তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত রায় নিয়ে সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, সংবিধান দেশের জনগণের কল্যাণের লক্ষ্যে প্রণীত। গান পাউডার দিয়ে ১১ জন পুড়িয়ে মেরেছে, তখন কোথায় ছিল সংবিধান?
আজ বুধবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির স্বাধীনতা হলে গণঅধিকার পরিষদ আয়োজিত ‘নাগরিকদের সাংবিধানিক ও মানবাধিকার সুরক্ষা’-শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফখরুল এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার বলছে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। কিন্তু যে রায়, সেই রায়কে বদলে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। যখন এই দাবিতে ১৭৩ দিন হরতাল দিয়েছে। গান পাউডার দিয়ে ১১ জন পুড়িয়ে মেরেছে, তখন কোথায় ছিল সংবিধান? এই সংবিধান নাকি পরিবর্তন করা যাবে না। কিন্তু সংবিধান তো মানুষের জন্য।’
বর্তমান সরকার পুরো সমাজ ব্যবস্থাকে নষ্ট করে ফেলেছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘আজকে এমন কিছু নেই, যেখানে আওয়ামী লীগ হাত দেয়নি। মন্ত্রীর বিরুদ্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দখলের অভিযোগ, ব্যাংক খালি ও লুটপাট করে জাতিকে পুরোপুরিভাবে দুর্নীতিপরায়ণ জাতি হিসেবে পরিণত করেছে। সরকারের সব কর্মকাণ্ডই দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে। আজ এক ব্যক্তির কারণে সংবিধান কাটা–ছেঁড়া করা হয়েছে।’
ক্ষমতাসীনদের কারণে কিশোর-তরুণদের মধ্যে রাজনীতি ও রাজনীতিবিদ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কয়েক দিন আগে এক স্কুলছাত্রের কাছে জানতে চাইলাম তুমি বড় হয়ে কী হবে? সে বলল, রাজনীতিবিদ হতে চাই। উত্তর শুনে অবাক হয়ে বললাম কেন? বাচ্চাটি বলল, রাজনীতিবিদ হলে অনেক টাকার মালিক হওয়া যায়। আসলে সেই বাচ্চাটির কোনো দোষ নেই। সে দেখেছে ক্ষমতাসীনেরা কীভাবে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছে। এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। তরুণদের রাজনীতি সচেতন হওয়ার মাধ্যমে এই অবস্থার পরিবর্তন আসবে।’
এ সময় আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাকে নিয়ে বলা হয়েছে আমার মতো নাকি বড় মিথ্যাবাদী নেই। আমি নাম ধরে কিছু বলতে চাই না। এটি শিষ্টাচার নয়। অবশ্য আওয়ামী লীগ শিষ্টাচারের দল নয়। এরা সন্ত্রাসী দল। এদের সবাই উগ্র। আজ আওয়ামী লীগ গালিতে পরিণত হয়েছে।’
সভায় সভাপতির বক্তব্যে গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘আজকে সংবিধানের দোহাই দিয়ে ভোটাধিকারসহ নানান অধিকার হরণ করা হচ্ছে। অথচ এখন পর্যন্ত ১৭ বার সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে।’
নুর আরও বলেন, ‘দেশের প্রধান বিরোধী দলের বক্তব্য গণমাধ্যমগুলো প্রকাশ করতে পারছে না। হাইকোর্ট ক্যাঙারু কোর্টে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আগামীতে যে থানায় অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হবে সেই থানা ঘেরাও করতে হবে।’
গণঅধিকার পরিষদের (একাংশের) সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহীম, এবি পার্টির আহ্বায়ক এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী, সমমনা জোটের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় পার্টির একাংশের মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, এনডিপি চেয়ারম্যান ক্বারী আবু তাহের, জাগপার সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম, গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য ফাতিমা তাসনিম, আবু হানিফ প্রমুখ।