নেপাল থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য শীঘ্রই ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এই চুক্তিকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রতীক হিসেবে দেখছেন ভারতের পররাষ্ট্র নীতি বিশ্লেষক ড. মহীপ। তার মতে ভারত, বাংলাদেশ এবং নেপালের মধ্যে জ্বালানি শক্তি ভাগাভাগি চুক্তি দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের দৃশ্যপট বদলে দেবে।
ভারতীয় ট্রান্সমিশন লাইন ব্যবহার করে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনার বিষয়ে ইতোমধ্যেই নীতিগতভাবে সমঝোতা হয়েছে। চুক্তি সম্পন্ন হলে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারতীয় গ্রিডের মাধ্যমে ট্রানজিট করে বাংলাদেশে ঢুকবে। সম্প্রতি একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানায় ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস।
ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য নীতিগতভাবে সমঝোতা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নেপাল ইলেক্ট্রিসিটি অথরিটির (এনইএ) কর্মকর্তারা। এছাড়া এই বিষয়ে শীঘ্রই তিনটি দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলেও জানিয়েছেন তারা।
এনইএ এর মুখপাত্র সুরেশ ভট্টরাই জানিয়েছেন, নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি করার জন্য তিনটি দেশের মধ্যে ইতোমধ্যেই মৌখিক বোঝাপড়া সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, প্রথম ধাপে নেপাল থেকে বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানির বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। খুব শীঘ্রই এই বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি হবে।
এনইএ এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রবাল অধিকারী বলেছেন, নেপাল এবং বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই পাওয়ার পারচেজ ডকুমেন্টে সম্মত হয়েছে। কিন্তু উভয় দেশের মধ্যে শুল্ক এবং বাণিজ্য মার্জিন এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তিনি আরও বলেন, যদিও এই তিনটি দেশের (বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল) মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি এখনো স্বাক্ষরিত হয়নি, তারপরও পিপিএ এবং অন্যান্য শর্তাবলীর বিষয়ে ইমেলের মাধ্যমে সম্মত হয়েছে তিন দেশ।
বর্ষা মৌসুমে অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে নেপাল। দেশটির মোট বিদ্যুতের ৯৭ শতাংশ উৎপাদিত হয় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে। এই অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করবে দেশটি।
বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস বলছে, চুক্তি সংক্রান্ত ঝুলে থাকা কিছু বিষয় শীঘ্রই চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদে নেপাল থেকে ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার পরিকল্পনাও করছে বাংলাদেশ।
ভারতের পররাষ্ট্র নীতি বিশ্লেষক ড. মহীপ বলেন, ত্রিপক্ষীয় চুক্তিটি আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুৎ সঞ্চালনের যুগের সূচনা করবে। এটি নিরবিচ্ছিন্ন উপায়ে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে জ্বালানি নিরাপত্তা জোরদার করবে। সকলের পারস্পরিক সুবিধার জন্য প্রতিবেশীদের মধ্যে এটি সহযোগিতার প্রমাণ। তিনি বলেন, বিশ্ব যখন শক্তির নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, তখন এই অংশীদারিত্ব আশার আলো এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রতীক হবে।