রহমানকে ফোন করাই। আমরা এই জটিলতার অবসানের জন্য তাকে ডাকি। তিনি আসবেন বলেও জানান।
এরই মধ্যে গত ৯ জুলাই তিনি পুলিশ নিয়ে ওই জমিতে গিয়ে তার স্ত্রীর জমির মালিকানা দাবি করে সেখানে একটি সাইনবোর্ড বসিয়ে দিয়ে আসেন। এরপর সারারাত পুলিশ ওই সাইনবোর্ড পাহারা দেয়।

পরদিন আর পুলিশ না এলে আমরা আমাদের জমির ওপর লাগানো অবৈধ সাইনবোর্ড সরিয়ে ফেলি। কিন্তু এতে ভীষণ খেপেছেন পুলিশ কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান। তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের হুমকি দিচ্ছেন। মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো এবং গ্রেপ্তারের ভয় দেখাচ্ছেন। এতে আমরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। ভোক্তভোগীরা আরো অভিযোগ করেন, আমরা এখন থানা পুলিশ কিংবা প্রশাসনের কোন সহযোগিতা পাচ্ছি না। একজন পুলিশ কর্মকর্তার প্রভাবের কারনে আইনি সহযোগিতা পাচ্ছি না। পুলিশের এই কর্মকর্তার এমন কান্ডে ভূক্তভোগীরা পুলিশ প্রশাসনের উধ্বর্তন কর্মকর্তা এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

মামলা না নেওয়ার বিষয়ে নগরীর শাহমখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ওই জমিটা নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে ঝামেলা চলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্তে আমরা সেখানে কাজ করছি। ভূক্তভোগীদের অভিযোগ মামলা নেওয়া হয়নি এমন প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, জমি বা ভূমি সংক্রান্ত মামলা থানায় হয়না। এজন্য সিভিল কোর্টে মামলা করতে বলা হয়েছে ভোক্তভোগীদের।

জমি দখলের অভিযোগ সম্পর্কে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘২০১১ সালে আমি জমিটি ক্রয় করে খাজনা খারিজ দিয়ে আসছি। ভূমি অফিসের মামলায় তাদের পক্ষে রায় আছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ এমন একটি রায় আছে আমি এই রায়ের বিরুদ্ধে পিটিশন করেছি। কিছুদিনের মধ্যে হয়তো আমাদের ডাকবে সেখানে যা হবে তা সকলকেই মানতে হবে।’ তবে কাউকে ভয়ভীতি বা মামলা করার হুমকি দিচ্ছেন না বলে তিনি জানান।

শেয়ার করুন