০১ মে ২০২৪, বুধবার, ১১:১৪:০৫ পূর্বাহ্ন
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান: শিক্ষক এমপিওভুক্তিতে চালু হচ্ছে অটোমেশন
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৭-২০২৩
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান: শিক্ষক এমপিওভুক্তিতে চালু হচ্ছে অটোমেশন

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির জন্য অটোমেশন পদ্ধতি চালু হচ্ছে। নিয়োগের সময়ই তাঁদের এমপিওভুক্ত করা হবে। এর অংশ হিসেবে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে স্মার্ট ওয়েবসাইট করা হবে।

বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্ত করার প্রক্রিয়া নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে গত মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আয়োজিত কর্মশালায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। বিষয়টি যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এমপিও হলো মান্থলি পে-অর্ডার বা মাসিক বেতন আদেশ, যার মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের সরকারি অংশ দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত হলে শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তিতে হয়রানি ও ঘুষ-বাণিজ্য বন্ধ হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বেসরকারি 

শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তিতে অটোমেশন পদ্ধতি চালুর বিষয়ে সবাই একমত হয়েছি। এটি চালু হলে শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করতে হবে না। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন

কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে যাঁরা সুপারিশ পাবেন, তাঁদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে এমপিওভুক্ত করা হবে।’ কবে নাগাদ চালু হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নতুন একটি ব্যবস্থা চালু করতে একটু সময় লাগে। আশা করছি, এনটিআরসিএর পরবর্তী নিয়োগ থেকেই এটি চালু করা সম্ভব হবে।’

ওই কর্মশালায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোলেমান খান, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার, সংশ্লিষ্ট সব আঞ্চলিক পরিচালকসহ প্রায় ৫৬ জন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

বর্তমানে এমপিওভুক্ত উচ্চবিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৯ হাজার ১৬৪টি। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬ লাখ শিক্ষক ও কর্মচারী এমপিওভুক্ত। প্রায় ৪ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী এখনো এমপিওভুক্ত হননি।

জানা যায়, আগে মাউশির প্রধান কার্যালয় সরাসরি শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির কাজ করত। ২০১৫ সাল থেকে মাউশির ৯টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের মাধ্যমে এমপিওভুক্তির কাজ চূড়ান্ত হচ্ছে। বর্তমানে এমপিওভুক্তির জন্য এনটিআরসিএ-এর মাধ্যমে নিয়োগের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের মাধ্যমে অনলাইনে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করতে হয়। উপজেলা কার্যালয় যাচাই-বাছাই করে আবেদন পাঠায় জেলা শিক্ষা কার্যালয়ে। সেখানে আরেক দফা যাচাই শেষে আঞ্চলিক কার্যালয়ে পাঠানোর পর এমপিও চূড়ান্ত করা হয়। এসব কার্যালয়ে বিভিন্ন হয়রানির শিকার হন শিক্ষক-কর্মচারীরা। এমপিওভুক্তিতে দেরি হলে অনেককে বেতন ছাড়াই চাকরি করতে হয়। এ ছাড়া এমপিওভুক্তির জন্য ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগও রয়েছে।

২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ‘মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনেও এই ঘুষ-বাণিজ্যের বিষয়টি উঠে আসে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের সঙ্গে আর্থিক চুক্তির মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান এমপিওভুক্তির আবেদন পাঠান। শিক্ষক এমপিওভুক্তিতে নিয়মবহির্ভূতভাবে ৫ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়।

শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তি অটোমেশন করার উদ্যোগকে সরকারের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলে অভিহিত করে স্বাগত জানিয়েছেন নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার। তিনি বলেন, শিক্ষক এমপিওভুক্তিতে জেলা-উপজেলা-বিভাগীয় পর্যায়ে টাকা ছাড়া ফাইল নড়ে না। অনেক শিক্ষককে বাধ্য হয়ে অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকপ্রতি ৫০ হাজার থেকে শুরু করে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। অটোমেশনের হলে শিক্ষক-কর্মচারীরা এসব হয়রানি থেকে রেহাই পাবেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) আবদুন নূর মুহম্মদ আল ফিরোজ বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনই মন্তব্য করতে চাই না। বিষয়গুলো রেজল্যুশন আকারে বের হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলব।’


শেয়ার করুন