০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, শনিবার, ০৩:৫৮:৫৫ অপরাহ্ন
কারাবরণের ৭ বছর পূর্তি: দেশত্যাগ নয়, আপসহীনতা বেছে নেন খালেদা জিয়া
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০২-২০২৫
কারাবরণের ৭ বছর পূর্তি: দেশত্যাগ নয়, আপসহীনতা বেছে নেন খালেদা জিয়া

চার দেয়ালের মাঝ থেকে বেরিয়ে বিএনপির মত বড় দলের অভিযাত্রায় জেল, জুলুম, চিকিৎসাহীনতা সহ্য করে তিনি আপোষহীন নেত্রীর তকমা পেয়েছেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে সৃষ্টি হয় অনিশ্চয়তা। ঠিক এ সময়ই বেগম খালেদা জিয়া দলের নেতৃত্ব নেন। ১৯৮১ সাল থেকে একদিকে দল গোছানো অন্যদিকে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় নেতৃত্বের পরিচয় দেন।  


সে সময়ের সামরিক শাসক এরশাদের বিরুদ্ধে যুগপথ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন খালেদা জিয়া। বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চার যে পথ সৃষ্টি করেছিলেন জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া সেই পথ ধরেই এগিয়ে নেন বিএনপিকে। তার নেতৃত্বের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় ১৯৯০ সালে পতন হয় স্বৈরশাসক এরশাদের। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিজয়ী হয় এবং তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। 


রাজনীতিবিদরা জানান, রাজনৈতিক যাত্রায় তিনি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ প্রশ্নে এক চুল ছাড় দেননি। কোনো ভয় বা লোভের কাছে মাথা নিচু করেননি। শত অত্যাচারেও তিনি মাতৃভূমি ছেড়ে যাননি। গণতন্ত্র ও ইসালামী মূল্যবোধের প্রশ্নেও বারবার তিনি নিজেকে দৃঢ় প্রমাণ করেছেন। 


আইনজীবীরা জানান, এক-এগারো সময়ের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা গতি পায় ২০১৪ সাল থেকে। যখন ক্ষমতায় আজকের পতিত আওয়ামী লীগ সরকার। এর জেরে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দেওয়া রায়ে খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আকতারুজ্জামান। উচ্চ আদালতে সেই সাজা বেড়ে হয়েছিল ১০ বছর। যা ছিল কেবলই শেখ হাসিনার ইচ্ছার প্রতিফলন।


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই যে তিনি (খালেদা জিয়া) জেনেশুনে আপসহীন ছিলেন, এটা এরশাদ আমল থেকেই শুরু হয়েছে, যা এখন প্রমাণিত।


তিনি আরও বলেন, দেশি-বিদেশি একাধিক মারফতে বিভিন্ন প্রস্তাবও এসেছিল। রাজনীতি ছেড়ে দিলে বা বিদেশে চলে গেলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে না। তাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল মিথ্যা-বানোয়াট মামলায়। তাকে শাস্তি দিলেও তিনি মাথানত করবেন না বলে সে সময় মন্তব্য করেছিলেন খালেদা জিয়া, এমনটাই জানান বিএনপির এই সিনিয়র নেতা।


দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, খালেদা জিয়াকে জেল বন্দি করতে পারা ছিল বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্বকে অন্তরীণ করা। তাকে রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ার পায়তাড়া ছিল এটি।


উল্লেখ্য, কোভিড মহামারি চলাকালীন ২০২১ সালের ২৫ মার্চ, ৩ বছরের বেশি সময় কারাগারে থাকার পর নির্বাহী আদেশে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া। এরপর থেকে হাসপাতাল থেকে বাসা আর বাসা থেকে হাসপাতালে আসা-যাওয়ার মধ্যেই কেটেছে প্রায় চার বছর। গত বছরের আগস্টে অঅওয়ামী সরকার সরকার পতন ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের শুরুর দিনই জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে বলে কথা জানান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা পূর্ণাঙ্গভাবে বাতিল হয়। এরপর আপিল বিভাগের রায়ে খালাস পান সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।


শেয়ার করুন