২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৮:২৩:৫৭ অপরাহ্ন
সর্বজনীন পেনশনে আগ্রহ বেশি তরুণদের
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৮-২০২৩
সর্বজনীন পেনশনে আগ্রহ বেশি তরুণদের

সর্বজনীন পেনশনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত তরুণ-যুবকরাই সবেচেয়ে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন। এদের বেশির ভাগের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। ঘোষিত চারটি স্কিমের মধ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের জন্য চালু ‘প্রগতি’ স্কিমে সবচেয়ে বেশি গ্রাহক পেনশন সুবিধা পেতে নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

এ পর্যন্ত পেনশন ফান্ডে জমা হয়েছে চার কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়া বাকি তিনটি প্রবাস, সুরক্ষা এবং সমতা স্কিমেও সাড়া পড়ছে। তবে প্রবাসীদের স্কিমে আনতে বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এ ছাড়া অতি দরিদ্র গোষ্ঠীর জন্য চালু সমতা স্কিমে সরকারি অর্থের অপচয় রোধ এবং এ তহবিলের অপব্যবহার রোধে প্রার্থীদের আবেদনগুলো সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করবে অর্থ বিভাগ। পেনশন তহবিলের টাকা সঠিক বিনিয়োগে একটি নীতিমালা তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।


বয়সের দিক থেকে অপেক্ষাকৃত তরুণ-যুবকরাই সর্বজনীন পেনশন স্কিমে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন। এর মধ্যে ৩১ থেকে ৪০ বছরের লোকজন বেশি। এই স্কিমে অন্যান্য বিভাগের তুলনায় ঢাকা বিভাগের লোকজন বেশি নিবন্ধন করেছেন। প্রগতি স্কিমের আওতায় গ্রাহকদের কাছ থেকে এ পর্যন্ত তিন কোটি জমা হয়েছে পেনশন ফান্ডে। আর এই স্কিম গ্রহণের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।


এখন পর্যন্ত পেনশন স্কিম নেওয়া গ্রাহকদের মধ্যে ৫৩ শতাংশই প্রগতি স্কিম নিয়েছে। স্কিম গ্রহণের হার বয়সের দিক থেকে এরপরে রয়েছেন ৪১ থেকে ৫০ বছর এবং ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা। তাদের সংখ্যা যথাক্রমে ১ হাজার ৮৩৭ এবং ১ হাজার ১৯৮। এ ছাড়া, ৬১ বছরের বেশি বয়সী ২৫ জন এবং ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সী ৭৬ জন পেনশন স্কিমের জন্য নথিভুক্ত হয়েছেন।
অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরতদের জন্য তৈরি সুরক্ষা স্কিম নিয়েছেন ১ হাজার ৮২৮ জন। এ ছাড়া, দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য সমতা স্কিম এবং বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানরত বাংলাদেশীদের জন্য প্রবাসী স্কিম নিয়েছেন যথাক্রমে ৮৭৫ ও ১৪৮ জন।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২১ আগস্ট পর্যন্ত এই স্কিমে সবচেয়ে বেশি নিবন্ধন করেছে ঢাকা বিভাগে। এই বিভাগে নিবন্ধন করেছেন ১ হাজার ৮৩৯ জন। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে চট্টগ্রাম বিভাগ। সেখানে নিবন্ধন করেছেন ১ হাজার ৬৫৪ জন। এ ছাড়া খুলনায় ৭৩১, রাজশাহীতে ৫৪৪, রংপুরে ৩৯০, বরিশালে ৩৮৮, ময়মনসিংহে ৩৫২ এবং সিলেটে ২০৫ জন। এ ছাড়া এ পর্যন্ত সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিতে প্রায় ৬০ হাজার জন আবেদন করেছেন।

অর্থ বিভাগের  সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রবাসীদের মধ্যেও সর্বজনীন পেনশন স্কিম ব্যাপক সাড়া ফেলছে। প্রায় ২৩০০ প্রবাসী ইতোমধ্যে চাঁদা পরিশোধ করেছেন। অনেক প্রবাসীর ডুয়েল কারেন্সি (ডলার-টাকা) ইন্টারন্যাশনাল কার্ড না থাকায় তাদের সোনালী ব্যাংকের একাউন্টে চাঁদা দিতে পারছেন না।

এ সমস্যা সমাধান করতে সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিং করে নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা। প্রবাসীদের সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভূক্ত হতে যে ডুয়েল কারেন্সি কার্ড ব্যবহার করতে হবে, এ সম্পর্কে ওয়েবসাইটে ঘোষণা দিতে সোনালী ব্যাংককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন  জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য  মো. গোলাম মোস্তফা। ওই সময় পেনশন ফান্ডের টাকা জমা রাখা এবং কিভাবে এই টাকা বিনিয়োগ কিংবা ব্যবহার হতে পারে সে বিষয়েও প্রাথমিক আলাপ-আলোচনা করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন,  সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। তবে পেনশন তহবিলের টাকা কোথায় বিনিয়োগ করা হবে সে বিষয়ে একটি আলাদা স্বয়ংসম্পূর্ণ বিধি বা নীতিমালা তৈরি করা হবে। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে, এই তহবিল সরকারি বন্ড বা ট্রেজারি বিলে বিনিয়োগের কথা রয়েছে। যেসব বিনিয়োগে ঝুঁকি কম সেদিকেই যাব। যদি ফান্ড আরও বড় হয় তা হলে উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হতে পারে। এটা সময়ের পরিক্রমায় হবে। এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট বিধিমালা তৈরি হচ্ছে, সেই অনুযায়ী সব হবে।

প্রবাস ও সমতা স্কিমে জোর দেওয়া হবে ॥ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের জন্য প্রগতি স্কিমে ব্যাপক সাড়া পড়লেও এখন প্রবাস ও সমতা স্কিমে সেই রকমভাবে হচ্ছে না। অথচ প্রবাসীদের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া গেলে  বিদেশী মুদ্রা বা ডলারের সরবরাহ বাড়ত। অন্যদিকে সমতা স্কিমে দরিদ্রদের আকর্ষণ করা গেলে সামাজিক নিরাপত্তা বলয় আরও শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ তৈরি হতো বলে মনে করা হচ্ছে। এ কারণে প্রবাসীদের পেনশন স্কিমে নিয়ে আসতে বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হবে। সেখানে প্রচার বাড়ানোর পাশাপাশি রোড শোর মতো কর্মসূচি পালন করা হতে পারে।

নতুন যারা বিদেশে যাবেন তাদের এ ধরনের পেনশন কর্মসূচিতে নিয়ে আসার ব্যাপারে আগাম উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে। এ ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কাজ করবে। এ ছাড়া সমতা স্কিমে দরিদ্রদের নিয়ে আসার ব্যাপারে সরকারি উদ্যোগ থাকবে। বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় যেসব গরিব মানুষ রয়েছেন তাদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করে এ কর্মসূচিতে নিয়ে আসা হবে।

অতি দরিদ্র হিসেবে ‘সমতা’ স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য যারা নিবন্ধন করবেন, তাদের তথ্য যাচাই করে তবেই অন্তর্ভুক্ত করবে সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষ। এই স্কিমে অন্তর্ভুক্তদের চাঁদার অর্ধেক বা ৫০০ টাকা সরকার থেকে পরিশোধ করা হবে।

পেনশন ফান্ড ব্যবহারে নীতিমালা হচ্ছে ॥ সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে পেনশন ফান্ড ব্যবহার করা হবে। এ লক্ষ্যে একটি নীতিমালা তৈরি করছে অর্থবিভাগ। শীঘ্রই এ ধরনের একটি নীতিমালা তৈরি করে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করবে সরকার। এতে করে গ্রাহকদের আস্থা আরও বাড়বে।

পেনশন ফান্ডের টাকা কোথায় কিভাবে ব্যবহার হবে এ বিষয়ে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে যারা স্কিমে ঢুকতে চান তাদেরও আগ্রহ রয়েছে। ব্যাংকগুলোর দেউলিয়া হয়ে পড়া, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি এবং বিমা এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ নানা সময়ে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এ ছাড়া সরকারি পেনশন পেতে নানা ধরনের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ ধরনের নানা সমালোচনাও রয়েছে দেশে।

শেয়ার করুন