২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৮:০২:২৩ পূর্বাহ্ন
নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের কোন্দল নিরসন নিয়ে সংশয়
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৮-২০২৩
নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের কোন্দল নিরসন নিয়ে সংশয়

টানা সাড়ে ১৪ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে দলীয় নেতাদের একাংশ যেমন বৈষয়িক দিক দিয়ে লাভবান হয়েছেন, তেমনি তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সুবিধাভোগী নেতাদের বেড়েছে দূরত্ব। আবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতার সংখ্যাও বেড়েছে। বিভিন্ন আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নিজ নিজ প্রার্থীকে জয়ী করার চেষ্টা চালানোর পাশাপাশি দলীয় কমিটিতে প্রাধান্য বিস্তারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। সব নিয়ে জাতীয় নির্বাচনের আগে দলীয় কোন্দল আরও মাথাচাড়া দেওয়ার আশঙ্কা আছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা অবশ্য মনে করেন, এই কোন্দল দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করা পর্যন্ত থাকবে। তাঁদের আশা, প্রার্থী চূড়ান্ত হয়ে গেলে বিভেদ ভুলে সবাই তাঁর পক্ষে নামবেন।


আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী ও সম্পাদকমণ্ডলীর কয়েকজন সদস্য জানান, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় দলীয় নেতাদের মধ্যে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা বাড়ছে। তবে বাইরের কিছুটা চাপ থাকায় এখনো অনেকে নিজেদের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে ঘোষণা দিচ্ছেন না। পরিস্থিতি অনুকূলে এলে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের তৎপরতা বাড়বে। তাঁদের প্রতিযোগিতার কারণে কোথাও কোথাও সহিংসতাও হতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত সবাই দলীয় প্রতীক নৌকার পক্ষে এককাট্টা হবেন বলে ওই নেতারা আশাবাদী।


রাজনীতি-বিশ্লেষকেরা অবশ্য মনে করেন, দলীয় কোন্দল নিরসন খুব সহজ হবে না। এটা অনেকটাই নির্ভর করবে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কেমন প্রার্থী বাছাই করবেন, তার ওপর।


তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতারও প্রত্যাশা, দলের যেসব সংসদ সদস্য ‘জনবিচ্ছিন্ন’, তাঁরা যাতে আবারও দলীয় মনোনয়ন না পান, তেমন একটি বার্তা দেওয়া হবে কেন্দ্র থেকে। দলের বিশেষ বর্ধিত সভার এক সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক ডাকায় সেই প্রত্যাশা আরও জোরালো হয়েছে। আগামী শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে গণভবনে এই সভা হবে। দলের দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, ওই বৈঠকে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দলীয় কর্মসূচি চূড়ান্ত করা ছাড়াও নির্বাচন, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা হবে।


দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত রোববার গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের নেতা এবং জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বিশেষ বর্ধিত সভা হয়। সেখানে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪৩ জন নেতার বক্তব্য শোনেন। অনেক নেতাই দলীয় কোন্দলের কথা তুলে ধরেন।


এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তৃণমূল যে কথা বলেছে, সেটা সঠিক। পৃথিবীর কোন রাজনৈতিক দল আছে, যেখানে কোন্দল নেই? এসব কোন্দল নির্বাচন ঘিরে। প্রতিটি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ১০ জনের বেশি। কিন্তু সকলেই নেত্রীর কাছে বলেছেন, তিনি যাঁকে মনোনয়ন দেবেন, তাঁর পক্ষে কাজ করবেন। আমরা আশা করি, সকলেই দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন। যদি তা না করেন, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


দলীয় সূত্রমতে, বিশেষ বর্ধিত সভায় দলীয় প্রধানও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, নির্বাচনে যাঁকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে, তাঁর পক্ষেই সবাইকে কাজ করতে হবে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রতি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন গড়ে ১৩ জনের বেশি। তবে অল্প কয়েকটি আসন ছাড়া দলীয় প্রার্থীদের শেষ পর্যন্ত ‘বিদ্রোহের’ মুখোমুখি হতে হয়নি। দলটির নেতারা মনে করছেন, এবার আসনপ্রতি দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী গড়ে ২০ জনের বেশি হবে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মনোনয়ন ঘোষণার আগপর্যন্ত প্রতিযোগিতা থাকবে। কিন্তু মনোনয়ন ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ সব সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে।’


জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদও মনে করেন, এবারের নির্বাচন অনেকটা ভিন্ন রকমের হবে। এখন যে কোন্দল আছে, নির্বাচনকালে তা বহুলাংশে নিরসন হবে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার ধারণা, বিএনপি নির্বাচনে আসবে। আদর্শিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা দুটো ধারার মধ্যে, এটা সত্যিকারের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করতে ভূমিকা রাখবে।’


আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে তৃণমূলে একটা কোন্দল ছিল। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোনো কোন্দল নেই। আমাদের দলে বহু নেতা-কর্মী। প্রতিটি স্তরের নির্বাচনে একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে প্রার্থী হওয়ার প্রতিযোগিতা আছেই। এতে কিছুটা দ্বন্দ্ব হয়। তবে সেটা আস্তে আস্তে নিরসন হয়ে যাচ্ছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকলেই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে।’


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার মনে করেন, দলীয় প্রধানের দিক থেকে সতর্কতা আসার পরে মনে হয় না, নেতারা খুব একটা সাহসী হবেন দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরোধিতা করার। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মনোনয়নবঞ্চিতরা মনোনীত ব্যক্তির পক্ষে উৎসাহের সঙ্গে মাঠে নামবেন কি না, সেটাই হচ্ছে দলের জন্য চিন্তার বিষয়। এটা শুধু আওয়ামী লীগের জন্য নয়, সব বড় দলের জন্যই চিন্তার বিষয়। তবে এই চিন্তা অনেকটাই কমে যায় প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যদি সঠিক ব্যক্তিকে মনোনীত করা হয়।’


শেয়ার করুন