২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৪:১০:৫৯ অপরাহ্ন
পরীক্ষামূলক হলেও আদানি থেকে দৈনিক ৬৫০-৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছে
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০৪-২০২৩
পরীক্ষামূলক হলেও আদানি থেকে দৈনিক ৬৫০-৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছে

প্রতি বছর গ্রীষ্ম ও সেচ মৌসুমে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় লোডশেডিংয়ের ভোগান্তি থাকলেও এবারের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। মূলত তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জ্বালানির সংকট সৃষ্টি হলে এ সময় পরিস্থিতি প্রকট হয়ে ওঠে। সম্প্রতি এ অঞ্চলের লোডশেডিং অনেকটা কমে এসেছে। জানা গেছে, স্থানীয় বেশকিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশাপাশি ভারতের আদানির কেন্দ্র থেকে ৬৫০-৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি হচ্ছে। এ বিদ্যুতের পুরোটাই উত্তরাঞ্চলে সরবরাহ করা হচ্ছে।

ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গড্ডায় নির্মাণ করা হয়েছে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে আদানি গ্রুপ। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট উৎপাদনে এসেছে ২০ মার্চ। এরপর থেকে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ২৬ মার্চ থেকে কেন্দ্রটি পূর্ণমাত্রায় ব্যবহার করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২০ মার্চ থেকে আদানির কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আমদানির কার্যক্রম শুরু করে

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। এরপর ২৬ মার্চ টেস্টিং ও কমিশনিং সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু হয়। পরদিন কেন্দ্রটি থেকে পুরোদমে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু করে বিপিডিবি। বাণিজ্যিক উৎপাদন চালু না হলেও পরীক্ষামূলক উৎপাদন দিয়ে বিপিডিবি আদানির কেন্দ্র থেকে ৬৫০-৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে। এটি আদানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের সর্বোচ্চ সক্ষমতা।

উত্তরাঞ্চলের দুই বিভাগ রাজশাহী ও রংপুরে চলতি মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা ২ হাজার ৪০০-৫০০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে রাজশাহীতে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট এবং রংপুরে ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। মোট চাহিদার এক-তৃতীয়াংশই এখন আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আসছে।

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য গড্ডা থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত ডেডিকেটেড সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করেছে আদানি গ্রুপ। এরপর রাজশাহীর সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর হয়ে এ সঞ্চালন পৌঁছেছে বগুড়ায়। সেখানে নির্মিত সাবস্টেশনের মাধ্যমে এ বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।

বিপিডিবির সদস্য (উৎপাদন) এসএম ওয়াজেদ আলী সরদার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গ্রীষ্ম, সেচ ও রমজানে আমাদের লক্ষ্য ছিল বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা। সেটি আমরা করতে পেরেছি। এরই অংশ হিসেবে উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা গেছে। আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আসার ফলে ওই অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। চলতি মৌসুমে কেন্দ্রটির পুরো বিদ্যুৎ ব্যবহারের লক্ষ্য বিপিডিবির রয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে।’

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) দৈনিক উৎপাদন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ৫ জানুয়ারি চাহিদা অনুযায়ী দিনের বেলায় (পিক) বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে ৬৮৫ মেগাওয়াট এবং সন্ধ্যায় পিক আওয়ারে ৭৪৯ মেগাওয়াট। গতকাল কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুতের সম্ভাব্য উৎপাদন দিনের বেলায় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬৬০ মেগাওয়াট এবং রাতে ৭৫০ মেগাওয়াট।

বিপিডিবির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, আদানির কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আমদানি হওয়ায় উত্তরাঞ্চলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বেশির ভাগ বন্ধ রাখা হয়েছে। এর ফলে আমদানীকৃত বিদ্যুৎ দিয়েই এ অঞ্চলের সরবরাহ ঠিক রাখা হয়েছে।

পিজিসিবি সূত্রে জানা গেছে, দেশের উত্তরাঞ্চলের দুই বিভাগে বিদ্যুৎ সরবরাহে ৩০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি তেলভিত্তিক, নয়টি গ্যাস ও চারটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। এর বেশির ভাগই বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র (আইপিপি)। ৫ এপ্রিল পিজিসিবির বিদ্যুৎ উৎপাদন চিত্র থেকে দেখা গেছে, সিরাজগঞ্জে ৬০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক (তৃতীয় ইউনিট) ২৭৫ মেগাওয়াট সক্ষমতা কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ নেয়া হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎ চাহিদায় আইপিপির ছোট নয়টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকেও বিদ্যুৎ নিচ্ছে বিপিডিবি। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মোট সক্ষমতা ৫৮০ মেগাওয়াট হলেও বিদ্যুৎ নেয়া হয়েছে মাত্র ২০০ মেগাওয়াট। বাকি বেশির ভাগ তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বিদ্যুৎ বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে চলতি মৌসুমে পরিকল্পনা ছিল আদানির বিদ্যুৎ দেশের গ্রিড লাইনে যুক্ত করার। মূলত তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের খরচ কমাতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

আদানি গ্রুপের ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিয়ে মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ প্রতিবেদন প্রকাশ করলে আদানি গ্রুপের শেয়ারে ধস নামে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ চুক্তি এবং কয়লার দাম নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা শুরু হয়। এমনকি আদানি গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের জন্যও বিভিন্ন মহল থেকে সরকারকে আহ্বান জানানো হয়। এসব বিতর্কের মধ্যেই কয়লার দাম নিয়ে আদানি ও বিপিডিবির কয়েক দফা আলোচনা হয়। এ আলোচনার মধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হয় গত মার্চে। এর পরই কেন্দ্রটি থেকে এক প্রকার নীরবে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু করে বিপিডিবি।

শেয়ার করুন