০২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৪:৫০:৫৪ অপরাহ্ন
ভোটের সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে চাপে সরকার
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৭-২০২৩
ভোটের সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে চাপে সরকার

 ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক-নির্বাচনী পর্যেবক্ষক দল আজ শনিবার ঢাকা আসছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে জোটের পক্ষ থেকে পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর বিষয়ে মতামত দেবে ছয় সদস্যের এ দলটি। তাদের মতামত নেতিবাচক হলে তা সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে পারে। ফলে আগামী জাতীয় নির্বাচনের সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে তাদের এ সফর চাপে ফেলেছে সরকারকে।


নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে ইইউর ছয় সদস্যের পর্যবেক্ষক দলটি আজ থেকে ২৩ জুলাই বাংলাদেশ সফর করবে। প্রতিনিধি দলটির মূল কাজ হবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনের কর্মপরিধি, পরিকল্পনা, বাজেট, লজিস্টিকস, নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয় মূল্যায়ন করা।


এ দলটি বাংলাদেশের সরকারের প্রতিনিধি, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনে ২৭ দেশের জোট ইইউ পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে কিনা, সে সিদ্ধান্ত নেবে এ প্রতিনিধি দলের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে।


ইইউর প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলটি আগামী জাতীয় নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবে। তারা মূলত নির্বাচনের সময় পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তা, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও সহিংসতামুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা, নির্বাচন করার পরিবেশের মতো বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবে।

নাম না প্রকাশের শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ইইউর প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলটির প্রতিবেদন আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ পর্যবেক্ষক দল ব্রাসেলসে গিয়ে যা প্রতিবেদন দেবে, তার ওপর নির্ভর করে ইইউর পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা দপ্তরের হাই রিপ্রেজেনটেটিভ ও ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেপ বরেল সিদ্ধান্ত নেবেন, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইইউ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে কিনা।

তিনি বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে বিতর্কিত হওয়ায় সরকারের ওপর আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার বিষয়ে চাপ রয়েছে। এখন এ পর্যবেক্ষক দল যদি গিয়ে বলে বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না, তাহলে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না সংস্থাটি। এতে বিতর্ক আরও তুঙ্গে উঠবে এবং ক্ষমতাসীনদের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের যুক্তি গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। এটি ভবিষ্যতে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে। ফলে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরির চাপ রয়েছে সরকারের ওপর।

ঢাকায় ইইউর রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি সমকালকে বলেছেন, প্রাক-নির্বাচনী পর্যেবক্ষক দল নির্বাচনের প্রস্তুতি দেখবে। সেই সঙ্গে ইইউর পর্যবেক্ষকরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসতে পারবেন কিনা, সেটি খতিয়ে দেখবে। এ জন্য অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণ এবং সরকারের কাছ থেকে নিশ্চয়তা পেতে হবে যে, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা আসতে পারেবন।

এরই মধ্যে ইইউর প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল নিয়ে রাজনীতির মাঠ ও কূটনৈতিক অঙ্গনে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে এ দলটির কার্যক্রম এবং দলগুলোর নির্বাচনী ভাবনা নিয়ে বৈঠক করেছে ইইউর ঢাকা দূতাবাস। আর ঢাকায় ১২টি পশ্চিমা দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও প্রতিনিধিদের প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলের সফর নিয়ে ব্রিফ করেছেন ইইউর রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি। এ বিষয়ে নিজ বাসায় গত বুধবার চা-চক্রের আয়োজন করেন তিনি।

বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক কূটনীতিক বলেন, ইইউর প্রতিনিধি দলটির কার্যক্রম ও আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে চা-চক্রে আলোচনা হয়েছে।

গত দুটি সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠায়নি ইইউ। ২০১৪ সালের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হওয়ায় সংস্থাটির নির্বাচনী পর্যবেক্ষকরা আসেননি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে চিঠিতে ইইউকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল নির্বাচনের মাত্র কয়েক দিন আগে। তবে কোনো পর্যবেক্ষণ মিশন পাঠায়নি ইইউ। কেন পাঠায়নি, তার কারণও জানায়নি

২০০৮ সালে ইইউর বিশাল পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে। তারা শুধু নির্বাচনের দিনই নয়, নির্বাচনের আগে ও পরে বেশ কিছু দিন বাংলাদেশে অবস্থান করে পর্যবেক্ষণের কাজ করেন।

শেয়ার করুন