রাজশাহীর বাগমারা কর্মকর্তা সংকট আর অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের ফলে গতিহীন হয়ে পড়েছিল ভূমি অফিসের কার্যক্রমে। বলা চলে মুখ থুবড়ে পড়ে ভূমি সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম। বিপাকে পড়েছিল উপজেলার হাজার হাজার লোকজন। খাজনা-খারিজ অভাবে ব্যাহত হচ্ছিল জমি ক্রয়-বিক্রয়ে। বর্তমানে পাল্টে গেছে সেই অবস্থার। গতি এসেছে ভূমি অফিসের সকল কার্যক্রমে।
এদিকে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য, সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক এর প্রচেষ্টায় আগামী ডিসেম্বরে বাগমারাকে ভূমিহীন উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ লক্ষ্যে খাসজমি উদ্ধার করে মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষ্যে ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। খাস জমি উদ্ধার কাজে অগ্রহণী ভূমিকা পালন করেছেন সহকারী কশিশনার (ভূমি) মাহমাদুল হাসান।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) না থাকায় কিছুদিন পূর্বে ভূমি অফিসে সেবা নিতে আসা লোকজনদের যে ভাবে হয়রানির সম্মুখিন হতে হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। লোকজনদের সেই হয়রানি এখন আর নেই। আবেদন করলেই হচ্ছে জমি খারিজ। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ২৮ কর্যদিবসের মধ্যে আবেদনকৃত জমি খারিজ করার কথা। সরকারি নির্দেশনা থাকলেও সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর সংকটে দীর্ঘ সময় আটকে ছিল খারিজ। সেই সাথে অফিসের দৈনন্দিন কাজেও পড়েছিল ভাটা।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, সহকারি কমিশনার (ভূমি) এর দায়িত্ব পালন করেন বেশ কয়েকজন ইউএনও। এরফলে নিজের দাপ্তরিক কার্যক্রম সামলাতে দিন পার হয়ে যায়। এতে করে ভূমি অফিসের কাজে ধীরগতি হয়েছে। এর মূল কারন হিসেবে যেটা দেখা গেছে তা হলো ইউএনও থাকলে এসিল্যান্ডের পদ খালি।
আবার এসিল্যান্ড থাকলে ইউএনও পদ খালি। সে কারনে এক জনের উপরেই থাকতো দুই অফিসের দায়িত্ব। আর তাই অফিসেই সময়ের মধ্যে দাপ্তরিক কার্যক্রম সম্পন্ন হয়নি। উভয় দপ্তরে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে সেবাপ্রত্যাশীদের।
চলতি বছরের ২৫ মে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে যোগদান করেন মাহমাদুল হাসান। ইউএনওর পদ ফাঁকা থাকায় এরই মধ্যে তাঁকেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। এদিকে গতমাসের ১৪ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন সাইদা খানম। বর্তমানে প্রশাসনিক দুই কর্মকর্তা নিশ্চিত হওয়ায় কিছুটা ধকল কমেছে অতিরিক্ত দায়িত্বের। ফলে দপ্তরিক বিভিন্ন কাজে এসেছে গতি। বর্তমানে নিজ দপ্তরে বসেই জমি খারিজ সহ অফিসের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। সহকারী কমিশনারের (ভূমি) সঠিক ভূমিকায় বিগত সময়ের অপেক্ষমান সকল খারিজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে যারাই জমি খারিজের জন্য আবেদন করছেন তাদেরটাই দ্রুত সময়ের মধ্যে খারিজ করে দেয়া হচ্ছে।
স্বাধীনতার পরে তৈরি আইন ও জনবল কাঠামো মোতাবেক পরিচালিত হয়ে আসছে ভূমি অফিস। সেদিক দিয়ে পর্যাপ্ত লোকবল না থাকলে জনগণের সেবায় সীমিত জনবলেই দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমাদুল হাসান। উপজেলা ভূমি অফিসে ১৪টি পদের ৪টি পদই ফাঁকা। এতে করে অন্যান্য কাজে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটে। ভূমি অফিসের সেবার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো খারিজ, ভিপি, ভূমিহীনদের মাঝে জমি বন্দবস্ত, মিসকেস, জলমহাল ইজারা সহ বিভিন্ন কার্যক্রম।
উপজেলা ভূমি অফিসে জমি খারিজ করতে এসেছিলেন উপজেলার বালিয়া গ্রামের মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, ঘনঘন এসিল্যান্ড বদলী হওয়ার কারনে অনেক সময় লাগলো জমি খারিজ করতে। আমাকে দীর্ঘ দিন ভূমি অফিসে আসতে হয়েছে। নতুন ভাবে এসিল্যান্ড দায়িত্ব নেয়ায় সরকারি মূল্যে খুব সহজেই আমার ক্রয়কৃত জমির খারিজ পারতে পারলাম। এছাড়াও প্রতি বুধভার ভূমি অফিসে ভূমি অফিসে লোকজনের করা মিসকেসের শুনানী হয়ে থাকে।
এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমাদুল হাসান বলেন, আমি যোগদানের পর থেকেই লোকজনের যে সকল জমির খারিজ সহ কার্যক্রম জমা ছিল সেগুলো ছাড় করে দিয়েছি। সেই সাথে লোকজন যেন হয়রানীমুক্ত সেবা পায় সে ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছি। ভূমি অফিসের কাজের পাশাপাশি নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা। খাস সম্পত্তি উদ্ধার করা। সরকার বাগমারা উপজেলাকে শতভাগ ভূমিহীন উপজেলায় ঘোষণা করবেন বলে ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে।