২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ১১:২৭:১২ অপরাহ্ন
ডিমের দাম কেন বাড়ল, কী বলছেন পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৮-২০২৩
ডিমের দাম কেন বাড়ল, কী বলছেন পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা

দেশের বাজারে দৈনিক বাড়ছে ডিমের দাম। গত এক সপ্তাহে প্রতি হালিতে পাঁচ থেকে সাত টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। উৎপাদন ও সরবরাহ সংকটের জন্য করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করছেন প্রান্তিক খামারিরা। তাদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) দাবি, ডিম ও মুরগির মোট উৎপাদনের ৮০ শতাংশ জোগান দেন প্রান্তিক খামারিরা। কিন্তু ন্যায্য বাজারমূল্য না পেয়ে অনেক খামারি ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। এ সুযোগে করপোরেট প্রতিষ্ঠান এসএমএস বা খুদেবার্তার মাধ্যমে ডিম ও মুরগির দাম বাড়াচ্ছে।


বিপিএ সভাপতি সুমন হাওলাদার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব দাবি করেন। এতে বলা হয়, বাজার করপোরেটদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় তারা এসএমএস দিয়ে ডিম ও মুরগির দাম বাড়াতে চাইলে বাড়ে, কমাতে চাইলে কমে। অভিযোগ করে বলা হয়, ব্যবসায় টিকে থাকতে দেশের প্রায় অর্ধকোটি প্রান্তিক উদ্যোক্তা করপোরেটদের দাদনে জিম্মি হয়ে পড়েছেন।


এর আগে, বছরের শুরুর দিকে ব্রয়লার মুরগির দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। সে সময় সব পক্ষকে নিয়ে সভা করেছিল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সেখানে প্রান্তিক খামারিদের প্রতিনিধিরা এসএমএসের প্রসঙ্গে অভিযোগ তুললে করপোরেটের পক্ষ এর সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর দেয়নি। পরবর্তী সময়ে অধিদপ্তরের মাহাপরিচালক বাজার ব্যবস্থাপনায় এসএমএস পদ্ধতি বন্ধের জন্য কড়া নির্দেশনা দিলেও এখনো তা বন্ধ হয়নি বলে দাবি বিপিএর।


এ ছাড়া প্রতিদিনের বাজার দর নিয়ে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিআিইএ) এবং বাংলাদেশ পোলট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ (বিপিকেআরজেপি) নামে দুটি সংগঠনের পক্ষ থেকেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডিম ও মুরগির দাম নিয়ে প্রচারণা চলে, যা বাজারে প্রভাব তৈরি করছে।


বর্তমান বাজার পরিস্থিতির বিষয়ে বিপিএ সভাপতি বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, সরকারি তদারকি না থাকায় পোলট্রি শিল্পে করপোরেটদের আধিপত্য বিস্তারের খেসারত দিচ্ছে জনগণ।


সংগঠনটির তথ্যমতে, বর্তমানে একটি ডিম উৎপদনে প্রান্তিক খামারিদের খরচ পড়ে ১০ টাকা ৮৭ পয়সা থেকে ১১ টাকা। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনে খরচ হয় ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা। অন্যদিকে করপোরেট পর্যায়ে ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকার কম, ব্রয়লারের ১১৯ থেকে ১৩০ টাকা। এতে বাজারে টিকে থাকতে খামারিদের প্রতি কেজি ব্রয়লার ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কমে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে ডিমের লাভ বা লোকসানের বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি বিপিএ।


সংগঠনটি মনে করে, সরকার চাইলে পোলট্রি ফিডের (খাদ্য) উৎপাদন খরচ যাচাই করে দাম কমানো সম্ভব। বিপিএ বলছে, ২০২১ সালে প্রতি কেজি ভুট্টার দাম ছিল ২৮ টাকা, যা ৫০ কেজির বস্তা হিসাবে ছিল ২ হাজার ৫০০ টাকা। সর্বশেষ ২০২৩ সালে প্রতি কেজি ভুট্টার দাম ছিল ৪১ টাকা আর বস্তার দাম ৩ হাজার ৭৪০ টাকা। যদিও গত মার্চে ভুট্টার দাম কমে ২৪ থেকে ২৬ টাকায় এলেও পোলট্রি খাদ্যের দাম কমছে কেজিতে মাত্র ৩ টাকা। অন্যদিকে, প্রতি পিস বাচ্চা প্রান্তিক খামারিদের কিনতে হচ্ছে সর্বোচ্চ ৮০ টাকা দিয়ে।


একই সময়ে করপোরেট চুক্তিভিত্তিক খামার প্রতি বস্তা খাদ্য পাচ্ছে ২ হাজার ৬০০ টাকায় এবং প্রতি পিস বাচ্চা ৩৫ টাকায়। অসম প্রতিযোগিতার কারণে একদিকে হারিয়ে যাচ্ছেন প্রান্তিক খামারিরা, অন্যদিকে করপোরেট গ্রুপ বড় হচ্ছে। এর থেকে উত্তরণ ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে করপোরেট কোম্পানিকে কন্ট্রাক ফার্মিং ও ডিম-মুরগি উৎপাদন বন্ধ করে শতভাগ খাদ্য ও বাচ্চা উৎপাদন করার দাবি জানিয়েছে বিপিএ। পাশাপাশি প্রান্তিক খামারিরা শতভাগ ডিম-মুরগি উৎপাদন করলে বাজার সিন্ডিকেট হবে না বলেও দাবি সংগঠনটির।

শেয়ার করুন