২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০৯:৫৩:৪৮ অপরাহ্ন
বিএনপি ও জামায়াতের দূরত্ব ঘোচাতে উদ্যোগ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০৮-২০২৩
বিএনপি ও জামায়াতের দূরত্ব ঘোচাতে উদ্যোগ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব ঘোচাতে চাইছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। নির্বাচন ও রাজপথে আন্দোলন মাথায় রেখে দুই দলই সম্পর্কোন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা গেছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ারও এ বিষয়ে মত আছে। তবে এ নিয়ে এখনই মুখ খুলতে চান না দল দুটির নেতারা।


সূত্র বলেছে, এক দফার আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে থাকা সমমনা দলগুলো অভিন্ন কর্মসূচিতে রাজপথে জামায়াতের সক্রিয় অংশগ্রহণ চায়। অন্যদিকে জামায়াতের নেতারাও একই রকম কর্মসূচির জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের চাপ দিচ্ছেন।


বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সখ্য বেশ পুরোনো। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে জোট বেঁধেছিল। ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারেও অংশ নিয়েছিল দলটি। জামায়াতের দুই শীর্ষ নেতা ওই সরকারের মন্ত্রীও ছিলেন। তবে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের কয়েকজন নেতার ফাঁসি কার্যকরের পর দল দুটির মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। সেই দূরত্ব বিভিন্ন কারণে পরে আরও বেড়েছে। জামায়াতও রাজপথে ছিল নীরব।


দীর্ঘদিন নীরব থাকার পর চলতি বছরের ১০ জুন ঢাকায় সমাবেশ করার মধ্য দিয়ে আবারও আলোচনায় আসে জামায়াত। এর পর থেকে দলটিকে নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার পর সরকারের সঙ্গে জামায়াতের সখ্য বেড়েছে, এমন আলোচনাও আছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা প্রকাশ্যে পরস্পরের বিরুদ্ধে উষ্মাও প্রকাশ করেছেন। এতে দুই দলের মধ্যে দূরত্ব আরও বাড়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। তবে কয়েক দিন আগে তারিখ পিছিয়েও ঢাকায় সমাবেশ করার অনুমতি পায়নি জামায়াত।


বিএনপি ও জামায়াতের একাধিক সূত্র বলেছে, বিরাজমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের স্বার্থেই সম্পর্কোন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে দল দুটি। দুই দলের মধ্যে বোঝাপড়া পুরোনো। বিগত দিনে কিছু ঘটনায় দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এই দূরত্ব সৃষ্টির সুযোগ অন্য কোনো পক্ষ নিক, তা জামায়াতের নেতা-কর্মীরা চান না। এ জন্য দলটির তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের চাপে কেন্দ্র দূরত্ব ঘোচাতে উদ্যোগী হয়েছে।


জামায়াতের জেলা ও মহানগর নেতারা জানান, তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, আওয়ামী লীগের কারণে দল নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই আওয়ামী লীগ জামায়াতকে ব্যবহার করে কোনোভাবে লাভবান হোক, তা তাঁরা চান না। এ অবস্থায় মান-অভিমান ভুলে বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব ঘুচিয়ে জামায়াতকে সক্রিয়ভাবে রাজপথে দেখতে চান তাঁরা।


এদিকে বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, জামায়াতের বিষয়ে বিএনপির একটি অংশের অনীহা থাকলেও বর্তমান বাস্তবতায় তাদের অভাব বোধ করছেন দলের অনেকে। তাঁরা বলছেন, বিএনপির নেতৃত্বে এক দফার আন্দোলন একটা পর্যায়ে এসেছে। এখান থেকে এই আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে রাজপথে জামায়াতকে দরকার। গত ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ এবং ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি পালনের পর ১ আগস্ট সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সে সময় খালেদা জিয়া জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব ঘোচাতে বলেছিলেন। চেয়ারপারসনের এই মনোভাব জানার পর তিনি এ বিষয়ে উদ্যোগ নেন। দুই দলের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। সম্পর্কোন্নয়নের পাশাপাশি আন্দোলন নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে দল দুটির মধ্যে। সপ্তাহখানেক আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন প্রভাবশালী সদস্য ও জামায়াতের এক শীর্ষ নেতা এসব বিষয়ে একান্তে আলাপও করেছেন।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং বিলুপ্ত ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে বিভিন্ন দলের আলোচনা হয়েছে, হচ্ছে। যে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, হচ্ছে বা হবে, সেই তালিকায় জামায়াত নেই।’ দলের অন্য কোনো নেতার সঙ্গে জামায়াতের কারও আলোচনা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তাঁর জানা নেই।


দুই পক্ষের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়ন প্রক্রিয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যান জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরও। তবে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে করণীয় নির্ধারণে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চলছে। সব দলকে একত্র করে অভিন্ন কর্মসূচি দেওয়া যায় কি না, সে বিষয়েও আলোচনা চলছে।


শেয়ার করুন