অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম দফায় গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ-সংবলিত প্রতিবেদন বিদায়ি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও কোনো কমিশনই সেটা দিতে পারেনি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানা গেছে, প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য ছয় কমিশনই সময় বাড়িয়ে নিয়েছে।
কমিশনগুলোর পক্ষ থেকে জানা গেছে, চলতি জানুয়ারিতেই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়ার পর নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলসমূহ, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ও নাগরিক সমাজসহ সমাজের বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ শুরু করবে নবঘোষিত 'জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন'। ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রধানদের নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশনের চেয়ারম্যান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং সহসভাপতি সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। আর এই কমিশনের সদস্য হিসেবে থাকছেন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার জানিয়েছেন, আগামী ৩ জানুয়ারির মধ্যে তার কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে। পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ জানান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে আগামী ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে নিয়েছেন তারা। এর মধ্যেই তারা প্রতিবেদন জমা দেবেন। দুর্নীতি বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, ৭ জানুয়ারির মধ্যে তারা প্রতিবেদন দিয়ে দেবেন। সংবিধান সংস্কার কমিশন থেকে জানা গেছে, এই কমিশনও জানুয়ারির প্রথমার্ধেই প্রতিবেদন দাখিল করবে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত বছরের ৮ আগস্ট ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার করার ঘোষণা দেয়। গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রথম দফায় ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন। এগুলো হলো-নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন এবং সংবিধান সংস্কার কমিশন। অন্যদিকে গত বছরের ১৭ অক্টোবর আরো চারটি সংস্কার কমিশন গঠনের কথা জানায় সরকার। সেগুলো হলো স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন, শ্রমিক অধিকারবিষয়ক সংস্কার কমিশন এবং নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন। তবে এই কমিশনগুলো পূর্ণাঙ্গ হতে এক মাস লেগে যায়। গত ১৮ নভেম্বর এই চারটিসহ মোট পাঁচটি পূর্ণাঙ্গ কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। অন্যটি হলো স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। নতুন কমিশনগুলোও কাজ শুরু করেছে। এই কমিশনগুলোকে ফেব্রুয়ারিতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে জারিকৃত জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে। সব মিলিয়ে সরকার ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে।
মহান বিজয় দিবসে বিদায়ি বছরের ১৬
ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় নতুন কমিশন 'জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন' প্রতিষ্ঠার কথা জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেছেন, এই কমিশনের কাজ হবে রাজনৈতিক দলসহ সব পক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় করা। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য স্থাপন হবে, সেগুলো চিহ্নিত করার পাশাপাশি তা বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ করবে 'জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন'। ঐ ভাষণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় সম্পর্কে ধারণা দিয়ে সরকারপ্রধান বলেছেন, 'মোটা দাগে বলা যায়- ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়।'
এদিকে, সোমবার চারটি বিভাগের ৩১টি জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনায় যুক্ত হয়ে প্রধান উপদেষ্টা মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেছেন, 'সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত কমিশনগুলোর প্রতিবেদনের পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে, নাগরিকদের সঙ্গেও আলোচনা হবে। এর মধ্য দিয়ে দেশে নির্বাচনের একটি পরিবেশ তৈরি হবে।' রিপোর্টের প্রতিক্রিয়া কী হবে-সে বিষয়ে সচেতন থাকার জন্য মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি।