সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা গেছেন।
বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ২০ মিনিটে এভারকেয়ার হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয় বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন তার ছোট ভাই কবির উদ্দিন খান।
কবির উদ্দিন বলেন, ‘‘ বড় ভাই হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল। হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”
তিনি জানান, গত কয়েকদিন ধরে আকবর আলি অসুস্থতা বোধ করছিলেন। এদিন বেশি অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
সাবেক মন্ত্রি পরিষদ বিভাগের সচিব আকবর আলি ২০০৬ সালে ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন।
পরে সেই সময় রাজনৈতিক বিরোধের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে প্রশ্নে তিনিসহ চার উপদেষ্টা পদত্যাগ করেছিলেন।
সিরডাপ মিলনায়তনে ইলেকশন ওয়াকিং গ্রুপের এক গোলটেবিল আলোচনায় আকবর আলি খান। |ফাইল ছবি।
সাবেক আমলা আকবর আলি খান ১৯৪৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতক ডিগ্রি নেন। পরে কানাডার কুইন্স ইউনিরভার্সিটিতে অর্থনীতিতে পড়েছেন। এরপর অর্থনীতি নিয়ে পিএইচডি করেন।
পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি সরকারি চাকুরিতে যোগ দেন। অবসর নেন মন্ত্রি পরিষদ সচিব হিসেবে। অর্থ সচিবের দায়িত্বও পালন করেন তিনি।
উপদেষ্টা হিসেবে পদত্যাগের এক বছর পর ফখরুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আকবর আলি রেগুলেটরি রিফর্মস কমিশনের (আরআরসি) চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন।
সত্যভাষী ও সাহসী সাবেক এই সরকারি কর্মকর্তা পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে কর্মরত থাকা অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি হবিগঞ্জের মহুকুমা প্রশাসক (এসডিও) ছিলেন।
যুদ্ধের সময়ে আকবর আলি মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করেন। কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকায় পাকিস্তানি জান্তা তখন তার অনুপস্থিতিতে তাকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়।
দেশ স্বাধীন হলে তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে অবসর নেওয়ার পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন।
একই সঙ্গে লেখালেখি করেছেন। অর্থনীতি, সমাজ ও স্মৃতিচারণমূলক বই লিখেছেন। পত্রপত্রিকায় নিয়মিত রাজনীতি ও আর্থ সামাজিক অবস্থা নিয়ে কলাম লিখেছেন।
আকবর আলি খানের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৭টি। এরমধ্যে অর্থনীতি বিষয়ে তার দুই বই ‘পরার্থপরতার অর্থনীতি’ এবং ‘আজব ও জবর-আজব অর্থনীতি’ পাঠকদের কাছে সমাদৃত হয়েছে।
অর্থনীতির বইয়ের বাইরে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের এবং তার সরকারি চাকরির অভিজ্ঞতা নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক বই লিখেছেন।
জীবনানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, বাংলায় ইসলাম প্রচার এবং দেশকে নিয়ে বই লিখেছেন। 'পুরানো সেই দিনের কথা' তার সবশেষ আত্মজীবনী গ্রন্থ।
তার অন্যান্য বইয়ের মধ্যে 'ডিসকভারি অব বাংলাদেশ', 'দারিদ্র্যের অর্থনীতি: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ', 'অবাক বাংলাদেশ: বিচিত্র ছলনাজালে রাজনীতি', 'চাবিকাঠির খোঁজে: নতুন আলোকে জীবনানন্দের বনলতা সেন', 'দুর্ভাবনা ও ভাবনা : রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে', 'বাংলায় ইসলাম প্রচারে সাফল্য: একটি ঐতিহাসিক বিশ্লেষণ', 'ফ্রেন্ডলি ফায়ারস', 'হাম্পটি ডাম্পটি ডিসঅর্ডার অ্যান্ড আদার এসেস' ও 'গ্রেশাম'স ল সিন্ড্রম অ্যান্ড বিঅন্ড' পাঠকপ্রিয় হয়েছে।