২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, বুধবার, ০৪:৩৯:০২ অপরাহ্ন
আলু ও আগাম সবজিতে পথে বসেছেন কৃষক, লোকসানে-ঋণে সর্বস্বান্ত
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০২-২০২৫
আলু ও আগাম সবজিতে পথে বসেছেন কৃষক, লোকসানে-ঋণে সর্বস্বান্ত

দেশের সব শ্রেণির মানুষের খাদ্যের জোগানদাতা কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম না পেয়ে দিন দিন নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন। ধান-পাট-গম-সবজিসহ নানা ধরনের ফল, ফসলের চাষ করে অধিকাংশ সময় উৎপাদন খরচই তুলতে পারছেন না। এ অবস্থায় বাড়ছে কোল্ডস্টোরেজের ভাড়া। বস্তাপ্রতি ২৫০ টাকা ভাড়া বেড়ে ৩০০ টাকা হচ্ছে। ফলে কৃষক প্রান্তিক থেকে আরও প্রান্তিক হয়ে পড়ছেন। দেহের মতোই জীর্ণ হয়ে পড়ছে তার বসতবাড়ি। দাদাল ফড়িয়া, পাইকার, সিন্ডিকেট এবং করপোরেট চক্রে পড়ে দিশেহারা কৃষক। মোটাতাজা হচ্ছে এসব মধ্যস্বত্বভোগী চক্র। দেশে কৃষিপণ্যের বাণিজ্যিকীকরণ ঘটছে। কিন্তু কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেনি। ফসল চাষ করে দাদন ও মহাজনী ঋণের বোঝায় খোয়াচ্ছেন জমি-জিরাত। উচ্চমূল্যে জমি চাষ, শ্রমিকের মজুরি, বীজ, সার, কীটনাশক কিনতে গিয়ে ঋণের জালে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাচ্ছে অসহায় কৃষক। এসব করে অনেকেই পথে বসেছেন। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে কৃষির উৎপাদন ব্যাপক বাড়লেও সুষ্ঠু বিপণন, পরিবহণ ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় জিম্মি হয়ে পড়ছেন চাষিরা। তারা ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না।


এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ইমদাদ উল্লাহ মিয়ান যুগান্তরকে বলেন, সরকার বিভিন্ন ফসলের ওপর নগদ সহায়তা বা প্রণোদনা হিসাবে বীজ, সারসহ কৃষি উপকরণ দিচ্ছে। আগামী দিনে ঢালাওভাবে প্রণোদনা দেওয়া হবে না। যে এলাকায় যে ফসল ভালো হয় ওই এলাকায় ওই ফসলে প্রণোদনা দেওয়া হবে। আবার কোনো ফসলের জাতীয় চাহিদা কত তা নিরূপণ করে বেশি উৎপাদনে নিরুৎসাহিত করা হবে। যে এলাকায় যে ফসল কম উৎপাদন হচ্ছে ওই এলাকায় ওই ফসল উৎপাদনে প্রণোদনা দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, কিছু ভ্রাম্যমাণ কোল্ডস্টোরেজ তৈরি করা হবে। একেবারে ফসলের মাঠ থেকে কৃষকরা স্টোরেজে ফসল রাখার সুযোগ পাবে। তখন আর এ ধরনের খারাপ পরিস্থিতিতে পড়তে হবে না।


সচিব বলেন, গত বছর হঠাৎ করে দেশে আলুর দাম প্রায় চারগুণ বেড়েছিল। অধিক লাভের আশায় এ বছর কৃষকরা আলু এবং পেঁয়াজ ফসল বেশি করেছেন। আবার কোল্ডস্টোরেজ সুবিধাও দেওয়ার মতো অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। ফলে কৃষকরা উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণের সুবিধা পাচ্ছে না। সরকার সীমিত সামর্থ্যরে মধ্যে চেষ্টা করছে। কিছু কোল্ডস্টোরেজ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। শুরুতে সরকার পাইলটিং করবে, পরে জাতীয়ভাবে কোল্ডস্টোরেজ স্থাপনের চেষ্টা করা হবে।


সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকা বা অন্য কোনো শহরে যে টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা কেজি, তা তৃণমূলের একজন কৃষক বিক্রি করছেন ৩-৪ টাকা কেজিতে। যে ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা, তা কৃষক বিক্রি করছেন ২-৩ টাকা করে। অর্থাৎ রাজধানীতে প্রায় ১০ গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে, কিন্তু কৃষক শরীরের ঘাম ঝরিয়ে, অর্থ ব্যয় করে উৎপাদন করে দিন শেষে লোকসান গুনে ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়ছেন। বাজারে নেওয়ার পরিবহণ ভাড়া না ওঠায় খেত থেকে বাঁধাকপি তুলে ফেলে দিচ্ছেন কিংবা গরুর খাবার হিসাবে ব্যবহার করছেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গোমরা গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদির খাঁচাভর্তি বেগুন সন্ধ্যাকুড়া সেতু থেকে মহারশি নদীতে ফেলে দিয়েছেন। দাম যখন অতিরিক্ত চড়া থাকে শহরের বাজারে, তখনো কৃষকরা তেমন কিছু পান না। রাজশাহীর এক কৃষক বলেন, দাম বাড়লে ভোক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কিন্তু কৃষক ফসলের দাম না পেয়ে লোকসানে-লোকসানে নিঃস্ব হলেও তার পক্ষে কথা বলার কেউ নেই। কৃষকের পাশে কেউ দাঁড়ায় না। শেরপুর, রাজশাহী, বগুড়া, চট্টগ্রাম, সিলেট, মুন্সীগঞ্জ ও যশোরের বাজার ঘুরে, কৃষক ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে।


শেয়ার করুন