চলতি বছরেও মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটিই কমেছে। গড় পাসের হার ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। গত বছর (২০২২ সাল) পাসের হার ছিল ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। ফলাফলে এবারও এগিয়ে মেয়েরা। সাধারণ গণিতে বিপর্যয়ের প্রভাবে কমেছে পাসের হার।
গতকাল শুক্রবার দেশের ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হয়। বেলা ১১টায় রাজধানীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফলের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল প্রকাশের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। সকাল সাড়ে ১০টায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অনলাইনে একযোগে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এবারই প্রথম সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ফল প্রকাশ করা হলো। তবে শিক্ষার্থীদের আনন্দে তা বাধা হয়নি। স্কুলে স্কুলে হয়েছে আনন্দ-উৎসব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এবার পাসের হার কমার মূল কারণ করোনার কারণে সৃষ্ট শিখন ঘাটতি। কারণ, এই শিক্ষার্থীরা অষ্টম শ্রেণিতে অটোপাস করেছে এবং নবম ও দশম শ্রেণিতে ক্লাস করতে পারেনি। এই শিখন ঘাটতি রোধে সরকারের যথাযথ উদ্যোগ না থাকায় এবার ফল খারাপ হয়েছে।
ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন। ২০২২ সালে পেয়েছিল ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন। ২০২১ সালে পাসের হার ছিল ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। করোনা পূর্ববর্তী স্বাভাবিক সময়ে অর্থাৎ ২০২০ সালে পাসের হার ছিল ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
শিক্ষাবিদেরা বলছেন, ২০২১ ও ২০২২ সালে পাসের হার বাড়ার মূল কারণ ছিল করোনার কারণে সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচিতে ও সময় কমিয়ে দুই ঘণ্টায় পরীক্ষা নেওয়া।
এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে সাধারণ গণিতে ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে। বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড এবং মাদ্রাসা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা গণিতে তুলনামূলক খারাপ ফল করেছে। এর মধ্যে ঢাকা বোর্ডের ৮০.৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থী গণিতে পাস করেছে। কুমিল্লা বোর্ডে ৮৯.৭০ শতাংশ, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৮৬.৫১ শতাংশ, সিলেট বোর্ডে ৮৮.০৭ শতাংশ, দিনাজপুর বোর্ডে ৮৫.৯১ শতাংশ শিক্ষার্থী গণিতে কৃতকার্য হয়েছে। মাদ্রাসা বোর্ডের গণিতে পাস করেছে ৮৩.৭৩ শতাংশ শিক্ষার্থী।
এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেয় ২০ লাখ ৪১ হাজার ৪৫০ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৬ লাখ ৪১ হাজার ১৪০ জন। অকৃতকার্য হয়েছে ৪ লাখ ৩১০ জন। ৪৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারেনি। গত বছর এর সংখ্যা ছিল ৫০। এবার শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২ হাজার ৩৫৪টি। গত বছর ছিল ২ হাজার ৯৭৫টি।
এবারও এগিয়ে মেয়েরা
গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় পাস ও জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে এবারও ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে। এবার মেয়েদের পাসের হার ৮১.৮৮ শতাংশ এবং ছেলেদের ৭৮.৮৭ শতাংশ। গত বছর ছেলেদের পাসের হার ছিল ৮৭.১৬ শতাংশ, মেয়েদের ছিল ৮৭.৭১ শতাংশ।
এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৮ হাজার ৬১৪ জন ছাত্রী। জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রের সংখ্যা ৮৪ হাজার ৯৬৪।
সেরা বরিশাল, তলানিতে সিলেট
এবার সবচেয়ে বেশি, ৯০.১৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে বরিশাল বোর্ডে। আর সবচেয়ে কম, ৭৬.০৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে সিলেট বোর্ডে। গত বছরও পাসের দিক থেকে বোর্ডগুলোর মধ্যে তলানিতে ছিল সিলেট। পাস করেছিল ৭৮.৮২ শতাংশ।
প্রতিবারের মতো এবারও জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে সব বোর্ডের মধ্যে শীর্ষে ঢাকা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। এই বোর্ডের ৪৬ হাজার ৩০৩ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
ফল পুনর্নিরীক্ষণ শুরু কাল
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল নিয়ে আপত্তি থাকলে শিক্ষার্থীরা আগামীকাল রোববার থেকে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করতে পারবে। আগামী ৪ আগস্ট পর্যন্ত এই আবেদন করা যাবে। গতকাল ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. আবুল বাশার স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।
কেবল টেলিটক প্রিপেইড মোবাইল ফোন থেকে এই আবেদন করা যাবে। আবেদন করতে মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে RSC <Space> বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর <Space> রোল নম্বর <Space> বিষয় কোড লিখে Send করতে হবে 16222 নম্বরে। ফিরতি এসএমএসে আবেদন বাবদ কত টাকা কেটে নেওয়া হবে, তা জানিয়ে একটি পিন দেওয়া হবে। এতে রাজি থাকলে মেসেজ অপশনে গিয়ে RSC <Space> Yes <Space> PIN <Space> Contact Number (যেকোনো অপারেটর) লিখে Send করতে হবে 16222 নম্বরে।
একই এসএমএসের মাধ্যমে একাধিক বিষয়ের জন্য আবেদন করা যাবে। সে ক্ষেত্রে কমা (,) দিয়ে বিষয় কোড আলাদা লিখতে হবে। যেমন ঢাকা বোর্ডের একজন শিক্ষার্থী বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ের জন্য টেলিটক প্রি-পেইড মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে লিখবে RSC <Space> Dha <Space> Roll Number <Space) 101, 102, 107, 108। ফল পুনর্নিরীক্ষণে প্রতিটি পত্রের জন্য ১২৫ টাকা করে কেটে নেওয়া হবে।