২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১০:১৭:১০ অপরাহ্ন
রাজশাহীতে ওএমএসের পণ্য বিক্রিতে অনিয়ম
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৮-২০২২
রাজশাহীতে ওএমএসের পণ্য বিক্রিতে অনিয়ম

রাজশাহীতে ডিলারদের স্বেচ্ছাচারিতায় ওএমএসের পণ্য পাচ্ছেন না দরিদ্র লোকজন। ভুক্তভোগীরা জানান, সকাল ৯টা থেকে পণ্য বিক্রি শুরু করে শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্ধারিত স্থানেই থাকার কথা ডিলারদের। কিন্তু অধিকাংশ ডিলার এক থেকে দুই ঘণ্টা দেরিতে পণ্য নিয়ে আসেন। আবার কিছু পণ্য বিক্রির পরই চলে যান। এতে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েও পণ্য কিনতে পারেন না অনেকে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, খাদ্য বিভাগের কোনো তদারকি নেই। ফলে ডিলাররা ইচ্ছেমতো ওএমএসের পণ্য বিক্রি করছেন। অনিয়মের কারণে প্রকৃত হতদরিদ্ররা কম মূল্যের পণ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরী এলাকায় ৩৪ জন ওএমএস ডিলার রয়েছেন। এসব ডিলারকে দৈনিক ১০০০ কেজি করে চাল ও ৫০০ কেজি করে আটা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। তাদের নগরীর ১৯টি পয়েন্টে প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা ও প্রতি কেজি আটা ১৮ টাকা দরে বিক্রির নির্দেশ দিয়েছে খাদ্য বিভাগ। একজন ক্রেতা ৫ কেজি চাল ও ৫ কেজি করে আটা কিনতে পারেন। প্রতিটি পয়েন্টে ২০০ ক্রেতাকে চাল ও ১৬৬ জনকে আটা দেওয়ার কথা। সেই হিসাবে নগরীতে দৈনিক ৬ হাজার ৮০০ জন নিম্নবিত্তের চাল পাওয়ার কথা। অন্যদিকে আটা পাওয়ার কথা ৫ হাজার ৬৪৪ জনের।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, খাদ্য বিভাগের তদারকি না থাকায় ডিলাররা অর্ধেক পণ্য বিক্রির পর বাকিটা বিক্রি করে দিচ্ছেন কালোবাজারে। এ কারণে মাঝে-মধ্যে ওএমএসের পণ্য উদ্ধার হচ্ছে বিভিন্ন দোকান থেকে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর একাধিকবার নগরীর বিভিন্ন দোকানে অভিযান চালিয়ে ওএমএস ও টিসিবির পণ্য উদ্ধার করেছে।

বৃহস্পতিবার নগরীর কয়েকটি ডিলার সেলস পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, কমমূল্যে চাল-আটা কিনতে অনেক মানুষই ফজরের নামাজের পর থেকে লাইনে দাঁড়ান। তাদের মধ্যে নগরীর শালবাগান এলাকার সাবিনা খাতুন, ছোটবনগ্রামের সুমি আকতার ও বহরমপুর এলাকার নাজমুন নেছা জানান, তারা লাইনে দাঁড়িয়েছেন ফজরের আজানেরও অনেক আগে। ডিলার পয়েন্টগুলোতে নিয়মানুযায়ী সকাল ৯টা থেকে পণ্য বিক্রি শুরুর কথা। কিন্তু তারা পণ্য আনছে এক-দেড় ঘণ্টা পরে। আবার পণ্য বিক্রি শেষ না হতেই চলে যান তারা।

শালবাগানের একটি ডিলার পয়েন্টে অপেক্ষমাণ একাধিক ক্রেতা জানান, ওএমএসের পণ্য বিক্রিতে চরম অরাজকতা চলছে। ডিলাররা চেনাজানা লোকজনকে বেছে বেছে পণ্য দিচ্ছেন। সিরিয়াল অনুসরণ করা হচ্ছে না।

মাহফুজ নামের এক ক্রেতা বলেন, তিনি তিন দিন পণ্য কিনতে লাইনে ছিলেন। কিন্তু কিনতে পারেননি। ডিলারের কর্মচারীরা লোক চিনে চিনে চাল-আটা দিচ্ছেন। প্রতিবাদ করলে ট্রাক সরিয়ে নিয়ে চলে যান তারা। নাজমা নামের এক নারী বলেন, দুধের শিশু কোলে নিয়ে সেই সকালে পণ্য কিনতে লাইনে দাঁড়াই। চার দিন লাইনে দাঁড়িয়ে চতুর্থ দিন ৫ কেজি চাল কিনতে পেরেছি।

অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে ছোটবনগ্রাম স্কুল মোড় এলাকার ডিলার ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, পণ্য বিক্রির সময় স্বজনপ্রীতি করা হয় না। তবে কখনো কখনো ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও দলীয় নেতাদের পরিচয়ে অনেকেই পণ্য কিনতে আসেন। তখন তাদের আগে পণ্য দেওয়া হয়।

নগরীর হড়গ্রামের একজন ডিলার বলেন, অনেক সময় বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ওয়ার্ড কাউন্সিলর বা কোনো নেতার স্লিপ নিয়ে আসেন। অনেক সময় পুলিশের লোকেরাও আসেন। আমরা তাদের কাছে লাইন ছাড়াই পণ্য বিক্রি করি। অনিয়ম বলতে এটুকুই। ট্রাকে পণ্য রেখে চলে যাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন এই ডিলার।

এ বিষয়ে কথা বলতে রাজশাহী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক দিলদার মাহমুদের ফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি। পরে আবারও ফোন দিলে এক শিশু ধরে জানান, তার বাবা ফোন রেখে বাইরে গেছেন।

শেয়ার করুন