দৃষ্টিনন্দন ৩শ’ ফুট সড়ক খ্যাত দেশের প্রথম প্রশস্ত হাইওয়ে এক্সপ্রেস ও দেশের প্রথম পাতাল রেলের এমআরটি লাইন-১ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায়। রাজধানীর উত্তর সিটি করপোরেশন এর যে কোনো স্থান থেকে যে কেউ মাত্র ১০ থেকে ২০ মিনিটে বাসে চড়ে প্রবেশ করতে পারেন পূর্বাচলে। আর দক্ষিণ এশিয়া মহাদেশের মধ্যে অন্যতম পরিকল্পিত শহর বাস্তবায়নের পথে পূর্বাচল প্রকল্পের নানা স্থাপনা ইতোমধ্যে রূপগঞ্জকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে গোটা দেশে। আর পূর্বাচল প্রকল্পের ছোঁয়ায় গত ২৫ বছরে রূপগঞ্জ হয়ে ওঠেছে এক ব্যস্ততম নগরীতে। যেখানে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জনসংখ্যা। বাড়ছে শিল্পায়ন ও নগরায়ন। তবে স্থানীয় জনসাধারণের ভোগান্তিও কম নয়। বেশির ভাগ জমির মালিকরাই নানাভাবে ওই নগরায়ন কর্তৃপক্ষের কাছে নানাভাবে অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন। এমন অভিযোগের পাহাড় রয়েছে রূপগঞ্জ থানায় ও নারায়ণগঞ্জ আদালতসহ উচ্চ আদালতের আলমারিতে।
সূত্র জানায়, শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্যে ব্যবসায়ীদের কাছে আকর্ষণীয় স্পটে পরিণত হয়েছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা। ফলে শিল্পায়নের সঙ্গে সঙ্গে দ্রæতগতিতে বাড়ছে এখানকার জনসংখ্যাও। এ সুযোগে আবাসন খাতের প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক ও ভুইফোঁড় অনেক ব্যবসায়ী গড়ে তুলেছে তাদের দখল বাণিজ্য। অন্যদিকে অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও আবাসন ব্যবসার স¤প্রসারণে দালান কোঠা আর বালি ফেলে ভ‚মি পরিবর্তনের হিড়িক পড়েছে। সূত্রমতে, ১৯৭ হেক্টর জমির ৮০ ভাগই গত দুই দশকে পরিণত হয়েছে ভিটি জমিতে।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, রাজধানীসংলগ্ন এলাকা হিসেবে শিল্প মালিক ও আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান হয়ে উঠেছে রূপগঞ্জ। এক সময়ের ফসলের মাঠ এখন কেবল ধু ধু বালির মরুভ‚মি। চোখ মেলে তাকালেই দেখা যায়, এখানকার শিল্পায়ন বৃদ্ধি ও আবাসন ব্যবসা স¤প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে নগরায়ণও হচ্ছে প্রায় সবগুলো মৌজায়।
উপজেলার সদর ও দাউদপুর ইউনিয়নের কিছু মৌজা ও গাজীপুরের কালীগঞ্জের দুটি মৌজাসহ পূর্বাচল প্রকল্পের আশপাশের উপজেলার তারাবো ও কাঞ্চন পৌরসভা, গোলাকান্দাইল ও ভুলতা ইউনিয়ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় আবাসন কোম্পানির সাইনবোর্ড। পাশপাশি সড়ক-মহাসড়কের পাশে এমনকি শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরে গড়ে ওঠেছে শত শত শিল্প-কারখানা। এসব এলাকার ফসলি জমি কমে আবাসন খাতের প্রতিষ্ঠানের আধিপত্য বেড়েছে অনেক।
স্থানীয়রা জানান, আগে এসব এলাকায় পাটকলের সংখ্যা ছিল বেশি। বর্তমানে পোশাক ও সুতা কারখানার আধিপত্য রয়েছে। তবে শিল্পপ্রতিষ্ঠান বাড়লেও যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়নে পিছিয়ে রয়েছে রূপগঞ্জ। রূপগঞ্জের উত্তর দিকে সিলেট মহাসড়ক ও পূর্ব দিকে চট্টগ্রাম মহাসড়ক হলেও রূপগঞ্জের ভেতরে তেমন রাস্তাঘাট স¤প্রসারণ না হওয়ায় জনভোগান্তি রয়েছে বেশি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান ভ‚ঁইয়া ইনকিলাবকে বলেন, শিল্প-কারখানার পাশাপাশি রূপগঞ্জে গত এক দশকে ব্যাপকহারে আবাসন ব্যবসা বেড়েছে। এক্ষেত্রে কৃষিজমির মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। এখানে ক্রমেই আবাসন ব্যবসা বাড়ছে। স্বাভাবিকভাবেই ভুইফোঁড় প্রতিষ্ঠানও রয়েছে অনেক। এতে জনগণ প্রতারিত হওয়ার অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, স্বাধীনতার আগে রূপগঞ্জের শিল্পায়ন সীমাবদ্ধ ছিল পাট ও সুতার কারখানার মধ্যেই। বাংলাদেশ অধ্যায়েও নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত এখানে শিল্পায়নের গতি ছিল খুবই ধীর। গত শতাব্দীর শেষ প্রান্তে এসে দ্রæত শিল্পায়িত হতে থাকে এলাকাটি। এরপর গত দুই দশকে ছোট-বড় মিলিয়ে হাজারো নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে রূপগঞ্জে। এর মধ্যে গাজী গ্রæপ, সিটি গ্রæপ, প্রাণ-আরএফএল গ্রæপ, আম্বর গ্রæপ, বাংলাক্যাট, রবিনটেক, স্কয়ার, বাংলাদেশ মেলামাইনসহ পোশাক ও স্পিনিংয়ের বড় বড় কারখানাও রয়েছে। গড়ে তোলা হয়েছে অর্থনৈতিক অঞ্চলও। এলাকার ফসলি জমি কমে আবাসন খাতের প্রতিষ্ঠানের আধিপত্য বেড়েছে অনেক।
স্থানীয় শিক্ষক নেতা আব্দুর রহিম বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকেই রূপগঞ্জ শিল্প এলাকা হিসেবে খ্যাত। গাউছিয়া কটন মিলসহ বেশকিছু কটন ও জুট মিল আগে থেকেই ছিল। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে এখানে ব্যবসা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমান সময়ে এসে বলতে পারি, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে রূপগঞ্জের জীবনমানের তেমন কোনো পার্থক্য নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা তাহছিনা আক্তার নিশাত বলেন, ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকা হওয়ার কারণে এখানে পূর্বাচল প্রজেক্ট হচ্ছে, বাণিজ্য মেলা চলে এসেছে, অদূর ভবিষ্যতে দেখা যাবে পূর্বাচলকে ঘিরে হয়তো বিভিন্ন দূতাবাসও এদিকে চলে আসবে। এখানের ব্যবসায়িক পরিবেশ ভালো হওয়ায় দেশের সব ব্যবসায়ীর প্রথম নজর থাকে এদিকে। এক সময় রূপগঞ্জে ছিল শত শত ইটভাটা। ইটভাটার কারণে এখানে কোনো ফসল হতো না। এখানে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার কারণে একদিকে বেকারত্ব সমস্যার যেমন সমাধান হয়েছে, তেমনি ছোট ছোট দোকানপাটের মাধ্যমেও মানুষ স্বাবলম্বী হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে গত দুই দশকে রূপগঞ্জে বড় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।