দাম বাড়ানোর পরও চট্টগ্রামে সয়াবিন তেলের সংকট কাটেনি। চাহিদার অর্ধেকও মিলছে না সয়াবিন। ফলে দিন দিন বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যের দাম। দাম বাড়ানোর পর সংকট কেটে যাবে বলে আশা করা হলেও বাস্তবে তা হয়নি। উলটো আরও অস্থির হয়েছে। দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জেও ভোজ্যতেলের সংকট বিরাজ করছে। পাইকারি বাজার থেকে সয়াবিন হঠাৎ উধাও হয়ে গেছে। বিশেষ করে এক ও দুই লিটারের বোতলের সরবরাহ নেই বললেই চলে।
এদিকে ভোজ্যতেলের মতো লাগামহীনভাবে বাড়ছে ব্রয়লার মুরগির দাম। গত এক সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পাশাপাশি অস্থির চালের দামও। তবে কিছুটা স্বস্তি সবজির বাজারে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ভোজ্যতেল নিয়ে ক্রেতারা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে রয়েছেন। শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। চট্টগ্রামে ভোজ্যতেল নিয়ে বড় সংকটের আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। লিটারপ্রতি দাম ৮ টাকা বাড়ানো হলেও বাজারে আরও অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে কিছুটা কমেছে শীতকালীন সবজির দাম। মাছের দাম ঊর্ধ্বমুখী। ভোজ্যতেলের খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই খাতুনগঞ্জের আমদানিকারকরা সিন্ডিকেট করে ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। তারা চাহিদার অর্ধেকও সরবরাহ করছে না। ফলে খুচরা বাজারে তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হচ্ছে এবং বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এ কারণে মূলত হু হু করে দাম বাড়ছে। শুক্রবার অলিগলিতে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯০ টাকায় এবং নগরীর বড় বাজারগুলোতে ১৭৫-১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত দুই লিটার ৩৬০ টাকা, তিন লিটার ৫৩০ টাকা এবং পাঁচ লিটার ৮৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
চলতি মাসের শুরুতে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। সরকার নির্ধারিত নতুন দাম অনুযায়ী প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল এখন ১৭৫ টাকায় বিক্রি হবে, যা আগে ছিল ১৬৭ টাকা। খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম ১৪৯ টাকা থেকে বেড়ে ১৫৭ টাকায় দাঁড়িয়েছে। বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৮৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগে ছিল ৮১৮ টাকা। দাম বাড়ানোর পরও স্বাভাবিক হয়নি ভোজ্যতেলের বাজার।
খুচরা ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন জানান, ‘ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর পরও ডিলারদের কাছ থেকে নতুন সরবরাহ পাননি তারা। দাম বাড়ানোর পর থেকে কোনো ডিলার অর্ডার নিচ্ছে না। আগে যারা দোকানে এসে অর্ডার নিয়ে যেত। তারাও আসছেন না। অর্ডারও নিচ্ছে না। আপাতত আগের তেলগুলো বিক্রি করছি। সরবরাহ যথাযত না থাকায় বাজারে বোতলজাত তেল কমে যাচ্ছে। বেশিরভাগ দোকানে তেল নেই।’
আমদানিকারকরা বলছেন, সরকার দুই দফায় শুল্ক-কর কমিয়েও সুফল মিলছে না। বরং দাম আরও বেড়েছে। একাধিক কারণে ভোজ্যতেলের বাজার অস্থির। দেশের ডলার সংকট এখনো চলমান রয়েছে। আমদানিকারকরা আগের মতো ভোজ্যতেল আমদানি করছেন না। বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দামও আগের চেয়ে বেড়েছে। এসব কারণে ভোজ্যতেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। দেশের ইতিহাসে পাম অয়েলের দাম এবারের মতো আর বাড়েনি। মূলত ইন্দোনেশিয়ার উৎপাদন সংকট, বায়োডিজেলে পাম অয়েল ব্যবহারের পরিমাণ ৫ শতাংশ বৃদ্ধিজনিত কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির বুকিং রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে গেছে। এসব কারণে ভোজ্যতেলের বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না।
খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেলের পাইকারি ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন আরমান জানান, ‘দাম বাড়ানোর পরও ভোজ্যতেলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। মিল থেকে তেল পরিশোধন এবং ডিলারদের মাধ্যমে বাজারে পৌঁছাতে কিছুটা সময় লাগে। তবে সরবরাহে এখন আর কোনো বাধা নেই। অচিরেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’
চাহিদা অনুযায়ী মুরগি সরবরাহ না থাকায় বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। গত সপ্তাহে পাইকারিতে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছিল ১৮০-১৮৫ টাকায়। শুক্রবার ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা থেকে ২১০ টাকা দরে। কিছু কিছু দোকানে আরও বেশি দামেও বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগি ২৮০-৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। তবে গত দুই দিনে হঠাৎ এর দাম বেড়ে যায়। শুক্রবার প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ৩৩০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা দাম বেড়েছে।
চট্টগ্রামে চালের দামও কিছুটা উর্ধ্বমুখী। প্রতি কেজি কাটারি বিক্রি হয়েছিল ৭০ টাকা দরে। অন্যদিকে জিরাশাইল ৬৫, নাজিরশাইল ৭৬, মিনিকেট আতপ ৬৪, মিনিকেট সেদ্ধ ৫৭, স্বর্ণা ৫৩ ও গুটি স্বর্ণা ৪৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। শুক্রবার বাজারে কাটারি ৭৬, জিরাশাইল ৭৩, নাজিরশাইল ৮০, মিনিকেট আতপ ৬৮, মিনিকেট সেদ্ধ ৬১ ও স্বর্ণা ৫৬ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। দামে পরিবর্তন হয়নি গুটি স্বর্ণার। বাজারদর : বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ বেড়েছে। এতে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কমেছে। শুক্রবার বাজারভেদে প্রতি কেজি শিম ৪০-৫০ টাকা, শালগম ৩০ টাকা, মুলা ২০ টাকা, টমেটো ৭০ থেকে ১০০ টাকা, বেগুন ৪০-৬০ টাকা এবং প্রতিটি ফুলকপি ও বাঁধাকপি ২০-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া এক কেজি কাঁচামরিচের দাম এখন ৬০-৮০ টাকা। এ ছাড়া লাউ, পেঁপে, পেঁয়াজকলি, বরবটি, মিষ্টিকুমড়া প্রভৃতি সবজির দামও আগের তুলনায় কমেছে। মাছের মধ্যে পোয়া ২৮০, লইট্টা ২০০, পাবদা ৪০০-৪৫০, রূপচাঁদা ৫৫০-৬৫০, তাইলে মাছ আকারভেদে ৫০০-৭০০, তেলাপিয়া ২০০-২২০, পাঙাশ ১৭০-১৮০, রুই ৩৫০-৩৮০, কাতল ৩৫০, বেলে ২৮০-৪০০ এবং মৃগেল ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।