২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ০২:০৭:০০ পূর্বাহ্ন
তানোরে বিএনপির দু’গ্রুপের মারপিট, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় আহত চার
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৭-২০২৩
তানোরে বিএনপির দু’গ্রুপের মারপিট, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় আহত চার

রাজশাহীর তানোরে উভয় গ্রুপের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের জের ধরে দুই দফা মারপিট ধাওয়া-পাল্ট ধাওয়ায় চারজন আহত হয়েছেন। শনিবার রাতে পৌর সদর গাইনপাড়া গ্রামে অসুস্থ পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালামের বাড়িতে ও রবিবার সকালে মাদারিপুর বাজারে ঘটে মারপিটের ঘটনা।


মারপিটের সংবাদ পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। এঘটনায় উভয় গ্রুপের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করছেন সিনিয়র নেেতারা।


জানা গেছে, গত শনিবার মুন্ডুমালা পৌর বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, প্রয়াত মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ছোট ভাই অবশরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ও বেগম জিয়ার সামরিক সচিব শরিফ উদ্দিন। একই সময় তালন্দ ইউপি বিএনপির আয়োজনে দেবিপুর মোড়ে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আখেরুজ্জামান হান্নান ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান।

কৃষক দলের সদস্য সচিব মালেক মন্ডল জানান, সভা শেষ করে মুন্ডুমালা থেকে অসুস্থ তানোর পৌর বিএনপির সম্পাদক আব্দুস সালামকে দেখতে তার বাড়িতে আসেন শরিফ উদ্দিনসহ নেতা কর্মীরা। আশার পথেই দেবিপুর মোড়ে মিজানুরের লোকজন আজেবাজে কথা বলে। কোন কর্নপাত না করে চলে আসি। অসুস্থ সালামের বাড়িতে থাকা অবস্থায় মিজানের কিছু লোকজন আজেবাজে কথা বলা শুরু করেন। এর এক পর্যায়ে হাতাহাতি ও ধাওয়া দেওয়া হয়। এসব কারনে রোববার সকালের দিকে মাদারিপুর বাজারে আমাদের গ্রুপের মতি, মাসুদ, রুবেল ও সেলিমকে মেরেছে মিজান গ্রুপের লোকজন। তিনি আরো বলেন মিজানের কিছু সহচর আছে তারা ক্ষমতাসীনদের সাথে আতাত করে বিটিম হয়ে কাজ করছে। এখন প্রায় দিন সভা হবে, কারকত  জোর দেখা যাবে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিগত রমজান মাসের আগ থেকে কেন্দ্রীয় বিএনপি প্রয়াত মন্ত্রীর সহধর্মীনি আভা হককে রাজনীতি মাঠে থাকতে বলেন। কিন্ত তাকে রাজনীতির মাঠ তো দূরে থাক বাড়ি থেকে বের হতে দেননি। এসব কারনেই বিএনপি একাধিক ভাগে বিভক্ত।

এক সিনিয়র নেতা জানান, আমরাও শুনেছি এঘটনা। যার কারনে কেউ আভা হককে প্রার্থী হিসেবে  চাচ্ছেন, আবার সিনিয়রসহ বৃহত্তর বিএনপি অবশরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল শরিফ উদ্দিনকে প্রার্থী হিসেবে চান। কিন্তু কেন্দ্র যাকে প্রার্থী করবেন তার হয়ে সবাইকে কাজ করতে হবে বলে সাব জানিয়ে দিয়েছেন শরিফ উদ্দিন। কিন্ত সাবেক মেয়র মিজান নিজের আধিপত্য বা সে উপজেলার কর্নধর হতে চান। এভাবে রাজনীতি হয়না। বিএনপির মুল লক্ষ সরকার পতন ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। সে দিকে তানোর বিএনপি নেই, আছে আধিপত্য ধরে রাখতে। ফারুক চৌধূরী এমপি আছে মানুষ অনেক শান্তিতে আছে। যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে আর এআসনে বিএনপি থেকে এমপি হয় তাহলে মিজান বাহিনীর অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়বে। তিনি যে এত জনপ্রিয় তাহলে পৌরসভা ভোটে নিজ কেন্দ্রেসহ প্রায় কেন্দ্রে পরাজিত হলেন কেন। মাস্তানি দাঙ্গাবাজি করে জনপ্রিয়তা অর্জন হয়না। ২০১৬ সালে প্রয়াত এমরান মোল্লা বেচে ছিল বলে ১৩ ভোটে মেয়র হয়েছিল। তার বাড়ি পৌর সদর গুবিরপাড়া গ্রামে, নিজ গ্রামেও তো তার বিরুদ্ধে অনেকে।

উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক আহবায়ক মাসুদ করিম জানান, পৌর বা ওয়ার্ড কমিটিকে না বলে শরিফ উদ্দিন সালামকে দেখতে আসেন। আমরাও যায়। সেখানে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াছিন, যুবদল নেতা কাশেম, লিটন, আতিক, ছাত্রদল নেতা বজলুর ও জোবা সাবেক চেয়ারম্যান মফিজসহ কয়েকজন তাড়ানি দেয়। তারা জমি দিয়ে পালিয়ে যায়।

তবে কৃষকদলের নেতা মালেক পুনরায় জানান, মিজানের খালাতো ভাই তোফা গলাবাজি করছিল, আমাদের লোকজন উত্তেজিত হলে মিজানসহ কয়েকজন পালিয়ে যায়। অবসরপ্রাপ্ত মেজর শরিফ তানোর_গোদাগাড়ীর বিএনপির নেতা। আর তার সাথে পাল্লা দিচ্ছে মিজান।

তিনি আরো জানান, মিজানের লোকজন মুখে কাপড় বেধে সোনাও ছিনতাই করেছে।

উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব শরিফ মুন্সি জানান, মাদারিপুর বাজারে মারামারি হয়নি, কথা কাটাকাটি হয়েছে।

তানোর থানার এএসআই  মজনু জানান, মারামারি হয়নি কথা কাটাকাটি হয়েছে  সবাইকে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আখেরুজ্জামান হান্নান বলেন, দেবিপুরে মিটিং শেষে  বাড়িতে চলে এসেছে। তবে নিজের মধ্যে কামড়া কামড়ি ঠিক না। আভা হক ও শরিফ উদ্দিনে মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরেই নাকি এমন লগিং গ্রপিং হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এসব তাদের পারিবারি বিষয় এটা নিয়ে আমার কোন কথা নাই।

সাবেক মেয়র জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান মিজানের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন এসব বাদ দাও সন্ধ্যার পরে সাক্ষাতে কথা বলে এরিয়ে যান তিনি।

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বিশ্বনাথ বলেন, ঘটনা সম্পর্কে আমি জেনেছি, তবে নিজেদের মধ্যে এসব করা সঠিক না। আমি তানোর বিএনপিকে বলতে চায় কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করতে হবে। দলের দেশের ও সরকার পতন এবং নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে যে আন্দোলন চলছে, সেটা জোরতাল ভাবে করতে হলে সকল ভেদাভেদ ভূলে এক হয়ে কাজ করতে হবে। আর আগামী ৮ জুলাই তানোরে বিশাল ঈদপুনর্মিলনী করার জন্য সবাইকে এক হতে হবে। যারা দাঙ্গা হাঙ্গামা ও আধিপত্য বিস্তারের জন্য একক চেষ্টা করলে জেলা বিএনপি।

শেয়ার করুন