ঢাকাই সিনেমা এখন ঈদকেন্দ্রিক, এটা পুরোনো খবর। কেবল ঈদ এলেই সিনেমা মুক্তির হিড়িক পড়ে। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে মুক্তি পায় ছয় সিনেমা। যার মধ্যে রয়েছে শাকিব খান অভিনীত দুটি সিনেমা ‘বরবাদ’ ও ‘অন্তরাত্মা’।
এ নায়কের সিনেমা ঈদ ছাড়া তেমন সুবিধা করতে পারে না, তার প্রমাণ গত বছরেই পাওয়া গেছে। ২০২৪ সালের ১৫ নভেম্বর মুক্তি পেয়েছিল শাকিব খান অভিনীত ‘দরদ’ নামে একটি সিনেমা। দর্শক খরায় সিনেমাটি মুখ থুবড়ে পড়ে। অথচ একই বছর ঈদে তার অভিনীত দুটি সিনেমা ব্যবসাসফল হয়। এ বছর ঈদে আরও কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছে এ নায়ককে। ‘শাকিবের নামেই সিনেমা চলে’ প্রচলিত এ কথাটির যথার্থতা নেই, এটা আবারও প্রমাণ হলো এবারের ঈদে।
এ নায়কের দুই সিনেমার মধ্যে একটি মোটামুটিভাবে চললেও, অন্যটির বেহাল দশা। মুক্তির প্রথম দিন থেকেই দর্শক আগ্রহ দেখা গেছে এ নায়কের ‘বরবাদ’ সিনেমার প্রতি। কিন্তু মুক্তির দুদিনের মাথায় প্রেক্ষাগৃহ থেকে নেমে যায় তার ‘অন্তরাত্মা’। যা এ নায়কের জন্য অত্যন্ত লজ্জার বলেই মনে করছেন সিনেমাসংশ্লিষ্টরা।
এর মধ্য দিয়েই প্রমাণিত যে, শাকিবের নামে সিনেমা চলে না। সিনেমা চলে উৎসবে, গল্পের জোরে, নির্মাণের মুনশিয়ানায়। তাই বলা যায়, নিজ নামের প্রতি এবারও সুবিচার করতে পারলেন না শাকিব। ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত অন্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘দাগি’, ‘জংলি’, ‘চক্কর ৩০২’, ‘জ্বীন-৩’। সর্বোপরি ঈদের সিনেমাগুলো কেমন সাড়া ফেলেছে সেটাই একটু পরখ করে নেওয়া যাক।
শাকিব খান ও ইধিকা পাল অভিনীত ‘বরবাদ’
এবারের সর্বাধিক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ‘বরবাদ’। সিঙ্গেল স্ক্রিন, মাল্টিপ্লেক্স মিলিয়ে ১২০টি প্রেক্ষাগৃহে চলছে এটি। প্রতিশোধ ও প্রতারণার গল্প নিয়ে সিনেমাটি বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে। এটি নির্মাণ করেন মেহেদি হাসান হৃদয়। মুক্তির পর থেকেই দর্শক আগ্রহে রয়েছে। যেহেতু সর্বোচ্চ হল পেয়েছে, সেদিক বিবেচনায় মোটামোটিভাবে সিনেমাটিকে এগিয়ে রাখা যায়।
আফরান নিশো ও তমা মির্জার ‘দাগি’
দর্শক চাহিদায় রয়েছে ‘দাগি’ সিনেমাটিও। মাল্টিপ্লেক্সের সবকটি শাখা ও সিঙ্গেল স্ক্রিন মিলিয়ে ১৬টি হলে মুক্তি পেয়েছে এটি। মুক্তির পর থেকেই সিনেপ্লেক্সগুলোতে হাউজফুল যাচ্ছে। বাড়ছে শো-এর সংখ্যা।
বলা যায়, ঈদে দ্বিতীয় অবস্থান দখল করে রেখেছে এটি। পরিচালনা করেছেন শিহাব শাহীন। এতে গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে রয়েছেন সুনেরাহ বিনতে কামাল।
সিয়াম আহমেদ ও শবনম বুবলীর ‘জংলি’
সবচেয়ে কমসংখ্যক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ‘জংলি’ সিনেমাটি। মাত্র ১১টি প্রেক্ষাগৃহ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে সংশ্লিষ্টদের। সারা দেশের মাল্টিপ্লেক্সে প্রতিদিন মাত্র ১৮টি শো চলছে। এর মধ্যে দর্শকদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করেছে সিনেমাটি। ঈদের ষষ্ঠ দিন পর্যন্ত সিনেমার প্রতিটি শো হাউজফুল গেছে, এমনটাই জানা গেছে প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের সঙ্গে কথা বলে। এটিকে তৃতীয় অবস্থানে রাখছেন নেটিজেনরা। এম রাহিম পরিচালিত এ সিনেমায় আরও অভিনয় করেছেন প্রার্থনা ফারদিন দীঘি।
মোশাররফ করিম অভিনীত ‘চক্কর ৩০২’
সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার ‘চক্কর ৩০২’। শরাফ আহমেদ জীবন পরিচালিত সরকারি অনুদানের এ সিনেমা শুধু মাল্টিপ্লেক্সে মুক্তি পেয়েছে। এতে মোশাররফ করিমের সঙ্গে অভিনয় করেছেন রিকিতা নন্দিনী শিমু। অন্যান্য সিনেমার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেশ ভালো খেলছে সিনেমাটি। গল্পের জোর থাকায় সিনেবোদ্ধারা মনে করছেন এটি আরও সময় নিয়ে দৌড়াবে। অন্য তিনটি সিনেমার সঙ্গে ইঁদুর দৌড়ে চার নাম্বার অবস্থানে রয়েছে এটি।
আব্দুন নূর সজল ও নুসরাত ফারিয়ার ‘জ্বীন-৩’
মুক্তির হিসাবে শুরুতেই ফ্লপ বলা যায় ‘জ্বীন-৩’ সিনেমাটিকে। কারণ, এটি শুধু দুটি মাল্টিপ্লেক্সে মুক্তি পেয়েছে। তাই এর ফলাফল নিয়ে কথা বলার মতো কিছু নেই। মুক্তির আগে সিনেমার ‘কন্যা’ শিরোনামের গানটি বেশ ভাইরাল হয়। তা থেকে সিনেমাটি নিয়ে একটি আশার পারদ জ্বাললেও শেষ রক্ষা আর হয়নি। এটি নির্মাণ করেন কামরুজ্জামান রুমান।
শাকিব খান ও দর্শনা বণিক অভিনীত ‘অন্তরাত্মা’
সিনেমাটি ১৩টি সিঙ্গেল স্ক্রিন ও আটটি মাল্টিপ্লেক্স মিলিয়ে ২১টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। মুক্তির দুদিনের মাথায় স্টার সিনেপ্লেক্স থেকে নামিয়ে ফেলা হয়েছে। সিনেপ্লেক্সে বর্তমানে এর কোনো শো নেই। বলা যায়, ঈদের সিনেমার রেসে একেবারেই তলানিতে রয়েছে এটি। শাকিব যে তার নামে আবারও ব্যর্থ, এ সিনেমা যেন তার জ্বলন্ত প্রমাণ। এটি পরিচালনা করেছেন ওয়াজেদ আলী সুমন।